পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত শুক্রবার ভারতে মুক্তি পেয়েছে আহমেদ খান পরিচালিত ছবি ‘হিরোপন্তি টু’। ‘হিরোপন্তি’র এই সিকুয়েলে নওয়াজ অভিনয় করেছেন তৃতীয় লিঙ্গের খলনায়ক ‘লায়লা’র ভূমিকায়। ছবির প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার অফিসে প্রথম আলোর সঙ্গে প্রাণখোলা আড্ডায় তিনি কথা বলেন নিজের ঈদের স্মৃতি আর জীবনের নানা দিক নিয়ে। ‘হিরোপন্তি টু’ ছবির চরিত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘“লায়লা’র মতো চরিত্রে অভিনয়ের ইচ্ছা আমার দীর্ঘদিনের। আমি এমন এক খলনায়কের ভূমিকায় আসতে চেয়েছিলাম, যার মধ্যে মেয়েলি ভাব আছে। অবশেষে সেই ইচ্ছা পূরণ হলো।’
শেষ দুটি বছর রোমাঞ্চে ডুবে ছিলেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। পরপর কয়েকটা প্রেমের ছবিতে দেখা গেছে তাঁকে। সামনেও অবনীত কৌর, নূপুর শ্যাননের মতো ‘পিচ্চি’ নায়িকাদের সঙ্গে জুটি বেঁধে রোমান্টিক ছবিতে আসছেন তিনি। তবে ‘হিরোপন্তি টু’তে একদম ভিন্ন অবতার নওয়াজের। ‘হিরোপন্তি’র মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল টাইগার শ্রফের। দ্বিতীয় মৌসুমেও নায়কের ভূমিকায় আছেন টাইগার আর নায়িকা তারা সুতারিয়া। এর আগে নওয়াজ ‘মুন্না মাইকেল’ ছবিতে টাইগারের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। দ্বিতীয়বার একসঙ্গে পর্দায় এলেন দুজন। স্বাভাবিকভাবে উঠে আসে টাইগারের প্রসঙ্গ। নওয়াজ বলেন, ‘টাইগারের সঙ্গে দ্বিতীয়বার কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ। আজকালকার অভিনেতারা নিজের শরীরের ওপর বেশি চাপ দেন। আর তাঁরাই এখন স্টার-সুপারস্টার। তাঁদের কাজের পদ্ধতি আলাদা। আর একদল অভিনেতা আছেন, যাঁরা অন্য ধারার কাজে বিশ্বাসী। এই সব অভিনেতার ক্রাফট আলাদা হয়।’ চরিত্রের প্রয়োজনে তিনি কি নিজের শরীর ভাঙচুর করবেন? জবাবে নওয়াজ বলেন, ‘হ্যাঁ, কেন নয়? যদি কোনো চরিত্রের দাবি থাকে যে পেটে “বিস্কুট” বানাতে হবে, তাহলেও আমি নিশ্চয়ই করব। চরিত্রের প্রয়োজনে আমি সবকিছু করতে রাজি আছি।’
দুনিয়াজুড়ে চলছে ‘লার্জার দেন লাইফ’ভিত্তিক ছবির কারবার। সেসব ছবির চাকচিক্য অনেক। নওয়াজ বলেন, ‘এখনকার ছবিতে জাঁকজমক অনেক বেশি। একটা ছবি নির্মাণের পেছনে এখন কোটি কোটি টাকা ঢালা হচ্ছে। ছবিগুলো এখন চমকে ভরপুর। আর মানুষও পাগল হয়ে যাচ্ছে। জলের তলা দিয়ে বিমান ছুটছে। শূন্যে যা কিছু উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদিও আমি এ ধরনের সিনেমায় অভিনয় করে থাকি। তবে সত্যি বলতে, এ ধরনের ছবিতে আমি বিশ্বাসী নই। আমি চরিত্রভিত্তিক সিনেমায় অভিনয় করতে চাই। আমাদের দেশে এ ধরনের ছবি আসতে সময় লাগবে।’ এ দিন উঠে আসে প্রশংসিত ছবি ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’-এর কথাও। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই ছবি করার দারুণ অভিজ্ঞতা। এর পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আমার ভালো বন্ধু। ছবিটা দেখলে আপনার মনে হবে না যে এটা কম বাজেটের ছবি। কম বাজেটে একটা সিনেমা কত সুন্দরভাবে নির্মাণ করা যায়, ছবিটা দেখলে বুঝবেন। নিউইয়র্কে আমরা সুন্দরভাবে শুটিং করেছিলাম।’ তবে এই বলিউড তারকা জানালেন, সাম্প্রতিক দক্ষিণি কোনো ছবি তিনি এখনো দেখেননি। তিনি বরং ওয়ার্ল্ড সিনেমা দেখতে বেশি পছন্দ করেন।
একদিকে কমার্শিয়াল মসলাদার ছবিতে নওয়াজকে যেমন দেখা গেছে, তেমনি ‘মান্টো’, ‘সিরিয়াস ম্যান’-এর মতো গম্ভীর ছবিতে তাঁর অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। ব্যক্তিগত জীবনে নওয়াজ কেমন ছবি পছন্দ করেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার পছন্দ প্রতিনিয়ত বদলাতে থাকে। মধ্যে শুধু রোমান্টিক ছবি করার ভূত চেপেছিল। এখন সেই মোহ ভেঙে গেছে। মানুষের মনন আমাকে আকর্ষণ করে। এক মায়ের চার সন্তান। আর তাদের দেখতে-শুনতে এক রকম হলেও চিন্তাভাবনা আলাদা হয়।’
কঙ্গনা রনৌত প্রযোজিত ‘টিকু ওয়েডস শেরু’ ছবিতে নওয়াজকে দেখা যাবে। কঙ্গনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নওয়াজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। নওয়াজ বলেন, ‘কঙ্গনার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ। তিনি প্রযোজক হিসেবে দুর্দান্ত। আসলে তিনি এত সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন যে সবাই কাজটা করতে উৎসাহিত হয়েছেন। এই ছবিতে আমাকে রোমান্টিক চরিত্রে দেখতে পাবেন।’
নিজের সাধারণ জীবন প্রসঙ্গে নওয়াজ বলেন, ‘বাড়ি করার কথা সেভাবে কখনো ভাবিনি। এত বড় বাড়িতে প্রথমে অদ্ভুত লাগত। বড় ঘরে কিছুতেই ঘুম আসত না। এখন ছোট ঘরে চলে এসেছি, তাই দিব্যি ঘুমাচ্ছি। আসলে এখনো আমি সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। সেদিন একটা ইভেন্টে সময়মতো পৌঁছানোর জন্য লোকাল ট্রেনে চেপেছিলাম। আর তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে যেন প্রাণভরে শ্বাস নিয়েছিলাম। আগে আমি লোকাল ট্রেনেই ভ্রমণ করতাম। আজ যে জুতাটা পরে এসেছি, তা আমার ভাইয়ের। এখনো পোশাক থেকে জুতা, কোনোটাতেই নিজের শখ তৈরি করতে পারিনি।’
একসময় প্রবল অর্থকষ্টে দিন কেটেছে নওয়াজের। আজও অর্থ তাঁর কাছে অর্থহীন। তিনি বলেন, ‘অর্থের পেছনে ছুটে লাভ নেই। নিজেকে এমন যোগ্য করে তৈরি করুন, অর্থই একদিন আপনার পেছনে ছুটবে। আমি সিনেমাকে ভালোবাসি। টাকার জন্য কখনোই সিনেমা করি না। “মান্টো” ছবির জন্য কোনো পারিশ্রমিক নিইনি। এ ধরনের ছবি এলে আবার পারিশ্রমিক ছাড়াই কাজ করব।’