চলে গেলেন সংগীতশিল্পী ফরিদা ইয়াসমীন

স্বামী কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে ফরিদা ইয়াসমীন। ছবি: সংগৃহীত
স্বামী কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে ফরিদা ইয়াসমীন। ছবি: সংগৃহীত

টানা ১৮ দিন বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন সংগীতশিল্পী ফরিদা ইয়াসমীন। আজ শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
ফরিদা ইয়াসমীনের মৃত্যুর খবর প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন তাঁর পুত্রবধূ মাছুমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘কিডনিজনিত সমস্যার কারণে ২১ জুলাই আমার শাশুড়িকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তির কয়েক দিন পর তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। একটা পর্যায়ে তিনি কোমায় চলে যান। কোমায় থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান।’
মাছুমা খাতুন জানান, ফরিদা ইয়াসমীনের মরদেহ এখন বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে। কাল সকাল দশটায় তাঁর মরদেহ সেগুনবাগিচার বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর বাসার পাশের মসজিদে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।’
১৯৪০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতার মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন ফরিদা ইয়াসমীন। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে এক মেয়ে, নাতি নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর অন্য দুই বোন নীলুফার ইয়াসমীন ও সাবিনা ইয়াসমীন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী। বেশ কয়েক বছর আগে নীলুফার ইয়াসমীন মারা গেছেন।
প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসেবে ফরিদা ইয়াসমীন পাঁচ বছরের বেশি সময় সংগীত জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকেননি। ষাটের দশকে অসাধারণ কয়েকটি গান গেয়ে তিনি জয় করে নিয়েছিলেন মানুষের মন। সেই জনপ্রিয় গানগুলির মধ্যে ছিল ‘ফুলের হাওয়া লাগল’, ‘তুমি জীবনে মরনে আমায় আপন করেছ’, এবং ‘সায়ান বেদার্দি মেরা দার্দ না জানে রে’। শেষ গানটি সুপারহিট উর্দু ছবি চান্দায় ব্যবহৃত হয়েছিল। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় তিনি সংগীত জগৎকে বিদায় জানান।

এক ফ্রেমে পাঁচ বোন । ছবি: সংগৃহীত
এক ফ্রেমে পাঁচ বোন । ছবি: সংগৃহীত

এক সাক্ষাৎকারে ফরিদা ইয়াসমীন বলেছিলেন, ‘আমি প্লেব্যাক করা শুরু করি বিয়ের আগে। বিয়ের পর সবকিছুই পরিবর্তিত হয়ে গেল। বাড়ির কাজে অনেক সময় কাটাতে হতো। সন্তানদের দেখাশোনা করতে হতো। আমি খুব নিয়মের মধ্যে চলতে ভালোবাসি। একজন প্লে-ব্যাক শিল্পীকে যেকোনো সময়ই গান করার জন্য স্টুডিওতে যেতে হতো। আমি সে সময়টা বের করতে পারতাম না। আমার স্বামীও (জনপ্রিয় থ্রিলার মাসুদ রানার স্রষ্টা সুসাহিত্যিক ও প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেন) তখন তাঁর ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য সংগ্রাম করে চলেছিলেন। ফলে সংসার ও ক্যারিয়ারের মধ্যে আমাকে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হয়েছিল। আমি সংসারকে বেছে নিয়েছিলাম।’
ফরিদা ইয়াসমীনের মৃত্যুতে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর শোক প্রকাশ করেছেন।