বিনোদনজগতে নির্বাচনী হাওয়া
কয়েক বছর ধরে সাংগঠনিকভাবেও তৎপর চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটকের অভিনয়শিল্পীরা। দুই সংগঠনের নেতারা মনে করছেন, শিল্পীদের অধিকার আদায় এবং শুটিংয়ে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফেরাতে সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই দেখা গেছে, বিনোদন অঙ্গনে শিল্পীদের নির্বাচন ঘিরে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। এবার দুই সংগঠনের একই দিনে নির্বাচনের ঘোষণা আসায় সবাই বলছেন, চলচ্চিত্র ও নাটক অঙ্গনে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। অন্যদিকে কারও মতে, প্রকৃত শিল্পীরা নেতৃত্বে না থাকায় এসব সংগঠন ঘিরে একধরনের রেষারেষি তৈরি হয়। শিল্পীদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়, যা বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে খবর আকারে প্রকাশ পায়। এতে শিল্পীরাও বিব্রত হন।
দুই বছর মেয়াদ শেষে আবারও চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন নাটকের অভিনয়শিল্পীরা নির্বাচন নিয়ে তৎপরতা শুরু করেছেন। ২৮ জানুয়ারি দুই অঙ্গনের শিল্পীরা সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব বাছাই করবেন। এদিন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনের ব্যাপারটি কয়েক মাস আগেই নিশ্চিত হয়। সভাপতি প্রার্থী কারা হচ্ছেন, তা–ও প্রায় চূড়ান্ত। কিন্তু চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে কারা সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন, তা নিয়ে এত দিন ধোঁয়াশা ছিল। বর্তমান কমিটির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের আবারও নির্বাচন করার ব্যাপারটি কদিন আগে নিশ্চিত হয়। অন্য প্যানেল থেকে ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানের সভাপতি হওয়ার কথা চাউর হলেও শেষ মুহূর্তে তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের কারণে নির্বাচন করার ব্যাপারটি অনিশ্চিত হয়। সাধারণ সম্পাদক পদে চিত্রনায়িকা নিপুণের সঙ্গে কে প্রার্থী হচ্ছেন, তা নিয়েই সবার মাথাব্যাথা ছিল। শেষ পর্যন্ত সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় গত বৃহস্পতিবার রাতে। এদিন ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, তিনি এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদের জন্য লড়বেন।
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। সে সময় সভাপতি ছিলেন আহমেদ শরীফ। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমি সভাপতি পদে নির্বাচন করছি। সবাই আমাকে ধরলেন, “না” করতে পারলাম না। চেষ্টা করে দেখি, এখানকার মানুষদের জন্য কিছু করা যায় কি না। যে জায়গা থেকে আমি ইলিয়াস কাঞ্চন হয়েছি, নির্বাচিত হয়ে সেই জায়গার মানুষদের জন্য কিছু একটা করতে পারলে নিজের কাছেই ভালো লাগবে।’
২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ১৭তম নির্বাচন। দুই প্যানেলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম চূড়ান্ত না হলেও দুই–তিন দিনের মধ্যে দুই প্যানেলের অন্য সদস্যদের নামও জানা যাবে, বলছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা। মিশা সওদাগর বলেন, ‘আবার সভাপতি পদে নির্বাচন করব। নির্বাচন উপলক্ষে এফডিসিতে মিটিংও করেছি।’
নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল ৭ জানুয়ারি বিএফডিসিতে সমিতির সদস্যদের উপস্থিতিতে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বিদায়ী কমিটির বার্ষিক আয়–ব্যয়সহ নানা কাজের হিসাব তুলে ধরা হয়। এবার নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন পীরজাদা হারুন।
কাকতালীয়ভাবে একই দিনে দুই সংগঠনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়াকে ঘিরে ইতিমধ্যে জমে উঠেছে বিনোদনপাড়া। নানান আড্ডায় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে। এমনকি শুটিং স্পটেও অভিনয়শিল্পীরা নির্বাচন নিয়ে নানা রকম আলোচনা করছেন। সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও শুরু হয়েছে কানাঘুষা। অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনের জন্য গঠিত হয়েছে তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন ও দুই সদস্যের আপিল বোর্ড। ৬ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার খাইরুল আলম সবুজ জানান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ভোট গ্রহণ চলবে। ভোটাররা তাঁদের ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটির দায়িত্বশীল ব্যক্তি নির্বাচন করবেন।’
প্রাথমিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে অভিনয় শিল্পী সংঘের সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ১০০। পূর্ণাঙ্গ ৯০০ সদস্যের মধ্যে ৬০ জনের বেশি মারা গেছেন। বেশ কয়েকজন থাকেন দেশের বাইরে। সবকিছুর পর ভোটাধিকার রয়েছে ৭৪৮ জনের। অভিনয় শিল্পী সংঘ সূত্রে এমনটাই জানা গেছে। এবার শোনা যাচ্ছে সভাপতি হিসেবে আবারও প্রার্থী হতে পারেন শহীদুজ্জামান সেলিম। গতবারের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিমেরও সভাপতি প্রার্থী হওয়ার জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে সেলিম ও নাসিম দুজনের কেউই এটা নিশ্চিত করেননি। শুধু এটুকু বলেন, ১০ জানুয়ারির পর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারবেন।