বলিউডের উত্থান

আরাধনা ছবিতে শর্মিলা ঠাকুর ও রাজেশ খান্না
আরাধনা ছবিতে শর্মিলা ঠাকুর ও রাজেশ খান্না

বলিউডের ১০০ বছর: চলতি বছরে ১০০ বছর পূর্তি হলো বলিউডের। আর এ শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বলিউডের ক্লাসিক সব ছবি ও খুঁটিনাটি সব বিষয় ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে কয়েকটি পর্বে। আজ তৃতীয় পর্ব।
১৯৫০-এর দশকে বলিউড
বলিউডের সোনালি সময়। পঞ্চাশের দশকে দিলীপ কুমার, রাজ কাপুর ও দেব আনন্দের জয় জয়কার ছিল। এ ছাড়া বল রাজ সাহানী, রাজকুমার, শাম্মী কাপুর, কিশোর কুমার ও মহীপাল ছিলেন জনপ্রিয়। নায়িকাদের মধ্যে সন্ধ্যা, বৈজয়ন্তীমালা, নার্গিস, নূতন, ওয়াহিদা রেহমান ও আশা পারেখ ছিলেন জনপ্রিয়।
আওয়ারা (১৯৫১): পরিচালনা করেছেন রাজকাপুর। ভবঘুরের গেটআপ নেন তিনি। রাজকাপুর ও নার্গিসের ক্যামেস্ট্রির জন্য ছবিটি বেশি সমাদৃত হয়। দো বিঘা জামিন (১৯৫৩): বিমল রায়ের ছবিতে গ্রামের এক দরিদ্র কৃষকের জীবনযুদ্ধ ফুটে উঠেছে। ১৯৫৪-এর কান ফিল্ম উৎসবে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ পুরস্কার ছাড়াও বলিউডের প্রথম ছবি হিসেবে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে সেরা ছবি ও সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছে দো বিঘা জামিন। পরিণীতা ( ১৯৫৩): শরৎচন্দ্রের উপন্যাস অবলম্বনে দুই প্রতিবেশীর মিষ্টি প্রেমের এ ছবির পরিচালক বিমল রায়। মীনা কুমারী ও অশোক কুমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এ ছবিতে প্রাণবন্ত অভিনয়ের জন্য মীনা কুমারী ১৯৫৫ সালে ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। ক্লাসিক এ ছবির জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার পান বিমল রায়। এ ছাড়া এই দশকে বুট পলিশ (১৯৫৪), মির্জা গালিব (১৯৫৪), দেবদাস (১৯৫৫): শরৎচন্দ্রের উপন্যাস অবলম্বনে আবারও দেবদাস নির্মিত হলো। এবার পরিচালনা করেন বিমল রায়। ছবিতে দেবদাস চরিত্রে দিলীপ কুমার, চন্দ্রমুখী চরিত্রে বৈজন্তীমালা, পারু চরিত্রে সুচিত্রা সেন ও চুনিলাল চরিত্রে মতিলাল মনে দাগ কাটার মতো অভিনয় করেছেন। দো আঁখে বারা হাত (১৯৫৭), মাদার ইন্ডিয়া (১৯৫৭): মেহবুব খান পরিচালিত এ ছবি তাঁরই ছবি অওরাত-এর (১৯৪০) রিমেক। ক্লাসিক ছবি। ১৯৫৮ সালে অস্কারে বিদেশি ভাষার ছবি ক্যাটাগরিতে বলিউডের প্রথম ছবি হিসেবে মনোনীত হয়। সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেত্রীসহ পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পায় এ ছবি। অন্য ছবিগুলো হলো: পেয়াসা (১৯৫৭), সুজাতা (১৯৫৯), বৈজু বাওড়া (১৯৫২), জাগৃতি (১৯৫৪), ঝানাক ঝানাক পায়েল বাজে (১৯৫৫), জাগতে রাহো (১৯৫৬), নয়া দৌড় (১৯৫৭), চালতি কা নাম গাড়ি (১৯৫৮), কাগজ কে ফুল (১৯৫৯)।

টুকিটাকি

l প্রথম যে ভারতীয় ছবি টেকনিকালারে নির্মিত হয়, তা হলো সোহরাব মোদির ঝাঁসি কি রানি (১৯৫৩)।

১৯৬০-এর দশকে বলিউড

ষাটের দশকে রাজেশ খান্না রোমান্টিক মেগাস্টার হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। দিলীপ কুমার, সুনীল দত্ত, অশোক কুমার, দেব আনন্দ, মনোজ কুমাররা ছিলেন সুপারস্টার। এ সময় বৈজয়ন্তীমালা, মধুবালা, নূতন, ওয়াহিদা রেহমান শীর্ষ নায়িকা ছিলেন। এ সময়ের নামকরা ছবিগুলো হলো:

পরখ (১৯৬০), কানুন (১৯৬০): হিন্দি ছবি মানেই নাচ-গানে ভরপুর। কিন্তু ব্যতিক্রমও আছে। পরিচালক বি আর চোপড়া নাচ-গান ছাড়াই দর্শকদের মন জয় করেছিলেন কানুন ছবি দিয়ে। মোগল এ আজম (১৯৬০): কে. আসিফ পরিচালিত এ ছবি বলিউডের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ব্রিটেনভিত্তিক পত্রিকা ইস্টার্ন আই-এর পরিচালিত এক জরিপে সর্বকালের সেরা ছবির খেতাব পেয়েছে। মোগল রাজবংশের যুবরাজ সেলিম ও নর্তকী আনারকলির ট্র্যাজিক প্রেম নিয়ে ছবির কাহিনি। বন্দিনী (১৯৬৩), হাকিকাত (১৯৬৪), গাইড (১৯৬৫), তিসরি কসম (১৯৬৬): বোদ্ধাদের মতে, পরিচালক বাসু ভট্টাচার্যের সেরা ছবি এটি। আবেগঘন এ ছবির প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেন রাজকাপুর ও ওয়াহিদা রেহমান। ছবিটি জাতীয় পুরস্কার পায়। উপকার (১৯৬৭), আশীর্বাদ (১৯৬৮): ঋষিকেশ মুখার্জি পরিচালিত এ ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে ১৯৭০-এ সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় ও ফিল্মফেয়ার দুই পুরস্কারই পান অশোক কুমার। আরাধনা (১৯৬৯): শক্তি সামন্ত পরিচালিত বলিউডের স্মরণীয় এক রোমান্টিক ছবি। সেরা ছবির ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পায় এটি। চিরসবুজ সব গান ছবিটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে।  এ ছবির মাধ্যমে ভারতের প্রথম সুপারস্টাররূপে আবির্ভাব হয় রাজেশ খান্নার। 

টুকিটাকি

l বলিউডের অন্যতম ব্যয়বহুল ছবি মোগল এ আজম-এর একটি গান ‘পেয়ার কিয়া তো ডারনা কেয়া’ শুটিং করতে সে সময় ১০ লাখ রুপি ব্যয় হয়, যখন এক লাখ রুপিতেই একটি ছবি নির্মাণ করা সম্ভব ছিল। গানটি মোগল স্থাপনা শীষমহলে শুটিং করা হয়।

তথ্যসূত্র: কালচারোপিডিয়া ডট কম, ক্রিয়েটিভ ডট সুলেখা ডট কম, উইকিপিডিয়া, আইএমডিবি, জিনিউজ ডট ইন্ডিয়া ডট কম

l আহমেদ শরীফ