ঢালিউডের ছবির নাচে মুদ্রার বড় অভাব! প্রায়ই এ রকম অভিযোগ করে থাকেন নৃত্যশিল্পীরা। আর চলচ্চিত্র পরিচালকদের সীমাবদ্ধতা, নাচের পেছনে খুব বেশি অর্থ ব্যয়ের সুযোগ তাঁদের ছিল না। এরই মধ্যে কয়েক বছর ধরে ঢাকার ছবিতে যুক্ত হয়েছেন টলিগঞ্জ ও বলিউডের নৃত্য পরিচালকেরা। তাতে ঢালিউডের নাচের কোরিওগ্রাফিতে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। এবারে খোদ ঢাকায় যাত্রা করল আলিফিয়া স্কোয়াড।
ঢাকাই সিনেমার নাচে নতুনত্ব আনতে কাজ করবে আলিফিয়া। দলটির প্রধান কোরিওগ্রাফার মোফাসসাল আল আলিফ। ১০ জনের এই দলে আরও আছেন মাটি সিদ্দিকী, ফারজানা আফরিন, তিষা রেমা, নীলাঞ্জনা রহমান, আর জেড খান, অং অং, নয়ন বিশ্বাস, রুতবাহ ও শারমিন সুর। শিল্পীদের বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া। আলিফ মনে করেন, আন্তর্জাতিক ঘরানার নাচে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। নতুন এই দল নিয়ে নাচে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরাই হবে তাঁদের কাজ। দলটির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রতি ‘হলিউড’ শিরোনামে একটি নতুন ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মোফাসসাল আল আলিফ। ২০১৩ সালে মডার্ন ড্যান্স দিয়ে নৃত্যশিক্ষা শুরু করেন। পরে সৃজনশীল নাচ শেখেন এম আর ওয়াসেকের কাছে। যোগব্যায়াম, অ্যারিয়ালসহ নানা রকম নাচ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৮ সালে বৃত্তি পেয়ে ভারতের তেরেন্স লুইস ড্যান্স কোম্পানিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। পরে দলটির পারফরমার হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করেন।
আলিফের স্বপ্ন ছিল, ঢাকায় ফিরে নিজে একটি আন্তর্জাতিক মানের নাচের দল গড়বেন। তিনি বলেন, ‘কিন্তু সে রকম প্যাশনেট–ডেডিকেটেড ছেলেমেয়ে পাচ্ছিলাম না। ধীরে ধীরে কিছু ছেলেমেয়ে খুঁজে পাই, অবশেষে দল একটা গড়তে পেরেছি। সাক্ষাৎকারের সময় যাঁরা জানিয়েছেন যে সময় ও শ্রম দিতে পারবেন, তাঁরাই শুধু এ দলে যুক্ত হতে পেরেছেন। দলের সবার সঙ্গে সেভাবেই চুক্তি করেছি। নিজেরা পারফর্ম করার পাশাপাশি আমরা নতুনদের সমসাময়িক নাচ শেখাচ্ছি। আমাদের দেশের সংকট হচ্ছে, নাচকে পেশা হিসেবে নেওয়া কঠিন। মেধাবী ড্যান্সারদের অনেককেই শেষ পর্যন্ত নাচ ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু আমি দলের সবাইকে এমনভাবে প্রশিক্ষিত করব, যাতে কাজ তাদের পেছন পেছন ঘোরে।’ আলিফ জানান, নিয়মিত ইয়োগা, জ্যাজ, কনটেম্পরারি, বলিহপ, হাইহিলস, অ্যারিয়াল এবং অন্যান্য গ্লোবাল ড্যান্স স্টাইলের প্রশিক্ষণ দিয়ে দলের সদস্যদের চৌকস করে তোলা হবে।
সৃজনশীল নৃত্য দিয়ে শুরু করেছিলেন দলটির মহড়া পরিচালক মাটি সিদ্দিকী। তিনি জানালেন, নাচের বৈশ্বিক যে ঘরানাগুলো এখনো বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা পায়নি, সেগুলোকেই প্রতিষ্ঠা করতে চান তাঁরা। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের অনেক দিনের পরিকল্পনা। করোনার কারণে দলের আত্মপ্রকাশে কিছুটা দেরি হয়ে গেল। আশা করি, আমরা দারুণ কিছু করতে পারব, যা দেশের গ্লোবাল ড্যান্সে একটি মাইলফলক স্থাপন করবে।’
ইতিমধ্যে অনন্য মামুন পরিচালিত অমানুষ সিনেমায় কয়েকটি মিউজিক ভিডিও ও প্রচারণামূলক ভিডিওতে কোরিওগ্রাফি করেছেন আলিফ। ভারত–বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় ‘আই অ্যান্ড মাইসেলফ’ শিরোনামে একটি ড্যান্স কোরিওগ্রাফি ছিল আলিফের শুরুর দিকের কাজ। গুরু তেরেন্সের সঙ্গে ‘ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স’–এর মঞ্চেও নাচ করেছিলেন তিনি। সামনে তাঁদের অনেক স্বপ্ন।