রোববার দিনভর যা হলো এফডিসিতে
রোববার সকাল থেকে বিএফডিসি প্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ্য। মূল ফটকেও কৌতূহলী জনতার জটলা। কারণ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির আলোচিত নির্বাচনে বিজয়ীদের শপথ পাঠ হবে বিকেল পাঁচটায়। তা ছাড়া শনিবার আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থিতার ফলাফল বাতিলে জায়েদ খান আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন, শপথ পাঠের আগেই এমন খবর আসতে পারে, সেদিকেও কান ছিল সবার। অবশ্য ওই দিনই জায়েদ খানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, আপিল বোর্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন তিনি। সেই কারণে ধারণা করা হয়, দুপুরের মধ্যেই আদালত থেকে কোনো নির্দেশনায় শপথ পাঠ আটকে যেতে পারে।
বিকেল চারটায় শোনা গেল, শপথ অনুষ্ঠান হবে জহির রায়হান কালার ল্যাবে। তার কিছুক্ষণ পর শোনা গেল, মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্সে। কিন্তু ততক্ষণে গণমাধ্যমকর্মী, চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট মানুষের ভিড় এত বেড়ে গেল যে আয়োজকেরা ভড়কে গেলেন। শেষ পর্যন্ত শপথ আয়োজন করা হয় মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্সের সামনে খোলা আঙিনায়। আগেই শোনা গিয়েছিল, মিশা জায়েদ প্যানেলের কেউই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিট আগেই ভিড় ঠেলে সামনে এসে সবাইকে চমকে দেন মিশা-জায়েদ প্যানেলের পরাজিত সভাপতি প্রার্থী মিশা সওদাগর।
জানালেন, নবনির্বাচিত সভাপতিকে তিনি শপথবাক্য পাঠ করাবেন। শুনে উল্লাসে ফেটে পড়েন ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের সমর্থকেরা। চিত্রনায়ক আলমগীর বলেন, আর বিভেদ নয়। এখন থেকে চলচ্চিত্র চলবে একতার দিকে।
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নবনির্বাচিত সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনকে শপথবাক্য পাঠ করান বিদায়ী সভাপতি মিশা সওদাগর। শপথ পাঠের পর মিশা সওদাগর বলেন, ‘অনেকে ভেবেছেন হয়তো আমি অনুষ্ঠানে আসব না। আলমগীর ভাই আমাকে ডেকেছেন। কাঞ্চন ভাই আমাকে ফোন করেছেন। তাঁরা আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই। তা ছাড়া ইলিয়াস কাঞ্চন ভাই আমার প্রাণের মানুষ। তাঁর জয় তো আমি আগেই মেনে নিয়েছি। তাঁর জয়ে আমি খুশি হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, কাঞ্চন ভাই এই জায়গায় থাকলে চলচ্চিত্র অনেক দূর এগোবে। আমরা আর যেন পুরোনো কাসুন্দি না ঘাঁটি। কাঞ্চন ভাইকে অনুরোধ করব, ২১ জনকেই সঙ্গে নিয়ে তিনি যেন চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করে যান
আমি মিশাকে এখানে আসতে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করেছিলাম। এসেছে সে। এটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। যাঁরা আসেননি, তাঁরা হয়তো রাগ করে আছেন। আশা করব শিল্পীদের স্বার্থে সব ভেদাভেদ ভুলে এখানে আসবেন সবাই।
এরপর মিশা-জায়েদ প্যানেলের একজনসহ কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের সবাইকে শপথবাক্য পাঠ করান ইলিয়াস কাঞ্চন। অন্যরা না এলেও, মিশা-জায়েদ প্যানেলের কার্যকরী পরিষদের সদস্য নাদের খানকে অনুষ্ঠানে দেখা গেছে।
শপথ অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠান শুরু হয় শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে। ইলিয়াস কাঞ্চনকে সভাপতির চেয়ারে বসিয়ে তাঁর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন মিশা সওদাগর। সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে নিপুণকে বসিয়ে দেন কাঞ্চন। এ সময়ে সহসাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী সাইমন সাদিক বলেন, ‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য দুটি নতুন চেয়ার আনা হয়েছে, আপনারা যদি অনুমতি দেন, তাহলে ভেতরে আনতে পারি?’
‘মিশা ভাই আমার বড় ভাইয়ের মতো ছিলেন, থাকবেন। আমরা আগেই বলেছিলাম, সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করব। সেটা যেন পারি আমরা। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’
এদিকে সভাপতির চেয়ারে বসে তাৎক্ষণিক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমি মিশাকে এখানে আসতে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করেছিলাম। এসেছে সে। এটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। যাঁরা আসেননি, তাঁরা হয়তো রাগ করে আছেন। আশা করব শিল্পীদের স্বার্থে সব ভেদাভেদ ভুলে এখানে আসবেন সবাই। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।’ নিপুণ বলেন, ‘মিশা ভাই আমার বড় ভাইয়ের মতো ছিলেন, থাকবেন। আমরা আগেই বলেছিলাম, সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করব। সেটা যেন পারি আমরা। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’
শপথ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের বিজয়ী প্রার্থী ফেরদৌস, অমিত হাসান, শাহনুর, কেয়া প্রমুখ। তবে শুটিং থাকায় এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি সংস্কৃতি ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক পদে বিজয়ী ইমন।