মুক্তিযুদ্ধের সময় এক রাতে একটি গ্রামের নারী-পুরুষেরা এসেছেন মাতবরের কাছে। তাদের চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা। গত রাতেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মাতবরের সঙ্গে দেখা করেছেন জানিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর ভরসা রাখতে বলছেন উপস্থিত লোকজনকে। গ্রামবাসী সহজে আশ্বস্ত হতে পারেন না। সৈয়দ শামসুল হকের লেখা কালজয়ী নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’-এর পটভূমি এটি। আবদুল্লাহ আল-মামুন নির্দেশিত থিয়েটারের মুক্তিযুদ্ধের নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ অভিনয়ের ৪০ বছর পূর্তি হবে ২৫ নভেম্বর। চার দশক আগে এই দিনে মহিলা সমিতি মঞ্চে প্রথম অভিনীত হয়েছিল কালজয়ী এ কাব্যনাট্যটি।
২৫ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সেই মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে নাটকটির ১৭৪তম প্রদর্শনী হবে। শুরুতে থাকবে ৪০ বছর পূর্তির সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা।
প্রসঙ্গত, মঞ্চায়নের পরপরই এর রচনাশৈলী, বিষয়বস্তু ও প্রকাশনা সৌকর্যের জন্য দর্শকমহলে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয় নাটকটি। এক বছরের মধ্যে নিয়মিত অভিনয়ে বাংলাদেশে প্রথম সুবর্ণজয়ন্তী পালনের গৌরব অর্জন করে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’। আবদুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ জাকারিয়া, আবদুল কাদের, তারিক আনাম খান, মিতা চৌধুরী, তারানা হালিম, খায়রুল আলম সবুজ, আরিফুল হক প্রমুখের মতো প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা বিভিন্ন সময়ে এ নাটকে অভিনয় করেন।
এ যাবৎ নাটকটির ১৭৩টি প্রদর্শনী হয়েছে। একমাত্র ফেরদৌসী মজুমদারই নাটকের সব প্রদর্শনীতে অভিনয় করেছেন। নাটকের প্রথম প্রদর্শনীর কেরামত মওলা এখন আবার নিয়মিত অভিনয় করছেন।
১৯৮১ সালের ১০ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে আইটিআই আয়োজিত পঞ্চম তৃতীয় বিশ্ব নাট্যোৎসবে নাটকটির দুটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের বাইরে বহির্বিশ্বে এটি ছিল প্রথম কোনো বাংলাদেশের নাট্যদলের অভিনয় প্রদর্শন। ১৯৮৭ সালের ২৫ মার্চ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের পাদদেশে নাটকটির একটি অভিনয় বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। ১৯৯০ সালের ২৩ মার্চ নাটকটির শততম অভিনয় হয়।
যদিও মাঝে বছর দশেক নাটকটির অভিনয় হয়নি, বাংলাদেশের কোনো নাটক ৪০ বছর ধরে মঞ্চস্থ হয়নি। বিরতির পরে নতুন করে প্রযোজনায় নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী।
বর্তমানে এ নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন ফেরদৌসী মজুমদার, কেরামত মওলা, তোফা হোসেন, ত্রপা মজুমদার, মারুফ কবির, পরেশ আচার্য, সমর দেব, খুরশিদ আলম, নুরুল ইসলাম, রাশেদুল আওয়াল, জোয়ারদার সাইফ, তামান্না ইসলাম, রুনা লাইলা, তানভীর হোসেন সামদানী প্রমুখ। এঁদের বাইরে গত ৪০ বছরে প্রায় ৭০ জন অভিনেতা বিভিন্ন পর্যায়ে এ নাটকে অভিনয় করেছেন।