তিনি ছিলেন চিরসবুজ

জাদুকরি মুখশ্রী দিয়ে ঘায়েল করেছেন কোটি তরুণ হৃদয়। তিনি অড্রে হেপবার্ন, গেল শতকের হলিউডের বিশুদ্ধ প্রতিমা। তিনি ছিলেন সৌন্দর্য, সৌষ্ঠব, লাবণ্যের প্রতীক। আজ ২০ জানুয়ারি হলিউড অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্নের প্রয়াণদিবস । ১৯৯৩ সালের এই দিনে সুইজারল্যান্ডে ৬৩ বছর বয়সে মারা যান হলিউডের স্বর্ণযুগের এই স্বর্ণকন্যা। আজ তাঁকে স্মরণ করে তাঁর জীবনের জানা–অজানা কিছু তথ্য নিয়ে এই ছবি প্রতিবেদন।

১ / ১৪
১৯২৯ সালে ৪ মে জন্মগ্রহণের পর মা-বাবা তাঁর নাম রেখেছিলেন অড্রে ক্যাথলিন রুস্টন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ছদ্মনাম নেন এডা ভন হেমেস্ট্রা। একটি ইংরেজি নাম সে সময় ছিল বিপজ্জনক। পরে যখন অড্রে ছবির দুনিয়ায় আসেন, পরিচিতি পান অড্রে হেপবার্ন নামে। তাঁর বাবা ব্রিটিশ ব্যাংকার, মা হল্যান্ডের জমিদার বংশের মেয়ে।
২ / ১৪
শৈশব থেকেই ইংরেজি ও ওলন্দাজ ভাষায় কথা বলতে পারতেন তিনি। নিজেই পরে শিখে নিয়েছিলেন ফরাসি, স্প্যানিশ ও ইতালীয় ভাষা। এতগুলো ভাষা জানতেন বলেই অড্রে হেপবার্নের উচ্চারণে কোনো নির্দিষ্ট ভাষার ছাপ পড়েনি।
৩ / ১৪
ব্যালের প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল অড্রে হেপবার্নের। ১৯৪৪ সালেই হয়ে উঠেছিলেন যোগ্য ব্যালে নৃত্যশিল্পী। ব্যালেকেই পেশা হিসেবে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খেয়ে না খেয়ে বড় হয়ে ওঠা এই মেয়ের শরীর ব্যালে নর্তকীর মতো ছিল না, তার শরীরে ছিল অপুষ্টির ছাপ । ফলে ব্যালে শেখা হলো না আর। তখন ভাবলেন অভিনয় করবেন।
৪ / ১৪
মা–বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পর অড্রে মায়ের সঙ্গে ছিলেন প্রথমে ইংল্যান্ডে, পরে হল্যান্ডে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনী অবরুদ্ধ করে রেখেছিল অড্রেদের। সে সময় নাৎসিদের চালানো ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা সারা জীবন তাঁকে তাড়িয়ে ফিরেছে।
৫ / ১৪
১৯৫১ সালে ব্রডওয়েতে ‘জিজি’ নাটকে অভিনয় করে তিনি জনপ্রিয় হওয়া শুরু করলেন। নাটকটিতে ২০০ বারের বেশি অভিনয় করেছেন তিনি। এই নাটকে অভিনয় করেই থিয়েটারের প্রথম পুরস্কার থিয়েটার ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড লাভ করলেন।
৬ / ১৪
এর পরপরই প্যারামাউন্ট পিকচারের সঙ্গে সাতটি ছবিতে চুক্তি করে তিনি চলে আসেন ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে। হলিউডে তখন যৌন আবেদনময়ী নায়িকাদের দাপট, সেটাকে ভেঙে ফেললেন তিনি। একেবারে সহজ–সরল সুন্দরী হিসেবে পর্দায় ঠাঁই পেলেন অড্রে, ঠাঁই পেলেন দর্শকহৃদয়ে।
৭ / ১৪
‘রোমান হলিডে’ অড্রেকে তারকা বানিয়েছে, কিন্তু তাঁকে আইকন করে তুলল ১৯৬১ সালের ‘ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফানি’ ছবিটি।
৮ / ১৪
হলিউডের সব বড় তারকার সঙ্গেই পর্দা ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন অড্রে। বাকি ছিলেন এক ক্যারি গ্র্যান্ট। ক্যারি গ্র্যান্টকেই ‘রোমান হলিডে’তে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি ‘না’ করে দেওয়ায় সেখানে অভিনয় করেন গ্রেগরি পেক। এই ছবির ১০ বছর পর ‘শ্যারাড’ ছবিতে অড্রে আর ক্যারি গ্র্যান্ট অভিনয় করেন। ক্যারি গ্র্যান্ট বিব্রত হতেন এই কথা ভেবে যে অড্রে আর তাঁর বয়সের মধ্যে অনেক ব্যবধান!
৯ / ১৪
‘মাই ফেয়ার লেডি’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অড্রে। জর্জ বার্নার্ড শর লেখা কাহিনি নিয়ে তৈরি ছবি এটি। ব্রডওয়েতে বছরের পর বছর সুপারহিট হিসেবে চলেছিল। ‘মাই ফেয়ার লেডি’ খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। আটটি অস্কার পেয়েছিল। কিন্তু অড্রে এ ছবিতে অস্কার জিততে পারেননি। এ বছর অস্কার যায় ‘ম্যারি পপিনস’ ছবির জন্য জুলি অ্যান্ড্রুসের হাতে। মজার ব্যাপার, ‘মাই ফেয়ার লেডি’ ছবিতে জুলি অ্যান্ড্রুসেরই অভিনয় করার কথা ছিল, কিন্তু প্রযোজকদের পছন্দের কাছে নতি স্বীকার করেন পরিচালক।
১০ / ১৪
দেড় দশক অভিনয় করার পর হঠাৎই ছবির জগতে চলাফেরা ছেড়ে দেন অড্রে। গত শতাব্দীর ষাটের দশকের শেষ ভাগে তিনি বলতে গেলে হলিউডমুখী হননি আর। পরিবার হলো তাঁর। দুবার বিয়ে করলেন—অভিনেতা মেল ফেরার ও ইতালীয় মনস্তত্ত্ববিদ আন্দ্রেয়া দোত্তি ছিলেন তাঁর স্বামী । দুই স্বামীর কাছ থেকে তাঁর দুই সন্তান। ১৯৯৪ সালে তিনি জিতে নেন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড এবং তা দিয়ে ঢুকে যান চলচ্চিত্র, সংগীত আর নাটকের এলিট ক্লাবে।
১১ / ১৪
তিন রকম টিউলিপ, লিলি ও গোলাপের নামকরণ হয় অড্রে হেপবার্নের নামে। তাঁর নামে ১৯৫৯ সালে হলিউডের খুব কাছে লাস ভেগাসে একটি রাস্তার নাম রাখা হয়। তখন পর্যন্ত কোনো অভিনেত্রীর নামে রাস্তার নামকরণ এই প্রথম।
১২ / ১৪
ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন অড্রে হেপবার্ন। ঢাকায় তিনি আসেন ১৯৮৯ সালের ১৮ অক্টোবর। এক সপ্তাহ থেকে চলে যান ২৪ অক্টোবর। বাংলাদেশে ইউনিসেফের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ঘুরে দেখেন তিনি।
ছবি: ইউনিসেফের ফেসবুক পেজ থেকে
১৩ / ১৪
১৯৬২ সালের ২৯ মে কেনেডির জন্মদিনে গেয়েছিলেন মনরো, আর ১৯৬৩ সালের জন্মদিনে গান করেন অড্রে। অনুষ্ঠানটি ছিল ব্যক্তিগত, তাই এর কোনো রেকর্ড পাওয়া যায় না। সে বছরই ২২ নভেম্বর মারা যান কেনেডি। তখন ‘মাই ফেয়ার লেডি’র শুটিং চলছিল। খবরটি শোনার পর অনেক কান্না করেছিলেন অড্রে। গুজব ছড়িয়েছিল, কিছুদিনের জন্য হলেও কেনেডি ও হেপবার্ন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন।
১৪ / ১৪
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেবিকা হিসেবেও কাজ করেছিলেন অড্রে হেপবার্ন। নেদারল্যান্ডসের শহর আর্নেমের যখন যুদ্ধ শুরু হলো, তখন মিত্রবাহিনীর আহত যোদ্ধাদের সেবা করেছেন তিনি। এদের মধ্যে একজন ছিলেন তরুণ ব্রিটিশ সেনা টেরেন্স ইয়াং। অড্রের সেবায় তিনি জীবন ফিরে পান। পরে এই ব্রিটিশ সেনাই চিত্রনির্মাতা হন। ২০ বছর পর তাঁর পরিচালিত ‘ওয়েট আনটিল ডার্ক’ ছবিতে অভিনয় করেন অড্রে হেপবার্ন।