শিল্পী ন্যান্সির বাসায় পুলিশ

ন্যান্সি
ন্যান্সি

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী ন্যান্সির নেত্রকোনার বাসায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে হঠাত্ করেই পুলিশি অভিযান চালানো হয়। পুলিশ সেখানে ঘণ্টা দুয়েকের মতো অবস্থান করে। ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের কতিপয় নেতা-কর্মীর সন্ধানে ন্যান্সির বাসায় পুলিশের এই সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানান নেত্রকোনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মফিজুল ইসলাম। ওই সময় ন্যান্সি সেখানে না থাকলেও এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রথম আলো ডটকমকে ন্যান্সি বলেন, ‘ফেসবুকে দেওয়া আমার একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন মহল থেকে হুমকি পেয়ে আসছি। আমার ধারণা, এর রেশ ধরে আমাকে হয়রানি করার জন্য এত রাতে আমার নেত্রকোনার বাসায় পুলিশ যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি রীতিমতো বিস্মিত হয়েছি।’ ন্যান্সি এও বলেন, ‘গভীর রাতে পুলিশের এ ধরনের আচরণের পর থেকে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ এদিকে সদর থানার ওসি এস এম মফিজুল ইসলাম প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘ন্যান্সির নেত্রকোনার বাড়িটি বেশ নিরিবিলি। গতকাল সন্ধ্যায় হঠাত্ করেই আমাদের কাছে খবর আসে ন্যান্সির বাড়িতে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের কয়েকজন নেতা-কর্মী আশ্রয় নিয়েছেন। গোপন এই সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের ছয় সদস্যের একটি দল ন্যান্সির বাসায় অভিযান চালায়। কিন্তু ন্যান্সির অসহযোগিতার কারণে শেষ পর্যন্ত তাঁর বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারেনি পুলিশ। ন্যান্সির মতো জনপ্রিয় একজন শিল্পীর কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ আমরা প্রত্যাশা করিনি। এ কারণে ভবিষ্যতে তিনিও হয়তো আমাদের কাছ থেকে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা পাওয়া থেকে বঞ্চিতও হতে পারেন।’ অন্যদিকে অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফ রেজাউল করিম প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আমার জানামতে ন্যান্সির নেত্রকোনার বাড়িটিতে কেউ থাকেন না। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি, গতকাল রাতে তাঁর বাড়ির ছাদে অজ্ঞাতনামা কিছু লোক অবস্থান করছে। যেহেতু ন্যান্সি ওই বাড়িতে থাকেন না, তাই আমরা জনপ্রিয় এই শিল্পীর নিরাপত্তার কথা ভেবে বাসায় যাই। সেখানে ন্যান্সির ছোট ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয় এবং মোবাইল ফোনে ন্যান্সির সঙ্গে কথাও হয়। কিন্তু ন্যান্সির কাছ থেকে তাঁর বাড়ির ভেতরে প্রবেশের অনুমতি না পেয়ে আমরা ফিরে আসি।’ সম্প্রতি এক ফেসবুক বার্তায় বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন তারকা এই সংগীতশিল্পী। আর এতে করেই নানাভাবে আলোচিত হয়ে ওঠেন গানের বাইরে ন্যান্সি। ২১ অক্টোবর রাতে ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেন ন্যান্সি। বিএনপির প্রতি সমর্থন জানানোর পাশাপাশি বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার অনেক প্রশংসা করেন তিনি। ন্যান্সি তাঁর ফেসবুক বার্তায় লেখেন, ‘আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। আজ বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনলাম। আমি ও আমার পরিবার সব সময় বিএনপিকে সাপোর্ট করেছি। কিন্তু আজ বিএনপির পক্ষপাতিত্ব করে নয়, বাংলাদেশের একজন সাধারণ ও সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি বেগম খালেদা জিয়ার সুস্পষ্ট, সুচিন্তিত, জনহিতকর বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাই। সেই সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের প্রতি দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা অন্যায় করেছেন বা করছেন, তাঁদের প্রতি তিনি (বেগম জিয়া) যে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি দেখিয়েছেন, সেটাও নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।’ একই স্ট্যাটাসের পরের অংশে ন্যান্সি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে লেখেন, ‘ক্ষমতার অপব্যবহারকারী শেখ হাসিনার জন্য নয়, দীর্ঘদিন ধরে শুধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারণে যাঁরা আওয়ামী লীগকে সাপোর্ট করেছেন, তাঁদের সকল অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করেছেন; এখনি সময় প্রতিবাদ করার। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের মিথ্যাচারের কবল থেকে মুক্তি চায়। তাই এবার শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বিএনপি জয়লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ।’ ফেসবুকে নিজের এ ধরনের মন্তব্য প্রকাশের ব্যাপারে ন্যান্সি প্রথম আলো ডটকমকে জানিয়েছিলেন, ‘আমার পরিবার জাতীয়তাবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত। আমার মা-ও ছিলেন জাসাসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমার স্ট্যাটাসটি দিয়ে আমার রাজনৈতিক অবস্থানটা পরিষ্কার করলাম। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আমি রাজনৈতিক আদর্শে চলার অধিকার রাখি। আর সেই হিসেবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাও আমার আছে। এটা আমার শিল্পী সত্তার একেবারেই বাইরের ব্যাপার।’ ন্যান্সি আরও বলেছিলেন, ‘এই স্ট্যাটাস দেওয়ার পর আমি সে অর্থে কমেন্ট পাইনি ফেসবুকে। তবে অসংখ্য ফোন পাচ্ছি সেদিন রাত থেকে। সবাই আমার শুভাকাঙ্ক্ষী। সবার একটাই কথা—এটা আমি কী লিখালম! কেন লিখলাম। এ ধরনের মন্তব্যের কারণে আমার সংগীতের ক্যারিয়ারও শেষ হয়ে যেতে পারে। আমি যেন স্ট্যাটাসটা ডিলিট করি, সে পারমর্শও অনেকে দিয়েছেন। এ ছাড়া আমি যেন ফেসবুক বার্তাটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করি।’ ন্যান্সি এ-ও বলেন, ‘রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের কারণে শ্রোতারা যদি আমার গান না শোনেন, আমাকে গান গাইতে না ডাকেন, যদি জাতীয় পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হই, ব্ল্যাক লিস্টেড হই, তাতে আমার কোনো দুঃখবোধ থাকবে না। আমি মনে করব শিল্পী হিসেবে আমি ব্যর্থ। কেননা সবাই আমাকে আমার কণ্ঠের জন্যই চেনেন। আমি যদি গান করার ক্ষমতা রাখি আর আমার গান যদি শ্রোতাদের ভালো লাগে, আমি অবশ্যই গান করে যাব। আমার রাজনৈতিক মত প্রকাশের কারণে আমার সংগীত ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে, তা আমি কখনো বিশ্বাস করি না।’ ‘প্রজাপতি’ ছবির গানে কণ্ঠ দিয়ে ২০১১ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন খ্যাতনামা সংগীতশিল্পী ন্যান্সি।