বর্ণিল সংগীত দিবস

বিশ্ব সংগীত দিবস উপলক্ষে গতকাল ঢাকায় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বেহালা বাজাচ্ছেন শিল্পীরা l ছবি: প্রথম আলো
বিশ্ব সংগীত দিবস উপলক্ষে গতকাল ঢাকায় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বেহালা বাজাচ্ছেন শিল্পীরা l ছবি: প্রথম আলো

শহরজুড়ে বাদ্য বাজছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ দল। মনে হবে যার যে যন্ত্র আছে, তাই নিয়ে যেন পথে নেমেছেন। পথের ওপর বসে দাঁড়িয়ে গাইছেন, বাজাচ্ছেন তাঁরা। যেখানে অ্যাকুয়েস্টিক যন্ত্রের সুর শোনা যাবে না, সেখানে বড় শব্দযন্ত্রের ব্যবস্থা। কোথাও কোথাও বড় বড় মঞ্চ। ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরের সংগীত দিবসের দৃশ্য এগুলো। বিশ্বের যে দেশগুলোয় সংগীত দিবস পালিত হয়, তাদেরও গড়পড়তা চিত্র এমনই।
বাংলাদেশও দিনটি পালনে অংশ নিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাজধানীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ক্যাফেতে ছিল ছোট্ট পরিসরে সংগীত দিবসের বর্ণিল নিবেদন। আয়োজক বাংলাদেশের ফরাসি সংস্কৃতিকেন্দ্র। শিক্ষার্থীরা ছাড়াও যন্ত্র কাঁধে এসেছিলেন বিভিন্ন মাধ্যমের কণ্ঠ ও যন্ত্রশিল্পীরা। আসন পূর্ণ করা দর্শকেরা উৎসবের এই ছোট্ট আয়োজন উপভোগ করেছেন প্রত্যাশার থেকেও বেশি। কেউ ভাবতেই পারেনি ‘মেরা জীবন কোরা কাগজ’ গানটি ফরাসি ভাষায় শুনবেন ঠিক এই দিনে। গেয়েছেন সংস্কৃতিকেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা। গিটারের প্লাকিংয়ের সঙ্গে মেজবাহ উদ্দিনের মাউথ অর্গানে ‘পুরোনো সেই দিনের কথা’ গানের সুর ছিল আরেক চমক।
স্বাগত বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের পরিচালক ব্রুনো প্লাস। স্মৃতিচারণা করেন সংগীত উৎসবে তাঁর নিজের শহরের কথা। বলেন, ‘খুব মিস করি সময়গুলো। ছোট পরিসরে আয়োজন করলাম এবার। পরের বার থেকে আরও বড় করে করতে চাই।’ গান শুনতে এসেছিলেন গ্যেটে ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফিলিপ কুপারস। তিনি নিজে সংগীতের শিক্ষার্থী বলে এই আয়োজন দারুণ উপভোগ্য ছিল তাঁর জন্য। উৎসবে একক কণ্ঠে বাংলা, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় গান করেছেন শিল্পীরা। পরিবেশন করেছেন কায়সার, দেবযানী সেনগুপ্ত, মিজানুদ্দিন খান ও শুভ্রা দেবনাথ। তরুণ শিল্পী মাইশা ইসলামের কণ্ঠে ছিল ইংরেজি ‘গ্রেনেড’ গানটি। এক ঝাঁক বেহালার শিক্ষার্থী একসঙ্গে বাজিয়ে বিমুগ্ধ করেছেন শ্রোতাদের। ছিল পিয়ানোর শিক্ষার্থীদের পরিবেশনাও। ছোট ছোট পিচ বাজিয়ে শুনিয়েছেন তাঁরা। চেলো পরিবেশন করেছেন রাজেফ খান। সমবেত কণ্ঠে গান করেছেন সংস্কৃতিকেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা।
সংগীত দিবসের এই আয়োজন থাকবে আজও। একই জায়গায় আজ বেলা ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত থাকবে গান, মুক্তমঞ্চ পরিবেশনা।
১৯৮২ সাল থেকে ফ্রান্সে শুরু হয় ‘ফেত-দো-লা-মিউজিক’ উদ্যাপন। সবার কাছে নানা ধরনের সংগীত পৌঁছে দিতে ১৯৮১ সালে তৎকালীন ফরাসি সংস্কৃতিমন্ত্রী দিনটি পালনের উদ্যোগ নেন। পরে প্রতিবছর ২১ জুন বিশ্বের এক শর বেশি দেশে ‘ফেত-দো-লা-মিউজিক’ উদ্যাপিত হয়।