সুরের মুগ্ধতায় নির্ঘুম রাত

সাবিনা ইয়াসমীন, ছবি: আনন্দ
সাবিনা ইয়াসমীন, ছবি: আনন্দ

পৌষের পড়ন্ত বেলার শেষে বিদায়ী সন্ধ্যা। শীতের হিমেল হাওয়ার পরশ বুলিয়ে মাঘ জানিয়ে দিচ্ছিল তার আগমনী বার্তা। থেমে গেছে পাখপাখালির কলতান। কোলাহলমুখরিত কর্মব্যস্ত শহরের মানুষের স্রোত তখন সুর ও ছন্দের মিতালির খোঁজে আলো-আঁধারির মঞ্চ ঘিরে। মঞ্চের পেছনে ডিজিটাল পর্দায় আচমকা ভেসে উঠল অবারিত বাংলাদেশ।
বাঁশি, তবলা, কি-বোর্ড ও গিটারে সুর তুলল বাদক দল পঞ্চপাণ্ডব। গাঢ় সবুজ জমিনের শাড়ির সঙ্গে সবুজ চুড়ি আর কপালে সবুজ টিপ পরে সুরের মূর্ছনায় শ্রোতাদের মুগ্ধ করতে মঞ্চে উঠলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। হাজার দর্শক করতালি দিয়ে অভিবাদন জানালেন জনপ্রিয় এই শিল্পীকে।
দর্শকদের উদ্দেশে সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, শ্রোতাদের ভালোবাসা-দোয়া-আশীর্বাদে গানের খাতায় জমেছে তাঁর ১৬ হাজার সুর। বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র—সবখানেই কণ্ঠ উজাড় করে শ্রোতাদের জন্য গেয়েছেন তিনি। মঞ্চে গাইতে গিয়ে শ্রোতাদের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছেন। এই প্রথম বগুড়ার মঞ্চে গাইতে এসেছেন। এ জন্য আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি।
গত বুধবার সন্ধ্যায় বগুড়ার পুলিশ লাইনস মাঠের মঞ্চে মনোমুগ্ধকর এই সুরের মূর্ছনা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বরেণ্য এই কণ্ঠশিল্পী। সন্ধ্যায় ‘মঙ্গলদ্বীপ জ্বালো...’ গানের সঙ্গে বগুড়ার ‘আমরা কজন শিল্পীগোষ্ঠী’র এক ঝাঁক নৃত্যশিল্পীর দলীয় পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয়েছিল সংগীতের এই জমজমাট আসরের।
বগুড়া জেলা পুলিশের বার্ষিক সমাবেশ উপলক্ষে এই আয়োজন হলেও শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীনের সুরের টানে ছুটে এসেছিলেন প্রাচীন শহরের সংগীতপ্রিয় নানা শ্রেণি-পেশার অর্ধলক্ষ মানুষ। মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেছেন গুণী এই শিল্পীর গান।
‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’—দেশাত্মবোধক এই গান দিয়ে সাবিনা ইয়াসমীন গানের ঝাঁপি খোলেন।
এরপর পরিবেশন করেন ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘চিঠি দিয়ো প্রতিদিন’ গানগুলো।
গানের ফাঁকে সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ১৬ হাজার গানের মধ্যে তাঁর সংগীতজীবনের তৃতীয় গানটি তাঁর নিজেরও খুবই প্রিয়। আর সেই গান গাইলেন তিনি। গানটি হলো গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা এবং শহীদ আলতাফ মাহমুদের সুরে অবুঝ মন ছায়াছবির ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’। এ ছাড়া জনপ্রিয় অনেক গান গেয়ে শোনান তিনি।
নন্দিত কণ্ঠশিল্পী সবিনয়ে বলেন, ‘রাত বাড়ছে, আরও অনেক শিল্পী রয়েছেন। তাঁদের সুযোগ দিতে আমি বিদায় নিচ্ছি।’
এরপর মঞ্চে ওঠেন কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী। তিনি একে একে শোনান ‘বন্দে মায়া লাগাইছে’, ‘নেশা লাগিল রে’, ‘সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী’সহ বেশ কিছু গান।
কণ্ঠশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস দর্শক মাতান জীবনমুখী গান গেয়ে। অভিনেতা ডি এ তায়েব ও লাক্স তারকা মেহজাবিন দুটি নৃত্যে অংশ নেন। কৌতুক পরিবেশন করেন প্রিন্স আলমগীর।