দর্শকমন ছুঁয়েছে বেহুলা-লখিন্দর

আনন্দ অপেরার বেহুলা-লখিন্দর পালার দৃশ্য
আনন্দ অপেরার বেহুলা-লখিন্দর পালার দৃশ্য

কারও কারও ধারণা, যাত্রা মানেই শীতের উৎসব। যাত্রা মানেই অশ্লীল কিছু। অহেতুক নাচ-গান। এই ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে গ্রামীণ যাত্রার আসরে পরিবেশিত বেহুলা-লখিন্দর। যাত্রা যে আমাদের সংস্কৃতির আদি অংশ, যাত্রা সাধারণ মানুষের অন্তরের কথা বলে, যাত্রা দেখে সাধারণ মানুষ আনন্দে মোহিত হয়, হাসে, কাঁদে, বাঁচার অনুপ্রেরণা খুঁজে পায়—এ সত্যটি আবারও প্রমাণিত হলো। ২৫ মে আনন্দ অপেরা প্রযোজিত বেহুলা-লখিন্দর পালাটি উৎসবমুখর পরিবেশে আসরস্থ হলো যশোরের লোখাইডাঙ্গায়। বৃষ্টি এবং প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও দূরদূরান্ত থেকে নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দল বেঁধে যাত্রা দেখতে আসেন। যে রাতে আনন্দের বেহুলা-লখিন্দর মঞ্চস্থ হয়, তখন মুষলধারে কয়েক দফা বৃষ্টি হয়। কিন্তু কয়েক হাজার দর্শক এতটুকু নড়েননি, বরং বিপুল উৎসাহে যাত্রা অনুষ্ঠান দেখেছেন। 
পালার কাহিনিটি ছিল এমন—‘চম্পকনগর রাজ্যের রাজা চাঁদ সওদাগর ও রানি সনেকা দেবীর পুত্র লখিন্দরের সঙ্গে অনিন্দ্য সুন্দরী বেহুলার বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু সর্পদেবী মনসা রাজার সঙ্গে পূর্বশত্রুতার কারণে কালনাগকে নির্দেশ দেন লখিন্দরকে বাসরঘরে দংশন করতে। লোহার বাসর বানিয়েও শেষরক্ষা হয় না। নাগ লখিন্দরকে দংশন করলে পতিব্রতা বেহুলা মৃত স্বামীকে নিয়ে দেবপুরীতে পৌঁছান। শেষ পর্যন্ত দেবতাদের তুষ্ট করে ফিরিয়ে আনেন লখিন্দরের প্রাণ। দর্শকেরা এ পালা দেখে কখনো হেসেছেন, আবার কখনো কেঁদেছেন। উদ্বেলিত হয়ে মুহুর্মুহু করতালি দিয়েছেন। উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। মঙ্গলকাব্যের বিখ্যাত এই কাহিনি অবলম্বনে বেহুলা-লখিন্দর পালাটি লিখেছেন অঘোরনাথ কাব্যতীর্থ। নির্দেশনা দিয়েছেন সেলিম রেজা। পালাটির উপস্থাপনায় ছিল আধুনিক ও নান্দনিতার ছোঁয়া।