মানুষের ভেতরে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, কী হলো চরিত্রগুলোর সঙ্গে
স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকিতে ১৭ মার্চ মুক্তি পেল ডাইকিন নিবেদিত চরকি অরিজিনাল সিরিজ ‘নিখোঁজ’, পাওয়ারড বাই মাই ফুয়েল পাম্প। এটি পরিচালনা করেছেন তরুণ নির্মাতা রিহান রহমান। তিনি জানালেন এই নির্মাণ ও নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে।
প্রশ্ন :
‘নিখোঁজ’ দেখে কে কেমন প্রতিক্রিয়া জানালেন?
পজিটিভ ভাইব পাচ্ছি। গল্পটা সম্পর্কের, ভাই-বোনের সম্পর্কে কীভাবে গ্যাপ তৈরি হয়, সেই গল্প। আমার খুব ভালো লেগেছে যে মানুষ বলছে এটা খুব ‘স্ট্রং ফিমেল ক্যারেক্টার’। পর্দায় নারী চরিত্র দেখানো হয়—সাফার করছে। আমাদের এখানে একজন নারীকে কেন্দ্রে রেখে গল্পটা বলা হয়েছে। ওই চরিত্রকে যেভাবে লেখা হয়েছে, তার প্রতি কোনো সিমপ্যাথি তৈরি করার জন্য না। সে যেমন, ঠিক সেভাবেই তাকে তুলে ধরা হয়েছে। মানুষ তো কখনোই চূড়ান্ত ভালো বা চূড়ান্ত খারাপ হয় না। মানুষের চরিত্রের ভালো-মন্দের মাঝে যে গ্রে শেড, সেটাই আমরা দেখিয়েছি। বেশির ভাগ মানুষের সে জন্য ভালো লেগেছে।
প্রশ্ন :
আপনার সিনিয়র কয়েকজন পরিচালক বেশ প্রশংসা করেছেন দেখলাম।
আমি ভাবিনি যে সিনিয়ররা এটা দেখবেন, প্রতিক্রিয়া জানাবেন। তাঁরা যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, এর মানে হচ্ছে তাঁরা নতুনদের সাপোর্ট দিচ্ছেন। এটা অভাবনীয়। তাঁরা দেখেছেন এবং স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন, এটা আমার ভালো লেগেছে।
প্রশ্ন :
‘নিখোঁজ’-এর মতো গল্প নিয়ে কাজ করতে কোনো অস্বস্তি হয়নি?
আমি অন্যভাবে ব্যাপারটা ভাবিইনি। স্রেফ একজন বাবার হারিয়ে যাওয়া আর এর পরিণতি কী হয়, সেটা ভেবে গল্প লিখেছি। ব্যাপারটাকে পলিটিক্যালি ভাবিনি। রিলিজের পর দুই-এক জায়গা থেকে এ রকম কথা কানে এসেছে। কিন্তু লেখার সময়, বানানোর সময় বা এখনো আমার মাথায় এসব কাজ করছে না। এটা আসলে একটা ফ্যামিলির গল্প।
প্রশ্ন :
আপনি বিজ্ঞাপন বানাতেন। আর কী কী কাজ করেছিলেন?
একটি ওটিটির জন্য তিনটা শর্টফিল্ম বানিয়েছিলাম। ‘মাকড়শা’, ‘নিয়তি’ ও ‘প্রোমোশন’। এ ছাড়া নাটক বানিয়েছি, মিউজিক ভিডিও করেছি, ডকুমেন্টারি করেছি। মিউজিক ভিডিও করার ফাঁকে নাটক বানাতাম। আমার করা জন কবিরের ‘সুখি মানুষের কান্না’ গানটির জন্য চ্যানেল আইয়ের ওটিটি অ্যাওয়ার্ডসে মনোনয়নও পেয়েছিলাম। নিজেদের একটা অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সিকে দাঁড় করাতে নাটক বা ন্যারেটিভের কাজ থেকে মধ্যে বেশ কয়েক বছর দূরে ছিলাম। বিজ্ঞাপনেই বেশি ছিলাম। ন্যারেটিভে রেগুলার হওয়ার ইচ্ছা আছে। ইতিমধ্যে আরও একটি কাজ শুরু করে দিয়েছি।
প্রশ্ন :
আর ফিল্ম?
সব মেকারেরই তো ফিল্ম বানানোর স্বপ্ন থাকে। এ জন্যই সবাই শুরু করেন। আমারও আছে। একটা ফিল্ম অনেক বড় একটা রেসপনসিবিলিটি। আমি এখনো প্রস্তুতি নিচ্ছি। গত কয়েক বছর এক্সপেরিমেন্টাল গল্প বলার চেষ্টা শুরু হয়েছে। দর্শকদের কাছেও সেসব গল্পের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে। কোভিডে অনেকেই অনলাইনে নানা কিছু দেখেছেন। অডিয়েন্সের ভেতর ভিন্ন ধরনের কাজ দেখার মানসিকতাও তৈরি হয়েছে। আমরা মেকাররাও শিখছি। প্রস্তুতি নিচ্ছি।
প্রশ্ন :
ভারতে ‘আরআরআর’, হলিউডে ‘স্পাইডার-ম্যান’ চলছে। এ রকম এক সময়ের মেকার হিসেবে ঢাকায় বসে আপনি গল্প বানাচ্ছেন। সারা পৃথিবীর বাঙালি দেখবে আপনার কনটেন্ট, কোনো কোনোটা বিদেশিরাও দেখবেন। চাপ বোধ করেন?
আমাদের এ ধরনের চাপ বোধ করা উচিত। একটা ক্লিক করে অন্য কনটেন্টে চলে যেতে পারে মানুষ। মূল গেমটাই এখানে, যে বাইরের কনটেন্টের সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতা করতে পারি। বাজেটের দিক থেকে না হোক, চিন্তা, মেধার জায়গা থেকে, ভাবনার জায়গা থেকে যদি এগিয়ে থাকি, তাহলেই ষাট ভাগ এগিয়ে থাকা যায়। কনটেন্টে যদি ইন্টারেস্টিং আইডিয়া থাকে তাহলেই হলো। অনেকে মনে করেন, এতে কাজ করবে না, কিন্তু আইডিয়াও অনেক সময় এগিয়ে রাখে। আর এই প্রেশার পজিটিভ প্রেশার।
প্রশ্ন :
‘নিখোঁজ’ দেখে বন্ধু ও পরিবারের লোকেরা কী বললেন?
এখনো পরিবারের সবার সঙ্গে বসে দেখার সুযোগ পাইনি। ভয় পাচ্ছি ব্যাপারটা নিয়ে। কোনো কাজ পরিবারের সঙ্গে দেখা হয় না। কিন্তু যাঁরা বিচ্ছিন্নভাবে দেখেছেন, সবাই খুব ভালো কথা বলছেন। সবাই শেষ পর্যন্ত দেখেছেন। সবার মনেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, ভাবনায় নাড়া দিয়েছে, এটাই আমার জন্য বড় প্রাপ্তি। মানুষের ভেতরে একটা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, কী হলো চরিত্রগুলোর সঙ্গে! তাঁরা এনগেজ হয়ে যাচ্ছেন। এভাবে এনগেজ করতে না পারলে মানুষ কনটেন্ট থেকে সরে যেতে পারেন। ‘নিখোঁজ’ এনগেজ করছে।
প্রশ্ন :
নির্মাণ বিষয়ে আপনার প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ আছে, নাকি কাজ করতে করতেই শিখেছেন?
সে রকম প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ নিইনি। তারেক মাসুদ স্যারের বেশ কিছু ওয়ার্কশপ করেছিলাম। আর প্রায়ই কলকাতায় যেতাম, আমার পরিচিত কিছু মেকার আছেন সেখানে। তাঁদের সঙ্গে থাকতাম, দেখতাম, তাঁদের হেল্প করতাম। বাকিটা করতে করতে শেখা।
প্রশ্ন :
ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নিতে পারছেন?
কাজ পাওয়া এই ইন্ডাস্ট্রিতে সহজ নয়। আমরা এমন একটা ইন্ডাস্ট্রিতে আছি যে এখানে আমার মতো বহু মেকার আছেন। তাঁদের কেউ কেউ আমার চেয়ে বেটার, স্কিলড কিন্তু তাঁদের অনেকেই কাজ পাচ্ছে না। সেই জায়গা থেকে মেকারদের স্ট্রাগল একই রকম।
প্রশ্ন :
চরকির সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
দারুণ। চরকির সিওও থেকে ক্রিয়েটিভ টিম, খুব ক্রিয়েটিভ মাইন্ডেড। তারা একজন ডিরেক্টর বা রাইটারের জায়গাকে খুব রেসপেক্ট করে। চরকি তার জায়গা থেকে খুব ক্রিয়েটিভলি অ্যাপ্রোচ করে। এ কারণেই এই প্ল্যাটফর্মের কাজ সাড়াও ফেলে, একটু ডিফারেন্ট হয়। কারণ, চরকি শতভাগ ফ্রিডমে বিশ্বাস করে। আপনি যে গল্পটা বলতে চান, তারা শুনতে রাজি। একজন রাইটারের জন্য এটা অনেক বড় ফ্রিডম। ওই ফ্রিডমটা আমার ছিল যে আমি আমার গল্পটা বলতে পারব।