সংলাপ বলার সময় হাতটা নিয়ে কী করবেন, কোথায় রাখবেন, কীভাবে রাখবেন—এই সব অতি সাধারণ টোটকা কৌশল না জানার কারণে অভিনয়ে নেমে নিয়মিতই নাকাল হন নবীন শিল্পীরা। এঁদের বেশির ভাগই থিয়েটার বা অভিনয়ের শিক্ষার্থী নন। ফলে শিখে আসার সুযোগ তাঁদের হয়নি। এ রকম শিল্পীর দরকার প্রশিক্ষণ। আর কে না জানে, পারফরমিং আর্টে প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের বিকল্প নেই।
যাঁরা গান করেন, শৈশব থেকে তাঁদের সারগাম সাধতে হয়। নাচের ক্ষেত্রে গুরুর কাছ থেকে নিয়মিত নিতে হয় তালিম। অভিনয়ের ক্ষেত্রে ঢাকায় এ ধরনের চর্চার সুযোগ কম। এই ঘাটতি সামান্য হলেও মেটাবে ইনডিপেনডেন্ট থিয়েটার কালেক্টিভ, স্পর্ধার অভিনয় কর্মশালা। এটির মুখ্য প্রশিক্ষক নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ। কর্মশালায় যোগ দিয়েছেন মঞ্চ, টেলিভিশন ও সিনেমায় নিয়মিত কাজ করা একঝাঁক তরুণ অভিনয়শিল্পী। শিখে কাজ করতে নামার চর্চা যেখানে ক্রমশ কমছিল, দক্ষতা বাড়ানোর আগ্রহ যখন ছিলই না, তখন পেশাজীবনের মাঝখানে এসে এ রকম উদ্যোগে তরুণদের অংশগ্রহণ আশা জাগায়।
কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলেন অভিনয়শিল্পী মৌটুসী বিশ্বাস। তিনি বললেন, ‘সাত দিনের একটি কর্মশালা করে হয়তো অত কিছু শেখা যায় না। কিন্তু অনুশীলনের গুরুত্বটা তো টের পাওয়া যায়। আমরা যারা থিয়েটার করিনি, নাটক–অভিনয়ের একাডেমিক শিক্ষার্থী নই, তাদের জন্য এ রকম কর্মশালা ভীষণ জরুরি। আর জামিল স্যারের মতো ব্যক্তিত্বের এত দিনের চর্চা, জীবনবোধ, দর্শন আমাদের ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছে।’
কর্মশালার আরেক অংশগ্রহণকারী অভিনয়শিল্পী নাজিফা তুষি। তিনি জানালেন, রিজওয়ান দেখার পর থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন, আবার কবে জামিল আহমেদের কর্মশালার সুযোগ আসে। এত বড় নির্দেশকের কাছ থেকে সরাসরি শেখার সুযোগ তিনি হাতছাড়া করতে চাননি। তুষি বলেন, ‘স্যার আমাদের শিখিয়েছেন, শুধু নিজের চরিত্র ও সংলাপ নিয়ে ভাবলেই চলবে না, একটা নাটক বা সিনেমার বাদবাকি চরিত্রগুলোর সঙ্গে ঐক্য গড়ে তুলতে হয়, বিনিময় করতে হয়, তাহলেই সামগ্রিকভাবে কাজটি ভালো হয়। এ ছাড়া স্যার অভিনয়ের বেশ কিছু মেথড দেখিয়েছেন। সচেতনভাবে সেসবের চর্চা চালিয়ে গেলে কাজের ওপর সেগুলোর প্রভাব পড়বেই।’
স্পর্ধার সমন্বয়ক মহসিনা আক্তার জানালেন, এ কর্মশালা একটি চলমান প্রক্রিয়া। অনেক দিন ধরেই তাঁরা কর্মশালার আয়োজন করে আসছেন। তরুণদের সাড়াও অভাবনীয়। কখনো কখনো একই কর্মশালা একাধিকবারও আয়োজন করতে হয়। তিনি বলেন, ‘একবার ২০টি আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছিল ১৬০টি। যারা শিখতে চায়, তাদের হতাশ করা ঠিক হবে না, ভেবেই আমরা সেবার একই কর্মশালা চারবার করেছিলাম। এবারও অভিনয়ের কর্মশালাটি দুবার করতে হয়েছে।’ কর্মশালার গুরুত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেকেই প্রশিক্ষণ ছাড়াই কাজ শুরু করে দেন। তবে ভালো কাজের জন্য প্রশিক্ষণ খুব জরুরি। সেটা মাথায় রেখেই এই আয়োজন। বিভিন্ন সময় নতুন প্রোডাকশনের জন্য আমাদের ট্রেইন্ড অভিনেতা দরকার হয়। আমরা মনে করি, এই কর্মশালাগুলো আমাদের ভবিষ্যতের পুঁজি। তা ছাড়া যাঁরা শিখতে আসছেন, কোথাও না কোথাও তাঁরাও ছোট ছোট অবদান রাখবেনই।’