বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ‘রেহানা’
পুরস্কার পাওয়ার সব সম্ভাবনা রয়েছে
কানে মাত্রই দেখানো হয়েছে রেহানা। এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক একাধিক গণমাধ্যমে শুরু হয়ে গেছে রেহানা নিয়ে আলোচনা। তুলে ধরা হল আলোচনাগুলোর সারসংক্ষেপ।
‘টাইটেলেই আছে সিনেমার প্রধান চরিত্রের পুরো নাম—ডা. রেহানা মরিয়ম নুর। কিন্তু নামটার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য শেষ শটের আগে টের পাওয়া যায় না,’ এভাবেই শুরু করেছেন মার্কিন পত্রিকা হলিউড রিপোর্টার–এর ডেব্রা ইয়াং। ঘটনাচক্রে শিক্ষক কর্তৃক এক শিক্ষার্থীর যৌন হয়রানির ঘটনা দেখে ফেলে এই তরুণ সহকারী অধ্যাপক। ক্ষুধার্ত কুকুর যেমন করে হাড়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তেমনি করে সে তার পেছনে লাগে। আবদুল্লাহ মোহম্মদ সাদের এই সিনেমাটি কেবল ভারসাম্যহীন এক নারীর মনমানসিকতার রক্ত জল করা প্রতিকৃতিই নয়, পাশাপাশি এটি নিজের নীতিতে অনড় এক নারীর প্রতি তর্পণ। বাঁধন অসাধারণ নিবিড়তার সঙ্গে চরিত্রটিকে রূপায়িত করেছেন। রেহানার পরিধেয় সাদা ওড়না যেন তার অন্তর্নিহিত বিশুদ্ধতাকেই পরিস্ফুট করে। সিনেমাটির দ্বিতীয়ার্ধ নারীর অবদমন, উদ্বেগ আর সহিংসতার এক রুদ্ধশ্বাস যাত্রা।
‘রেহানা’ চরিত্রের ওপর জোর দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সাময়িকী ভ্যারাইটি। মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেহানাকে অনুসরণ করে এই ছবি। একাধারে শিক্ষক, ডাক্তার, বোন, কন্যা, মেয়ে ও মায়ের জটিল ভূমিকা তাকে পালন করতে হয়। একদিন কাঁদতে কাঁদতে একটা মেয়েকে সে এক অধ্যাপকের ঘর থেক বেরিয়ে আসতে দেখে। এই ঘটনার অভিঘাতে রেহানার জীবন বেসামাল হয়ে পড়ে। এর মধ্যেই স্কুল থেকে অভিযোগ আসে তার মেয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করছে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের এই পাগলামি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় রেহানা, তার ছাত্র আর মেয়ের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সে সর্বস্ব বাজি ধরে।
ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, নারী হয়ে রেহানা একাই তার ছয় বছরের মেয়ে এবং তার এক শিক্ষার্থীর পক্ষে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যায়। সিনেমাটির ১৬ জুলাই শেষ দিনে পুরস্কার জয়ের সব রকম সম্ভাবনা আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ক্রিন ডেইলির প্রতিবেদক জোনাথন রমনি লিখেছেন, চরিত্রের সঙ্গে সেটে থাকা ক্যামেরার কাজে নিশ্চিতভাবেই ডার্ডেন ভাইদের অনুরণন টের পাওয়া যায়, তবে সাদের নিজস্ব সম্পাদনারীতি এটাকে আরও আসন্নতা দিয়েছে। ...সত্য এবং এই সত্য প্রতিষ্ঠার সমস্যা, বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানের বিধিবদ্ধ কাঠামোর মধ্যে সত্য প্রতিষ্ঠার সমস্যা নিয়ে নিয়ে প্রশ্ন তোলে এই ছবি। রেহানা নিজেও তার ছাত্র এবং মেয়ের সঙ্গে বিবাদী সম্পর্কের কারণে নৈতিক অণুবীক্ষণের তলায় আসে।
‘সাদের প্রথম চলচ্চিত্রের মতো এটাই একটা চরিত্রনির্ভর চলচ্চিত্র। প্রধান চরিত্রে অসাধারণ নিবিড় অভিনয় করেছেন মডেল ও অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন।’ লিখেছে ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর ডটকম।
ফ্রান্সের মেজ পত্রিকা লিখেছে, ‘এমন হুট করে ছবিটা শেষ হয়ে যায় যে আমাদের কাছে রীতিমতো হতাশাব্যঞ্জক লাগে। তারপরও পরিচালকের জন্য এটা বিরাট এক সাফল্য। প্রথম বাঙালি হিসেবে আঁ সার্তেঁ রিগায় নির্বাচিত হয়েছে তাঁর ছবি।’