চট্টগ্রামে ‘দামপাড়া’র চিত্রগ্রহণ শুরু কাল
মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত এক পুলিশ কর্মকর্তার বীরত্ব ও আত্মত্যাগের ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হবে ‘দামপাড়া’ নামের একটি সিনেমা। তাঁর নাম এম শামসুল হক। কাল বৃহস্পতিবার নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইনস, বন্দরঘাট ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এ সিনেমার চিত্রায়ণ শুরুর কথা রয়েছে। এটি প্রযোজনা করছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। ছবির গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন আনন জামান। পরিচালনা করবেন শুদ্ধমান চৈতন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) শাহাদাত হুসেন প্রথম আলোকে বলেন, ছবিতে শামসুল হকের চরিত্রে অভিনয় করবেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। তাঁর স্ত্রী মাহমুদা হক চৌধুরীর ভূমিকায় আশনা হাবিব ভাবনা। চিত্রগ্রহণ শুরুর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ১২০ মিনিটের হবে এ সিনেমা।
পুলিশ কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেন বলেন, যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, পাকিস্তানিদের লক্ষ্যই ছিল চট্টগ্রামে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা শামসুল হককে হত্যা করা। অবর্ণনীয় নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁকে হত্যা করে পাকিস্তানিরা। শহীদ হন তিনি, তবে তাঁর লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে নিজ জীবন বাজি রেখে তিনি চট্টগ্রামের জনগণের সঙ্গে পুলিশকে একাত্ম করে এক জনযুদ্ধের সূচনা করেন। ২৮ মার্চের পর চট্টগ্রাম শহরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে চলে যায়। ১৭ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নিয়ে যায় এবং নির্মমভাবে হত্যা করে। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর লালদীঘিতে পুলিশ সদর দপ্তরে স্থাপন করা হয় কন্ট্রোল রুম।
কন্ট্রোল রুমে প্রতিনিয়ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা বৈঠকে মিলিত হতেন। তাঁরা পুলিশ সুপার শামসুল হকের সঙ্গে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতেন। ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম এলাকার সেনাবাহিনী, ইপিআর, পুলিশ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়। ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ চট্টগ্রাম দামপাড়া পুলিশ লাইনসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়।
পরে ২৯ মার্চ দিবাগত রাত চারটার সময় পুলিশ লাইনসের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিক থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী একযোগে আক্রমণ করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারী মেশিনগান ও থ্রি ইঞ্চি মর্টার ব্যবহার করে। যুদ্ধরত পুলিশ সদস্যরা পাহাড়ের ঢালে ও ট্রেঞ্চে অবস্থান করায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম দিকে বিশেষ বেগ পেতে হয়। পরে সকাল ছয়টার দিকে গোলাবারুদের অভাবে যুদ্ধরত পুলিশ সদস্যদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে এবং পুলিশ সদস্যদের একটি বড় অংশ শহীদ হয়।