‘২৫ দিনের ভেতর মুম্বাইয়ে হামলা চালানো হবে। কেউ বাঁচবে না, শুধু একজন ছাড়া।’
সরতাজ সিংকে দেওয়া গাইতোন্ডের এই একটা হুমকিতেই শুরু হয়ে গেল জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ‘স্যাক্রেড গেমস’–এর যাত্রা। আর একটা যুদ্ধ। যে যুদ্ধ ১৬ বছর ধরে পলাতক মুম্বাইয়ের অপরাধজগতের প্রধান গণেশ গাইতোন্ডের বিরুদ্ধে মুম্বাইয়ের সৎ ও সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা সরতাজ সিংয়ের। চোর–পুলিশের সেই মরণ খেলায় শেষ পর্যন্ত কে বাঁচে আর কে মরে, তা জানতে যে এত মানুষ আগ্রহ দেখাবে, তা খোদ পরিচালকেরাও ভাবতে পারেননি।
তাই প্রথম সিজন যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, তখন সিজন টুও প্রস্তুত নতুন গল্প, নতুন চমক নিয়ে। আর সেই নৌকায় পঙ্কজ ত্রিপাঠী, রণবীর শোরে, কালকি কোয়েচলিনকে তোলায় তা ভক্তদের আগ্রহ আর উদ্দীপনাকে পৌঁছে দিয়েছে অন্য মাত্রায়। প্রথম সিজনের আটটি অ্যাপিসোড যিনি দেখেছেন, দ্বিতীয় পর্বের জন্য তাঁর অপেক্ষা আর তর সইছে না।
অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে। ১৫ আগস্ট। ২০১৯। ভারতের স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পাবে ‘স্যাক্রেড গেমস টু’। আর দিনটিকে সামনে রেখে একের পর এক ‘খবর’ হয়ে আসছে জনপ্রিয় এই সিরিজ। গত মাসের ৯ তারিখে মুক্তি দেওয়া হয়েছে অফিশিয়াল ট্রেলার। সেটি এখন পর্যন্ত দেখা হয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ ৩০ হাজারবার। সময়ের সঙ্গে এই সংখ্যা কেবল বড় হচ্ছে।
যা হোক, নতুন সিরিজ মুক্তির তারিখ সামনে রেখে একের পর এক অভিনব প্রচারণা চালাচ্ছে ‘স্যাক্রেড গেমস টু’র শিল্পী ও কলাকুশলীরা। এবার এই সিরিজের অভিনয়শিল্পী নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি, কালকি কোয়েচলিন, পঙ্কজ ত্রিপাঠী, রণবীর শোরে, সুরবিন চাওলা, লুক কেনি, যতীন শর্মা। তাঁরা সম্প্রতি ফিরে গেছেন চার দশক পেছনে।
‘স্যাক্রেড গেমস’–এর দ্বিতীয় সিজনের চরিত্ররা একটা ফটোশুটে অংশ নিয়েছেন, যেখানে তাঁদের দেখা যায় ১৯৭০–এর দশকের ‘গ্যাংস্টার’ লুকে। যদিও সেই ফ্রেমে রাধিকা আপ্তে, জিতেন্দ্র যোশি বা কুবরাকে দেখা যায় না। যাবে কীভাবে? তাঁরা তো সিজন ওয়ানেই মারা গেছেন।
আলোচিত এই ফটোশুটের পোশাক ও সাজসজ্জার ডিজাইন করেছেন তানিয়া গ্রাভরি ও মোহিত রাই। ছবি তুলেছেন বলিউডের জনপ্রিয় আলোকচিত্রী রোহান শ্রেষ্ঠা। হ্যাঁ, যাঁর সঙ্গে প্রেম চলছে বলিউড তারকা শ্রদ্ধা কাপুরের। আর এসব ছবি ভাইরাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনলাইন মাধ্যমে। মনে হচ্ছে, প্রচারণার এই অভিনব পদ্ধতি কাজে দিয়েছে। ছবিগুলো মনে ধরেছে ভক্তদের।
সাইফ আলী খানের শরীরে জীবন্ত হওয়া সরতাজ সিং বলেছেন, ‘“স্যাক্রেড গেমস টু” আমার জন্য একটা সৃজনশীল অভিজ্ঞতার যাত্রা। এই প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকে তাদের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছেন। একটা শিল্পীর শিল্পসত্ত্বাকে বের করে আনারে মতো দিন প্রতিদিন আসে না।’
আবার গণেশ গায়তোন্ডেরূপী নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি বলেন, ‘প্রথম আর দ্বিতীয় সিজনে আমার চরিত্র যে ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে, তা একেবারেই ভিন্ন। তাই আমাকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে। এখনেও গণেশ গাইতোন্ডে একই রকমভাবে হাঁটবে, কথা বলবে। কিন্তু তাঁর পারিপার্শ্বিক তাঁর মনোজগৎকে বদলে ফেলেছে অনেকটাই।’
নতুন সিজনে দেখা যাবে শক্তিশালী অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠীকেও। এখানে তাঁর চরিত্রটি একজন গুরুজির। এই খেলায় যে গুরুজির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যিনি বদলে দেবেন অনেক চাল। তাঁর ভাষায়, ‘গুরুজি লেখাপড়া জানা উচ্চশিক্ষিত একজন। যিনি অন্য অনেকের মতোই মনে করেন, তাঁর চিন্তা আর বিশ্বাসই সবার সেরা। আর তিনি যেভাবে জীবন যাপন করেন, সেটিই আদর্শ পদ্ধতি।’
আর কালকি কোয়েচলিনের চরিত্র ব্যাটিয়া আরও অদ্ভুত। তাঁর ইহুদি ফ্রেঞ্চ, আর মা ফিলিস্তিনি। ছোটবেলায় সে মা ব্যাটিয়াকে পরিত্যাগ করে। সে বড় হয় তীব্র রাগ, ক্ষোভ আর ড্রাগকে সঙ্গী করে। এভাবেই সে একদিন আশ্রমে গুরুজি পঙ্কজ ত্রিপাঠীর দেখা পায়। অন্যদিকে, সুরবিন চাওলার চরিত্রের নাম জোজো, ভয়ের সঙ্গে যার কোনো পরিচয় নেই। সে প্রতিনিয়ত গাইতোন্ডের জীবনকে প্রভাবিত করে। সুরবিন চাওলার ভাষায়, ‘শি ইজ জাস্ট আমিজিং।’
যতীন শর্মার বান্টি চরিত্রেও আসবে বৈচিত্র্য, রং। প্রথম সিজনের মতো এবারও তিনি বান্টি চরিত্রের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে। লুক কেনিও জানিয়ে দেবেন, তিনি কে। কীভাবে সবার সঙ্গে তাঁর যোগসাজ। ‘স্যাক্রেড গেমস টু’ পারল নাকি পারল না, সেই প্রশ্ন তাই আপাতত তোলা থাক সময়ের কাছে। আপাতত তাঁদের সত্তরের দশকের গ্যাংস্টার লুক দেখেই খুশি থাকুন।