ঈদের অন্যতম বড় আনন্দ বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে প্রেক্ষাগৃহে নতুন সিনেমা দেখা। সারা বছর যাঁরা হলমুখী হন না, এমন দর্শকেরাও ঈদের সময় প্রেক্ষাগৃহে ঢুঁ মারেন। এই ঈদে দেশের দর্শকদের জন্য প্রস্তুত চারটি ছবি, গলুই, শান, বিদ্রোহী ও বড্ড ভালোবাসি। এই চার সিনেমার জন্য নিয়মিত প্রেক্ষাগৃহগুলোর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বন্ধ হলও খুলছে। দর্শকদের স্বাগত জানাতে এসব হলে চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা। তবে এ চার ছবি ঘিরে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন জানিয়েছেন, বর্তমানে চালু রয়েছে প্রায় ৭০টি। অনিয়মিত হল ও বন্ধ মিলিয়ে অনেকগুলো প্রেক্ষাগৃহ ঈদুল ফিতরে খুলছে, সব মিলিয়ে এক শ সত্তরের কাছাকাছি। ঈদের চারটি ছবিই দেখা যাবে বেশির ভাগ হলে। অল্প কয়েকটি হলে পুরোনো সিনেমা চলবে। ময়মনসিংহের ছায়াবাণী, মোক্তারপুরের পান্নাসহ দু-এক বছর বন্ধ আছে, এ রকম ৩০ থেকে ৪০টি প্রেক্ষাগৃহ খুলছে এবারের ঈদে।
ঈদের চার সিনেমার তিনটিই বড় বাজেটের। তাই হল বুকিং নিয়েও রয়েছে প্রতিযোগিতা। তিনটি ছবির দুটি শাকিব খানের। তাঁর ভক্তসংখ্যা বেশি বলে হল বুকিংয়ে শাকিবের ছবি এগিয়ে। তবে সবচেয়ে বেশি বাজেটের ছবি শানও বুকিংয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। ছবিগুলোর প্রযোজক পরিবেশক সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে হলসংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে আছে শাহিন সুমনের বিদ্রোহী। ঢাকার ব্লকবাস্টার সিনেমাস, চিত্রামহল, নিউ গুলশান, সৈনিক ক্লাব, বিজিবিসহ ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহের পূরবী, রংপুরের শাপলা, বরিশালের অভিরুচি, খুলনার সংগীতা, চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেসসহ ১০০ প্রেক্ষাগৃহে বুকিং সম্পন্ন করেছে ছবিটি। পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়ার ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১০০টি হল পেয়েছি আমরা। সিনেপ্লেক্স ছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি বিভাগীয় শহরের বড় হলে মুক্তি পাচ্ছে আমাদের ছবি।’
শাকিব খানের আরেক ছবি এস এ হক অলীক পরিচালিত গলুই ঢাকার সব মাল্টিপ্লেক্সসহ অনেক জেলার ছোট-বড় ২৯টি হলে মুক্তি পাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্সের সব কটি শাখা, যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাস, লায়ন সিনেমাস, চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিন, সাভার সেনানিবাস, পাবনার রূপকথা ইত্যাদি। পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান টিওটির ব্যবস্থাপক মঞ্জুর রহমান বলেন, ‘২৯টি হল পেয়েছি আমরা। আর ১টা হল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
এম রাহীম পরিচালিত শান সিনেমাটি ঢাকাসহ ঢাকার বাইরের বড় বড় হল বুক করেছে। পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া তাদের ফেসবুক পেজে ৩৮টি হলের তালিকা প্রকাশ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সের সব কটি শাখা, শ্যামলী সিনেপ্লেক্স, সনি সিনেপ্লেক্স, যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাস, মধুমিতা, সিলভার স্ক্রিন চট্টগ্রাম, মধুবন সিনেপ্লেক্স বগুড়া, বর্ষা জয়দেবপুর, নিউ মেট্রো নারায়ণগঞ্জ, শঙ্খ খুলনা, মনিহার যশোর ইত্যাদি।
এদিকে জুয়েল ফারসী পরিচালিত বড্ড ভালোবাসি ছবিটি এখন পর্যন্ত পেয়েছে একটি হল, ব্লকবাস্টার সিনেমাস। ছবির নায়িকা রোজ নিপা নিজেই ছবিটির প্রযোজক। তিনি বলেন, ‘এর আগে আমাদের ১৮টি হল মৌখিকভাবে চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু পরে হলগুলো হাতছাড়া হয়ে গেছে। আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এই ঈদে একটা হল পেলেও ছবি মুক্তি দেব। ব্লকবাস্টার চূড়ান্ত হয়েছে। ঈদের পর অনেকগুলো হলে মুক্তি দেব।’ হল হাতছাড়া হওয়ায় কাউকে দোষ দিতে চান না এই প্রযোজক। তিনি বলেন, ‘আমার ছবি না পেলেও ঈদে আরও তিনটি ছবি অনেকগুলো হলে মুক্তি পাচ্ছে। ছবিগুলো ব্যবসাসফল হোক সেই প্রত্যাশা করি। একজন প্রযোজক হিসেবে সব ছবিই আমার সন্তানের মতো।’
চলচ্চিত্রাঙ্গনে বেশ কিছুদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল একটা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ঈদের ছবির হলবুকিং চলছে। কোনো কোনো জায়গায় প্রভাব বিস্তারের খবরও শোনা গেছে। একদিকে ঈদ, অন্যদিকে ছবিগুলো বড় বাজেটের। হলসংখ্যা কম হওয়ায় এমনটি ঘটছে বলে মনে করছেন অনেকে। জানা গেছে, কয়েক দিন আগে নারায়ণগঞ্জের নিউ মেট্রো, ভৈরবের মধুমতি ও ময়মনসিংহের পূরবী হলে গলুইয়ের মুক্তি চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু সোমবার জানা গেল নিউ মেট্রো ও ভৈরবের মধুমতিতে শান এবং ময়মনসিংহের পূরবী হলে বিদ্রোহী মুক্তি পাবে। এ ছাড়া দেশের আরও বেশ কয়েকটি হলে এমন ঘটনা ঘটেছে। যদিও এসব পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন ছবিগুলোর প্রযোজক ও পরিবেশকেরা। মঞ্জুর রহমান বলেন, ‘ওই তিন হলে গলুই মুক্তির কথা হয়েছিল ঠিক আছে। কিন্তু আমরা তো রসিদই কাটিনি। রসিদ কাটলে হয়তো বলা যেত যে অন্যায় হয়েছে। এখন যাঁর হল, তিনি যদি এক ছবি বাদ দিয়ে অন্য ছবি চালান, আমার কিছুই বলার নেই।’ এ প্রসঙ্গে পূরবী হলের ব্যবস্থাপক হোসেন আলী বলেন, ‘গলুই আমরা ঈদের পর চালাব। অনেক দিন ধরেই লোকসানে আছি। দেখলাম গলুই সামাজিক ছবি। এ ধরনের ছবির দর্শকদের একটা অংশ মহিলা, যাঁরা এখন আর তেমন হলে আসেন না। সিনেমার দর্শক এখন তরুণেরা। তাঁদের কাছে অ্যাকশন ছবিই বেশি পছন্দ।’
তবে প্রভাব বিস্তার করে নিউ মেট্রো ও মধুমতি হল থেকে গলুই-এর পরিবর্তে শান মুক্তির বিষয়টি অস্বীকার করে ছবির পরিচালক এম রাহিম বলেন, ‘আমরাও এমনটি শুনছি। এটা বানোয়াট কথা। ঈদের ছবির ট্রেলার, টিজার, গানগুলোর দর্শক আলোচনা দেখেই শেষ পর্যন্ত ছবি চূড়ান্ত করেন হলমালিকেরা। আর আমরা জানিও না, আগে কোন ছবি ওই দুটি হলে প্রদর্শনের কথা ছিল।’
বেশ আগেই শাকিব খানের সঙ্গে শাপলা মিডিয়ার দূরত্ব তৈরি হয়েছে। গলুইয়ের প্রচারে থাকলেও সেলিম খানের ঘরের বিদ্রোহী ছবির প্রচারে নেই শাকিব খান। এ ছাড়া আসন্ন প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নির্বাচন ঘিরে গলুই ছবির প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরুর সঙ্গে ভেতরে-ভেতরে দ্বন্দ্ব চলছে সেলিম খানের। শোনা গেছে, গলুই ছবি যাতে হল কম পায়, সে কারণে বুকিং মানি না নিয়েই বিদ্রোহী বিভিন্ন হলে ছেড়ে দিচ্ছে শাপলা মিডিয়া। বিষয়টি অস্বীকার করে রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা টাকা ছাড়া ছবি দিচ্ছি না। বরং বিদ্রোহীর ক্ষতি করার জন্য শান ও গলুই ছবি দুটিই টাকা ছাড়া হলে হলে দিয়ে দিচ্ছে।’ তবে মঞ্জুর রহমান বলেন, ‘গলুই ছবির প্রযোজকের কড়া নির্দেশ, কম টাকায় কোনো হলেই ছবি মুক্তি দেবেন না তিনি। ছবি ভালো হলে ঈদের পর নিজ তাগিদেই হলগুলো ছবি নিতে যোগাযোগ করবে।’