আনন্দলোকে তারার মেলা

মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল দেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের গাওয়া ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গানের সঙ্গে নৃত্যনন্দনের পরিবেশনা। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠান হয় l হাসান রাজা
মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল দেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের গাওয়া ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গানের সঙ্গে নৃত্যনন্দনের পরিবেশনা। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠান হয় l হাসান রাজা

ছুটির দিনের সন্ধ্যায় প্রায় তিন ঘণ্টার আনন্দলোকের যাত্রা শুরু হয়েছিল কবিগুরুকে স্মরণ করেই। গতকাল শুক্রবার ছিল তাঁর জন্মদিন। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৪ অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল দেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের গাওয়া ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গানের সঙ্গে নৃত্য দিয়ে। অনুষ্ঠানটি উৎসর্গও করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান নিবেদন করে। তারপর গান, নাচ, অভিনয় আর ফাঁকে ফাঁকে পুরস্কার বিতরণীর মেলবন্ধনের এক জমকালো আনন্দ আয়োজন।


এবার ১৭ বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার বিতরণীর এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের এই অনুষ্ঠান পরিণত হয়েছিল তারার মেলায়। বিনোদন ও সংস্কৃতিজগতের প্রবীণ-নবীন তারকাদের বিপুল উপস্থিতি আয়োজনকে করে তুলেছিল দ্যুতিময়। অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়েছিল সন্ধ্যা ছয়টায়। তবে তারকা ও তাঁদের অনুরাগী দর্শকেরা আসতে শুরু করেছিলেন সাড়ে চারটা থেকে। অনুষ্ঠানের সূচনার আগেই মিলনায়তন পরিপূর্ণ। এবারই প্রথম অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় মাছরাঙা টেলিভিশনে।
১৭ বছরে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারটি দেশের বিনোদন ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একটি প্রধান আয়োজনে পরিণত হয়েছে। কেবল সারা দেশের সাধারণ শ্রোতা-দর্শকই নন, অনুষ্ঠানটির জন্য বছরজুড়ে অধীর অপেক্ষায় থাকেন যাঁদের নিয়ে এই আয়োজন, সেই তারকারাও। সে কথা তাঁরা বরাবরের মতো এবারও বললেন তাঁদের প্রতিক্রিয়ায়।
কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই ‘মঙ্গলালোকে’ গান ও নৃত্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে গানে অংশ নিয়েছেন পাপিয়া সারোয়ার, চন্দনা মজুমদার, লিলি ইসলাম, অদিতি মহসিন, শারমীন সাথী ইসলাম, তপন মাহমুদ, সাদি মহম্মদ, কিরণ চন্দ্র রায়, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, বুলবুল ইসলাম ও খায়রুল আনাম শাকিল। শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যনন্দনের শিল্পীরা।
কবিগুরুর জন্মদিনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক মঞ্চে আহ্বান জানান সম্পাদক মতিউর রহমানকে। রবীন্দ্রনাথের একটি পত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে মতিউর রহমান বলেন, কবিগুরু একটি নিরপেক্ষ, ভালো সংবাদপত্র প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছিলেন। প্রথম আলো রবীন্দ্রনাথের সেই আকাঙ্ক্ষার কথা মনে রেখেছে। পত্রিকার নামটিও নেওয়া হয়েছে কবিগুরুর গানের চরণ থেকে। যাত্রা শুরু থেকেই প্রথম আলো দলনিরপেক্ষ, স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা করে আসছে। সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
মতিউর রহমানের আহ্বানে মঞ্চে আসেন স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক অঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের শিল্পীরা যে গভীর নিষ্ঠা, শ্রম ও কষ্ট সহ্য করে কাজ করে চলেছেন, তাঁদের স্বীকৃতি ও প্রেরণা দিতেই এ আয়োজন। যাঁরা পুরস্কার পান এবং যাঁরা পান না, তাঁদের সবার অবদানকেই এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা সম্মান জানাই।’ তিনি জানান, এবার এই আয়োজনে নবীন শিল্পীদের পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই আয়োজন আরও বিস্তৃত হবে।
সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বের পর আজীবন সম্মাননা। বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ফাহ্মিদা খাতুনকে দেওয়া হয় ২০১৫ সালের আজীবন সম্মাননা।
এ পর্বের শেষে মঞ্চে ক্ষণিকের অন্ধকার। নেপথ্যের এলইডি পর্দায় ভেসে উঠল গত বছরের অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সাজু খাদেমের ছবি। তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। বারাক ওবামা, ভ্লাদিমির পুতিন, মার্ক জাকারবার্গসহ বিশ্বখ্যাতরা তাঁর জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বাংলা ভাষায়। অতঃপর দেখা গেল মঞ্চে গড়িয়ে এল একটি ড্রাম। তার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন সাজু খাদেম। দর্শকদের তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে তিনি বক্তব্য পেশ করলেন, তার সারমর্ম হলো বিশ্বনেতাদের করুণ আকুতি শুনে তিনি নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেননি। অনুষ্ঠানে চলে এসেছেন ট্রাম সার্ভিসের বদলে ‘ড্রাম সার্ভিস’-এ। মঞ্চে এলেন আরও দুই উপস্থাপক তিশা ও মোশাররফ করিম। তাঁদের মজার মজার কথোপকথনের ভেতর দিয়েই শুরু হলো বহুল কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার বিতরণ পর্ব।
এবার আজীবন, তারকা জরিপ, নবীন ও সমালোচক মিলিয়ে মোট ১৮টি পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কার বিতরণের মাঝে মাঝে ছিল বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা। সিনেমার গান ‘তুমি ছুঁয়ে দিলে মন’-এর সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন শুভ, মম, তাহসান ও মেহজাবীন।
সামনেই মা দিবস। মাকে স্মরণ করে জেমস গাইলেন ‘কোথায় আছ কেমন আছ মা’। ক্রিকেট নিয়ে মেতে আছে দেশ। কাজেই এমন জমকালো আয়োজনে ক্রিকেটাররা থাকবেন না, তা হয় কী করে। মঞ্চে এলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা আর তাসকিন আহমেদ। বিশ্বকাপের এক ম্যাচে তাঁদের বুকে বুক মিলিয়ে উদ্যাপনের বিখ্যাত মুহূর্তটি তাঁরা মঞ্চে ফিরিয়ে আনলেন দর্শকদের অনুরোধে।
সাজু খাদেম মাঝে মাঝেই আসছিলেন মঞ্চে বিচিত্র বেশভূষায়। তিনি তাঁকে ‘যাবজ্জীবন ও নবজাতক’ সম্মাননা দেওয়ারও দাবি তোলেন। এরপর আবার পুরস্কার দেওয়ার পালা। এল একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় বাকের ভাইয়ের প্রসঙ্গ। বাকের ভাইয়ের সাজে নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের নিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকের ছোট্ট নাটিকা। তাতে উঠে এল সমকালীন নানা ঘটনাপ্রবাহ। এ পর্বে অংশ নেন ইন্তেখাব দিনার, চাঁদনী, শামীমা জামান, জয় রাজসহ অনেকে।
এরপর ছিল ‘তুমি যে আমার কবিতা’, ‘তুমি আমার জীবন’, ‘এখানে দুজনে নিরজনে’ গানের সঙ্গে তিনটি নৃত্য। এতে অংশ নেন পিয়া, সায়মন, মিলন, মাহি, ইমন ও নিপুণ। পরে সাজু খাদেমের একটি রিমিক্স গান।
‘বিশ্ববীণারবে বিশ্বজন মোহিছে’ গানের সঙ্গে সামিনা হোসেন প্রেমা, নাদিয়া, নিশা ও নৃত্যদল ভাবনার শিল্পীদের নৃত্য দিয়ে শেষ হয় দর্শকনন্দিত এ আয়োজন।