সেদিন আহমেদ শরীফ ধরে নিয়েছিলেন আর জীবিত ফিরবেন না
‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’র জন্য অভিনেতা খুঁজছিলেন সুভাষ দত্ত। নির্মাতা শিবলী সাদিক তখন সুভাষ দত্তের সহকারী পরিচালক। শিবলী সাদিকই তাঁকে আহমেদ শরীফের খোঁজ দেন। শৈশব ও কৈশোরে মঞ্চে অভিনয় করতেন আহমেদ শরীফ। তবে সিনেমায় অভিনয়ের কথা কখনো ভাবেননি। শিবলী সাদিকের কথায় সুভাষ দত্তের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে পাল্টে যায় আহমেদ শরীফের জীবন। আর পেছনে তাকাতে হয়নি। দেশের চলচ্চিত্রে প্রায় পাঁচ দশক পার করলেন আহমেদ শরীফ। আজ তাঁর জন্মদিন।
কুষ্টিয়ায় আহমেদ শরীফের বাবার একটি সিনেমা হল ছিল। সে জন্য অনেক সময় ঢাকা থেকে সিনেমার রিল নিয়ে তাঁকে যাওয়া-আসা করতে হতো। শিবলী সাদিকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। শিবলী সাদিকই তাঁকে সুভাষ দত্তের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। পরে সুভাষ দত্তের বাসায় যান। একটি চিত্রনাট্যের ২ লাইন পড়েই পাস হন আহমেদ শরীফ।
এখনো সুভাষ দত্তকে গুরু মানেন আহমেদ শরীফ। এই নির্মাতার কারণেই তিনি অভিনেতা হতে পেরেছেন। গুণী এই নির্মাতার ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’ সিনেমা দিয়ে ১৯৭২ সালে তাঁর অভিনয় শুরু। টানা ২০১৫ সাল পর্যন্ত অভিনয় করেন। এখন তাঁকে অভিনয়ে দেখা যায় না।
‘গাঙচিল’ নামের একটি সিনেমার বড় অংশের শুটিং হয়েছিল মাছ ধরার জাহাজে। সেদিন তাঁরা তীর থেকে ১০ কিলোমিটার গভীর সমুদ্রে যান। ছবিতে তিনি ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। দৃশ্যটা ছিল, তাঁকে জাহাজ থেকে এক কর্মচারী ফেলে দেবেন। নির্মাতা ডামি ব্যবহার করতে চাইলেও আহমেদ শরীফ নিজেই দৃশ্যটিতে অভিনয় করেন। শুটিংয়ের সময় ওপর থেকে সমুদ্রে পরে যান তিনি। এতটাই গভীরে চলে যান যে ওপরে উঠতে পারছিলেন না। সেদিন আহমেদ শরীফ ধরে নিয়েছিলেন, তিনি আর জীবিত ফিরবেন না। শুটিং ইউনিটের সবাই ভেবেছিলেন, বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘ সময় পর পানিতে ভেসে ওঠেন এই অভিনেতা।
বিভিন্ন সময়ে দেশে ও বিদেশে ভক্তদের কাছ থেকে শুনতে হয়, মিশা সওদাগর তাঁর ছেলে। আদতে তাঁরা সম্পর্কিত নন। তবে মিশা তাঁকে বাবা বলেই ডাকেন।
সিনেমায় অভিনয় করা নিয়ে আহমেদ শরীফের পরিবারের কোনো আপত্তি ছিল না। তবে তাঁর বাবা সব সময় বলতেন, ‘নায়ক হও আর ভিলেন হও, তোমাকে সেরা হতে হবে।’
স্ত্রী মেহেরুন আহমেদ ভালো গান গাইতেন। সেই গান শুনেই তাঁর প্রেম পড়েছিলেন আহমেদ শরীফ। তাঁরা ছিলেন চাচাতো ভাই-বোন। তাঁদের মৌরী নামের একটি মেয়ে আছে।
তাঁর পছন্দের সংলাপ ছিল, ‘টাইম উইল সে হোয়াট টু ডু, হোয়াট নট টু ডু।’ ‘নেপালী মেয়ে’ সিনেমায় বারবার এ সংলাপ বলতে হয়েছে। পরে দর্শক দীর্ঘদিন তাঁকে এ সংলাপ শোনাতেন।