‘এখন এফডিসিটা নিজের মনে হচ্ছে, আপন মনে হচ্ছে’
প্রায় চার বছর পর ১০৩ জন শিল্পী ফিরে পেলেন তাঁদের পূর্ণ সদস্যপদ। গতকাল বুধবার ছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন কমিটির কার্যকরী পরিষদের দ্বিতীয় সভা। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে হারানো সদস্যদের পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এখন থেকে সমিতির ভোটাধিকারসহ সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন তাঁরা।
সাবেক সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের সময়ে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ১৮৪ জন শিল্পী সমিতির সদস্যপদ হারান। সদস্যপদ ফিরে পেতে ২০২১ সালের শেষ দিকে এই শিল্পীরা উচ্চ আদালতে রিট করেন। শুনানির পর চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে আদালত ১০৩ জনকে তাঁদের সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়ার রায় দেন। সেই রায় কার্যকর হলো কাল।
এ ব্যাপারে সমিতির বর্তমান সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘১৮৪ জন সদস্য তাঁদের পদ হারিয়েছিলেন। তাঁদের ২০ জন মারা গেছেন। ১০৩ জনের পূর্ণ সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে। ঠিক এক সপ্তাহ আগে আদালতের রায় আসে। তখন হাতে সময় ছিল না বলে তাঁদের সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। নতুন কমিটির দ্বিতীয় মিটিংয়ের মূল অ্যাজেন্ডাই ছিল এটি, যেটা আজ শেষ করতে পারলাম।’
সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক সাইমন সাদিক বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল এটি। আমরা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারলাম। কারণ, সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সত্যিকারের শিল্পীদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছিল। আমরা শিল্পীদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। আমাদের নিজেদেরও ভালো লাগছে।’
সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে জানার পর বুধবার সন্ধ্যার ভুক্তভোগীদের অনেকে এফডিসিতে ছুটে আসেন। শিল্পী সমিতির সামনে জড়ো হয়ে আনন্দ–উল্লাস করতে থাকেন তাঁরা। একপর্যায়ে আনন্দ মিছিল বের করেন, একে–অপরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে তাঁদের কাউকে কাউকে কাঁদতেও দেখা যায়। সদস্যপদ হারানো মিজানুর রহমান জানান, ১৯৮০ সাল থেকে ছোট-বড় চরিত্রে প্রায় দুই হাজার ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। এখনো অভিনয় করে যাচ্ছেন। অথচ অন্যায়ভাবে বিশেষ এক ব্যক্তির প্ররোচনায় তাঁর সদস্যপদ কেড়ে নেওয়া হয়। মিজানুর বলেন, ‘পদ কেড়ে নিয়ে আমাকে বঞ্চিত করা হয়। করোনাকালীন অনেক কষ্ট হয়েছে। শিল্পী সমিতি থেকে অনেকেই অনেক কিছু পেয়েছেন, কিন্তু আমাদের কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। চাল, ডাল, তেল কিছুই পাইনি। এখন সদস্যপদ ফিরে পেয়ে শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি ফিরে পেলাম। এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কী আছে!’
‘গোয়ালিনী-বিনোদন বিচিত্রা’ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন নায়িকা সাদিয়া মির্জাও শিল্পী সমিতির সদস্যপদ হারিয়েছিলেন। এ পর্যন্ত ছয়টি ছবিতে প্রধান নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর নায়ক ছিলেন আমিন খান, ফেরদৌস, রুবেল, আলেকজান্ডার বো প্রমুখ। সদস্যপদ ফিরে পাওয়ার খবরে তিনিও এফডিসিতে ছুটে এসেছিলেন। সাদিয়া বলেন, ‘সদস্যপদ হারানোর পর মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। অপমানবোধ কাজ করত, শিল্পী হয়েও এফডিসিতে এলে বুকের মধ্যে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগত। শিল্পী সমিতিতে বসে আড্ডা দিতে পারতাম না, সব শিল্পীর সঙ্গে মিশতে পারতাম না। এখন এফডিসিটা নিজের মনে হচ্ছে, আপন মনে হচ্ছে।’