ভালোবাসার স্মারক

আজীবন সম্মাননা পেলেন অভিনেত্রী কবরী। পুরস্কার তুলে দেন সৈয়দ হাসান ইমাম, পাশে স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী
আজীবন সম্মাননা পেলেন অভিনেত্রী কবরী। পুরস্কার তুলে দেন সৈয়দ হাসান ইমাম, পাশে স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী

নায়িকা থেকে নায়িকায় সরে সরে যাচ্ছিল দৃষ্টি। তারকাদের মেলা বসেছিল সেদিন। অতিথিদের সঙ্গে আয়োজকদেরও মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়! ঝলমলে সব পোশাকে নায়িকাদের প্রত্যেকে ছিলেন ব্যতিক্রম। কিন্তু সব থেকে উজ্জ্বল ছিলেন ঘিয়ে রঙা শাড়ির সৌম্যকান্তি এক নারী। শাড়ির লাল-হলুদ পাড় আর তাঁর হাসি মিলেমিশে সেই আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেয়।
সেই বালিকাবেলায় ফ্রকের ওপর শাড়ি জড়িয়ে শুরু করেছিলেন অভিনয়। তখনো নতুন দেশ পায়নি বাঙালি। আজ স্বাধীন দেশের কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসার স্মারক ‘আজীবন সম্মাননা’ পেলেন তিনি ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’ অনুষ্ঠানে।
টেলিভিশনে সংশপ্তক নাটকে অভিনয় করেছিলেন কবরী। সেটা পাকিস্তান আমলে। শহীদুল্লা কায়সার তখনই আবদুল্লাহ আল মামুনকে বলেছিলেন, ‘সারেং বউ নিয়ে ছবিটা করলে ওকে নিয়ো।’
আবদুল্লাহ আল মামুন কবরীকে নিয়েছিলেন এবং সারেং বউ আজও এই ভূখণ্ডের সব থেকে স্মরণীয় বাংলা ছবিগুলোর একটি হয়ে আছে। গত শতাব্দীর ষাট-সত্তর দশকে বাংলা সিনেমা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতে শুরু করেছে। ওই সময় একের পর এক ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করেন তিনি। পাড়ি দিয়েছেন দীর্ঘ অভিনয়জীবন, নায়িকা হিসেবে একগুচ্ছ ছবির জন্য কর্মযজ্ঞ, সাংসদ হিসেবে পালন করেছেন দায়িত্ব। ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৫’ অনুষ্ঠানে ‘আজীবন সম্মাননা ২০১৬’ গ্রহণ করেন এই অভিনেত্রী। এরপর এই পুরস্কারকে ‘ভালোবাসার স্মারক’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। নাট্যজন সৈয়দ হাসান ইমামের হাত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করে নিজের অনুভূতি জানিয়ে বলেন, এই পুরস্কারের আয়োজন থেকে সেদিনও নতুন এক উদ্দীপনা নিয়ে বাড়ি ফিরবেন তিনি ও সবাই। তাঁর মতো দীর্ঘ কর্মপথ পাড়ি দিয়েছেন যাঁরা, তাঁরাও এই মঞ্চে এসে দাঁড়াবেন এক সময়, সেই প্রত্যাশাও করেন।
চট্টগ্রাম থেকে সেই ছোটবেলায় ঢাকায় এসে যে জীবন তিনি শুরু করেছিলেন, সেটি ছিল তাঁর জন্য একটি যুদ্ধ। প্রত্যেক মানুষের জীবন তাঁর নিজের কাছে একটি যুদ্ধের মতো। চলমান সেই যুদ্ধে প্রত্যেকের বিজয় কামনা করেন কবরী।
তাঁকে নিয়ে লেখা হয়েছে প্রচুর। তার পরও তাঁকে নিয়ে লেখা শেষ হওয়ার নয়। ঠিক করেছেন, এরপর নিজের গল্প তিনি নিজেই বলবেন। লিখবেন আত্মজীবনী। সেখান থেকেই তাঁর জীবনের আরও রঙিন অনেক গল্প জানব আমরা।