স্ক্রিপ্ট দেখেই কিন্তু পরিচালকের মানও বোঝা যায়

কক্সবাজার থেকে পিকচার ম্যান নামে একটি ধারাবাহিক নাটকের শুটিং শেষ করে ঢাকায় ফিরেছেন চঞ্চল চৌধুরী। এদিকে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রচার শুরু হয়েছে তাঁর অভিনীত নতুন একটি বিজ্ঞাপনচিত্র। ১৭ বছর আগে এই প্রতিষ্ঠানেরই বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান। এসব নিয়েই বুধবার সন্ধ্যায় কথা হলো তাঁর সঙ্গে

চঞ্চল চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

কক্সবাজার থেকে ফিরলেন কবে?

মঙ্গলবার রাতে ফিরেছি। সেখানে ঈদের সাত পর্বের একটি নাটকের শুটিং করেছি। বৃন্দাবন দাদার লেখা এই নাটকের পরিচালক নিয়াজ মাহবুব। এই নাটকের গল্পটা সি বিচে যাঁরা ছবি তোলেন, তাঁদের নিয়ে। এখানে আমি ফটোগ্রাফার চরিত্রে অভিনয় করেছি। শার্টারে ক্লিক করলে তো আর ছবি হয় না। ছবি তোলার জন্য শিল্পী হতে হয়। এ বিষয় যেমন উঠে এসেছে, তেমনি এসব ফটোগ্রাফারের যে এখন দুর্দিন, সেটাও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

প্রশ্ন :

এই সময়ে এমন গল্প কেন প্রাসঙ্গিক?

পিকচার ম্যান এই সময়েরই গল্প। বছরখানেক আগে আমরা (চঞ্চল ও বৃন্দাবন দাসের পরিবার) কক্সবাজার গিয়েছিলাম। তখন আশপাশে অনেক ফটোগ্রাফার এসে বলছিল, ভাইয়া ছবি তুলি? অথচ একটা সময় ছিল, যখন কক্সবাজার যেতাম, ওরাই ছবি তুলত। ছবি তুলে ওরাই হোটেলে পৌঁছে দিত। গত বছর দেখলাম, বিচ ফটোগ্রাফাররা ঘুরছে। তেমন ছবি তোলাতুলিও নেই। গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে ঘুরছে। তখন বৃন্দাবন দাকে বলছিলাম, দেখেন দাদা, ওদের কী দুর্দিন চলে আসছে, সবার হাতে এখন মোবাইল। ওদের প্রফেশনটা হুমকির মুখে। তখনই এই গল্পটা নিয়ে ভাবা হয়।

চঞ্চল চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

সমুদ্রসৈকতে শুটিং করার সময় তো লোক জড়ো হয়ে যায়?

একদমই তাই। এখানে শুটিং করাটা টাফ। প্রচণ্ড ভিড় হয়ে যায়। একটা শর্ট ধরতেই চারপাশ থেকে শত শত মানুষ ঘিরে ধরে। ছবি তোলে, ভিডিও করতে থাকে। এটা ডিজকম্পোর্ট। সিনেমার শুটিংয়ের সময় অবশ্য ভিড় হলেও ইউনিটের লোকজন থাকে অনেক বেশি, কিছুটা সামাল দেওয়া যায়। সি বিচে নাটকের শুটিং অনেক কষ্টমাধ্য। এই নাটকের বেশির ভাগ সিকুয়েন্স বিচ ঘিরে। এরপরও সাকসেসফুলি কাজটা সেরে আসছে। নাটকটি মাছরাঙা টেলিভিশনে দেখানো হবে।

প্রশ্ন :

আপনি তো টেলিভিশনের কাজ এখন কম করেন?

ঈদের সময় কিছু কাজ করতে হয়। চ্যানেলের লোকজন এবং সারা বছর যাদের সঙ্গে কাজ করা হয়, তারা অনুরোধ করে; তাই কাজ তো করতেই হয়। সারভাইব করতে হলেও তো কাজ করতে হয়। এখন যদিও ওটিটির কাজ করি। কিন্তু ওটিটির কাজের একটা সিস্টেম আছে। তবে বাজেট বেশি আছে, কিন্তু সময়সাপেক্ষ। বছরে তো সব সময় ওটিটির কাজ হয় না—এক–দুবার হয়। টেলিভিশনের প্রতি একধরনের দায়বদ্ধতা আর মায়াও আছে। কারণ, আমরা তো টেলিভিশন থেকে আসছি। যদিও নানান কারণে টেলিভিশনের অনেক পিছিয়ে যাওয়া। হয়তো টেলিভিশনের নাটকের মান কমে গেছে। এরপরও চাই যে ভালো স্ক্রিপ্টে যদি কাজ হয়, দর্শক তো সেটা দেখতে পাবেন।

চঞ্চল চৌধুরী
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

একজন শিল্পীরও জীবনে কি সব কাজ মানসম্মত হয়?

এটা তো সম্ভব না। কিছু কাজ সারভাইবিং, কিছু কাজ ভালো লাগা, কিছু অনুরোধেও করতে হয়। আগে তো শুধুই সারভাইবিংয়ের জন্য নাটকের কাজ করতাম। পাশাপাশি নিজের মধ্যে অন্য রকম একটা উদ্যম কাজ করত। এখন তো পরিণত বয়স, চেষ্টা থাকে খারাপ কাজের সংখ্যা যেন না বাড়ে। এখন আমরা কোনো কাজ করলে দর্শক সেই কাজ দেখতে আগ্রহী হন। তখন যদি তাঁরা দেখেন, কাজের মান কম, আশানূরূপ নয়—তখন দর্শকেরা আমাদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন। সেই আস্থা রক্ষার জন্য অনেক যাচাই–বাছাই করতে হয়। বয়স, ম্যাচিউরিটি, অভিজ্ঞতা এবং অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গে এসব তৈরি হয়। অতএব নিজের নাম অথবা সুনাম যা–ই বলি না কেন, এটা রক্ষা বা সুরক্ষা করাটা তো নিজেরই দায়িত্ব।

প্রশ্ন :

নাম ও সুনাম রক্ষার কথা ভেবে যখন কোনো পরিচালক ও প্রযোজকের কাছ থেকে অভিনয়ের প্রস্তাব পান, প্রথমেই কী করেন?

প্রথমেই গল্প আর চরিত্রটাই দেখি। চরিত্রটা আমি করার উপযুক্ত কি না, গল্পটা ভালো কি না। পরিচালকের সঙ্গে আগে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকলে, দেখি কী কী কাজ করছে। নতুনদের ক্ষেত্রে স্ক্রিপ্ট দেখেই কিন্তু পরিচালকের মানও বোঝা যায়। ভালো স্ক্রিপ্ট হাতে পেলে এটা বোঝা যায়, নতুন হলেও ভালো কিছু করার ইচ্ছে আছে পরিচালকের। যাদের সঙ্গে আগে কাজ হয়েছে, তাদের সঙ্গে তো আর কথাই থাকে না।

প্রশ্ন :

সহশিল্পী ফ্যাক্টর হয়?

অভিনয় তো যৌথ শিল্প। অতএব এখানে সহশিল্পী বড় ফ্যাক্টর। আমি যতই ভালোই করি না কেন, সহশিল্পী যদি প্রপার অ্যাক্টিং না করেন, আমার অভিনয়ও কিন্তু হবে না। এটা তো অ্যাকশন রিঅ্যাকশনের ব্যাপার।