শাহরুখ-আনুশকার দুর্দান্ত রসায়ন

আনুশকা শর্মা ও শাহরুখ খান
আনুশকা শর্মা ও শাহরুখ খান

গতকাল শুক্রবার মুক্তি পেল শাহরুখ-আনুশকার ‘যাব হ্যারি মেট সেজাল’। প্রথমেই প্রশ্ন আসবে, এই ছবি কেন দেখব? ইউরোপের পথেঘাটে তরুণ-তরুণীর প্রেমের ছবি আঁকা সেই বস্তাপচা ভালোবাসার গল্প। সেই অন্যের বাগদত্তাকে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়া। কীই-বা নতুন আছে ইমতিয়াজ আলী পরিচালিত এই ছবিতে?

‘যাব উই মেট’, ‘তামাশা’-র পর ইমতিয়াজের এই ছবি প্রেমের কোন নতুন ভাষা বলবে? ইমতিয়াজ না, ‘যাব হ্যারি মেট সেজাল’-এর হ্যারি ও সেজাল দর্শককে নিয়ে যাবে ভালোবাসার এক অন্য দুনিয়ায়। এই ছবিতে হ্যারিরূপী শাহরুখ এবং সেজালের চরিত্রে আনুশকা বলবেন প্রেমের এক নতুন ভাষা। তাঁদের প্রেমময় এই সফরে বারবার সঙ্গী হওয়া যায়।

‘যাব হ্যারি মেট সেজাল’-এর প্রচারের সময় বলিউডের সুপারস্টার শাহরুখ খানকে প্রশ্ন করা হয়, ইমতিয়াজের এই ছবিতে অভিনয় করার কারণ কী? বলিউডের ‘কিং অব রোমান্স’ স্মিত হেসে বলেছিলেন, ‘অনেক দিন কোনো প্রেমের ছবিতে অভিনয় করিনি। খুব ইচ্ছে করছিল একটা প্রেমের ছবিতে কাজ করতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইমতিয়াজ প্রথমে একটা অন্য ছবির গল্প শোনান। আমি ওকে না করে দিই। “যাব হ্যারি মেট সেজাল”-এর প্রথম কুড়ি মিনিট গল্প শুনে আমার দারুণ লাগে। আমি ছবিটি করতে রাজি হই। আর ইমতিয়াজের প্রেমের ভাষা সম্পূর্ণ আলাদা।’

বলিউডে এই অন্য ধারার প্রেমের ছবির সেরা স্রষ্টা ছিলেন প্রয়াত চিত্রনির্মাতা যশ চোপড়া। প্রেমের এই জাদুকরের জাদুর ছোঁয়ায় আজ থেকে ২২ বছর আগে ইউরোপের বুকে জন্ম নিয়েছিল রাজ-সিমরানের নিষ্পাপ প্রেমকথা। যশ চোপড়ার সেই ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’-এর পর এবার ইমতিয়াজ জন্ম দিলেন হ্যারি-সেজালের প্রেমকাহিনি। এই প্রেমকাহিনির সৃষ্টিও এক সফরের মাধ্যমে। কেমন ছিল এই সফর? এই ছবিতে হরিন্দর সিং নেহেরা ওরফে হ্যারি (শাহরুখ খান) ইউরোপের এক টুরিস্ট গাইড। যার পায়ে-পায়ে পথ চলে ইউরোপকে আবিষ্কার করে পর্যটকেরা। গুজরাটের হীরার ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে সেজাল জাভেরি (আনুশকা শর্মা) তার পরিবারের সঙ্গে ইউরোপ ঘুরতে যায়। দেখা হয় হ্যারির সঙ্গে। হ্যারির সঙ্গে ইউরোপ সফরের পর এবার সেজলের বাড়ি ফেরার পালা। বিমানবন্দরে পা রেখে সেজল আবিষ্কার করে তার বাগদানের আংটি হারিয়ে গেছে। সেজল তার হবু বরের আংটি না নিয়ে দেশে ফিরতে নারাজ। হ্যারিকে সঙ্গে নিয়ে সেজল তার হারানো আংটির খোঁজে বের হয়। ইউরোপের সেসব জায়গায় আবার যায় সেজল, যেখানে সে তার পরিবারের সঙ্গে গিয়েছিল। আর এই আংটি খোঁজার সফরে হ্যারি-সেজাল খুঁজে পায় তাদের ভালোবাসা। রুপেনের দেওয়া আংটিকে ভুলে সেজাল মন দিয়ে ফেলে হ্যারিকে।

বিষয়টা খুবই হাস্যকর যে একটা আংটির জন্য সেজলের ইউরোপে থেকে যাওয়া। অন্যের বাগদত্তার প্রতি শাহরুখের আকৃষ্ট হওয়া এবং তারপর প্রেমে পড়া—সেই চেনা গল্প। না, ইমতিয়াজ এখানে প্রেমের নতুন ভাষা বলতে অসফল। তিনিও সেই চেনা গল্প শুনিয়েছেন। ‘যাব হ্যারি মেট সেজল’-এ পাওয়া গেল না ইমতিয়াজের সেই বিশেষ ছোঁয়া। শুরুতেই বলেছি, এটি শাহরুখ-আনুশকার ছবি। তাঁদের জুটি সেই চিরাচরিত প্রেমের ছবিতেও নিয়ে এসেছে এক মুঠো তাজা বাতাস। এত দিন সবাই পর্দায় শাহরুখ-কাজলের দুর্দান্ত রসায়ন দেখে এসেছে। এবার চলচ্চিত্রপ্রেমীরা দেখবে শাহরুখ-আনুশকার এক হৃদয় তোলপাড় করা রসায়ন।

৫০ পেরিয়ে শাহরুখ আজও বলিউডের রোমান্সের জগতে অলিখিত সম্রাট, তা আবার প্রমাণিত। তিনিই পারেন প্রেমের নতুন ভাষা বলতে। তিনিই পারেন প্রেমের গান গাইতে। তিনিই পারেন লাখ লাখ তরুণ-তরুণীর বুকে প্রেমের উন্মাদনা জাগাতে। তবে এই ছবিতে পাওয়া যাবে এক নতুন আনুশকাকে। আনুশকার অনন্য অভিনয় এই ছবির অন্যতম বড় সম্পদ। সেজলরূপী আনুশকা সবার হৃদয় জয় করতে বাধ্য। আনুশকাকে এত সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করার বাহবা দিতেই হবে ইমতিয়াজকে। সিনেমাটোগ্রাফির কে ইউ মোহানানের ক্যামেরায় ইউরোপ যেন আরও সুন্দর লেগেছে। আরও মোহময়। সংগীত পরিচালক প্রিতমের সুরে গানগুলো ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

প্রথম দিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দর্শকের মন জয় করেছে শাহরুখ-আনুশকার রসায়ন। যদিও মৌলিকতার অভাবে ইমতিয়াজের এই গল্প অনেককেই হতাশ করেছে; তবু চিত্রসমালোচকেরা এ ক্ষেত্রে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।