সবার ভালো লাগছে, এটাই বড় পাওয়া

বাংলা চলচ্চিত্রের আলোচিত জুটি উত্তম-সুচিত্রার সম্পর্ক নিয়ে তৈরি হয়েছে সিরিয়াল মহানায়ক। এটি পরিচালনা করেছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। পাঁচ মাস ধরে ভারতের স্টার জলসায় দেখানো হচ্ছে সিরিয়ালটি। এর অন্যতম প্রধান চরিত্র সুচরিতা ওরফে সুচিত্রা সেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন পাওলি দাম। এই সিরিয়ালের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর টেলিভিশনে কাজ করলেন তিনি। এটি পাওলিকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। সিরিয়ালসহ আরও বিভিন্ন প্রসঙ্গে রোববার সকালে পাওলি তাঁর কলকাতার টালিগঞ্জের লেক গার্ডেনের বাসা থেকে টেলিফোনে কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুর কাদের
দীর্ঘদিন পর টিভি সিরিয়ালে কাজ করছেন পাওলি দাম
দীর্ঘদিন পর টিভি সিরিয়ালে কাজ করছেন পাওলি দাম

অনেকেই বলছেন, ‘মহানায়ক’-এ পাওলি অসাধারণ কাজ করেছেন।
প্রথমেই বলি, এটা ফিকশনাল কাজ। আর যে সময়টা ধরা হয়েছে, সেই সময়ের অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীকে দেখে আমি বেড়ে উঠেছি। এই তো গতকাল (শনিবার) সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, তাঁকে আমরা সাবু আন্টি বলি, ফোন করে ‘মহানায়ক’ নিয়ে কথা বলেছেন। আমার চরিত্রটির প্রশংসা করলেন। এর আগে সৌমিত্র জেঠুও (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) তাঁর ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন। বাংলা সিনেমার এমন উঁচু মাপের অভিনয়শিল্পীরা আমার অভিনয়ের প্রশংসা করছেন! আমি আর কী বলব। দর্শকেরা ‘মহানায়ক’ নিয়ে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারে প্রচুর প্রশংসা করেছে। সবার অনেক ভালোবাসা পেয়েছি ‘মহানায়ক’-এর মাধ্যমে। সুচিত্রা সেনকে কপি করা বা তাঁর মতো হয়ে ওঠার চেষ্টা মোটেও করিনি। বুম্বাদাও (প্রসেনজিৎ) কিন্তু উত্তমকুমার হয়ে ওঠার চেষ্টা করেননি। যেকোনো শিল্পীর কোনো কাজ প্রশংসিত হলে তো ভালোই লাগে। সবার যে এত ভালো লাগছে, এটাই অনেক বড় পাওয়া।

এভাবেই সুচিত্রা সেনের বেশে সুচরিতা চরিত্রে পাওলি দাম
এভাবেই সুচিত্রা সেনের বেশে সুচরিতা চরিত্রে পাওলি দাম

‘মহানায়ক’-এ কাজ করার প্রস্তুতিটা কেমন ছিল?
খুব যে প্রস্তুতি ছিল তা কিন্তু না। আমি মোটেও সময় পাইনি। ‘মহানায়ক’ সিরিয়ালের আগে আমি দুটো ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। ব্যাংককে রিক বসুর দেবী, কলকাতায় ফিরে কাজ করেছি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের জুলফিকার ছবিতে। এর মধ্যে আবার নতুন বছর উদ্যাপন করতে আমি ঘুরতে চলে গেলাম ব্রাসেলসে। সেখান থেকে ফিরে এসেই ‘মহানায়ক’ সিরিয়ালের শুটিং শুরু করি। এই সিরিয়ালের প্রচারের সময় আমার নতুন ছবি ক্ষত মুক্তি পায়।

সুচরিতা রূপে সুচিত্রা সেনের চরিত্রটি পর্দায় তুলে ধরার ব্যাপারটা আপনার জন্য কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
সত্যিই ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। আবারও বলছি, এটা ফিকশনাল কাজ। সময়টাকে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এমনিতে পিরিয়ডিক কাজ করতে ভীষণ পছন্দ করি। মনের মানুষ, এলার চার অধ্যায় সিনেমায় করেছি। কিছু নাটকেও করেছি। তা ছাড়া আমি অনেক দিন পর টেলিভিশনে কাজ করলাম। টেনশন ছিল। চাপ ছিল। কমিটমেন্টেরও একটা ব্যাপার ছিল। একটা ব্যাপারে খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে কাজটা ভালো হবেই। এই সিরিয়ালের কাজের আগে আমার গেটআপ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। মেকআপ ও হেয়ার আর্টিস্টরা প্রচুর খেটেছেন। এটা পুরো একটা টিমওয়ার্ক। কাজের মানটা ভালো হবে জানতাম।

‘ক্ষত’ সিনেমায় প্রসেনজিতের সঙ্গে আপনাকে বেশ কিছু সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা গেছে?
ক্রাইম থ্রিলার ধাঁচের সিনেমা ক্ষততে আমি আসলে অন্তরা হতে চেয়েছি, যে কিনা ভীষণ প্রগ্রেসিভ। এই ছবিতে আমার চরিত্রটা সত্যি খুবই জটিল। এখানে অন্তরা যা হতে চেয়েছে, আমি সেভাবে চলেছি। কমল দার (কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়) নির্মাণের ধরনটাই আলাদা। আমি নিজেও মনে করি, যেকোনো চরিত্রে নিজেকে উজাড় করে দিতে হবে। তা ছাড়া এটা খুবই ইমোশনাল একটা ফিল্ম। এ ধরনের একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অনেক প্যাশনের দরকার। আমি শুধু চরিত্রটাই তুলে ধরার চেষ্টা করে গেছি।

‘জুলফিকার’ ছবির ট্রেলার দেখলাম...
সৃজিতের সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ। কাজটি করে ভীষণ ভালো লেগেছে। এর আগে তাঁর সঙ্গে কাকা বাবু করার কথা ছিল। একটা দুর্ঘটনার কারণে প্রজেক্টটা পিছিয়ে যায়। এই ছবিতে আমার যে চরিত্রটা গেটআপ, লুক—এ ধরনের চরিত্র আগে বাংলা ছবিতে করিনি। এখানে আমি জুলফিকারের স্ত্রী। এর বেশি আর কিছু ছবিটি নিয়ে বলতে পারব না। তবে আমি ছবিটি নিয়ে ভীষণ আশাবাদী। বহু তারকা কাজ করেছেন। আশা করছি ছবিটিও ভীষণ ভালো হবে।

আপনার বলিউড মিশনের খবর কী?
বলিউেড এক্ষুনি কিছু সাইন করিনি। ভাবছি, দেখা যাক। আমি চিন্তিত বাংলাদেশের সিনেমাটা নিয়ে।

‘সত্তা’ সিনেমার কাজ কি এখনো শেষ হয়নি?
ছবিটির এখনো গান বাকি। কয়েকটি দৃশ্যের শুটিংও করলে শেষ হয়ে যাবে। আমি আসলে সত্তা কবে মুক্তি পাবে, এ অপেক্ষায় আছি। রিক বসুর দেবী ছবির শুটিংয়ে আমি যখন ব্যাংককে গেলাম, তখন সত্তা ছবির নায়ক শাকিবের (শাকিব খান) সঙ্গে এয়ারপোর্টে দেখা হয়েছিল। ও চেক আউট করছিল, আমি চেক ইন। তখন আমাদের মধ্যে ছবিটি নিয়ে সে রকম কথা হয়নি। কল্লোলকে (হাসিবুর রেজা) বলেছি, ছবিটা তো শেষ করতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে তো আমাদের লুকও চেঞ্জ হয়ে যাবে! এ ছবিটি নিয়েও আমি খুব আশাবাদী।

এবার একেবারে ব্যক্তিগত প্রশ্ন। বিয়ে করছেন কবে?
এখনো জানি না। হুট করেই বিয়ের সিদ্ধান্ত হতে পারে।

প্রেমিক অর্জুন দেবকেই কি বিয়ে করছেন?
তা আর কাকে করব? প্রেম করছি, তাকেই তো বিয়ে করব।

কত বছরের প্রেম?
আমাদের দুই বছরের প্রেম।

আপনার কাজে অর্জুনের সহযোগিতা কেমন পান?
ও তো ভীষণ সার্পোটিভ। আমার কাজে সে নানাভাবে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দেয়।
প্রথম আলোকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ
আপনাকেও ধন্যবাদ।