চরকিতে আজ মুক্তি পাচ্ছে নীল মুকুট

আজ রাত আটটা থেকে ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকিতে কামার আহমাদ সাইমনের ডকু-ড্রামাটি দেখা যাবে

এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে কামার আহমাদ সাইমনের, শুনতে কী পাও আর একটি সুতার জবানবন্দি। এই দুই ছবি দিয়েই নিজের জাত চিনিয়েছেন সাইমন। অর্জন করেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর তৃতীয় ছবি নীল মুকুট দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল দর্শক। গত বছরই ছবিটি মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। সে সময় কামার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কোনো আন্তর্জাতিক উৎসবে নয়, চলচ্চিত্রটি সবার আগে দেখতে পাবে বাংলাদেশের দর্শক। কিন্তু করোনায় দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো বন্ধ হয়ে গেলে স্থগিত হয়ে যায় ছবির মুক্তি। অতঃপর গত মাসে ঘোষণা আসে, চরকিতে মুক্তি পাবে নীল মুকুট।

ঘোষণার পর থেকেই দর্শকদের প্রতীক্ষা, কবে দেখা যাবে নীল মুকুট। প্রতীক্ষার অবসান হচ্ছে, আজ রাত আটটা থেকে ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকিতে ডকু-ড্রামাটি দেখা যাবে। দিনটি আবার নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমনের জন্মদিন। নীল মুকুট মুক্তির মধ্য দিয়ে বিশেষ এই দিনটি আরও বিশেষ হয়ে উঠছে।

জন্মদিনে নিজের ছবি মুক্তি পাওয়া প্রসঙ্গে সাইমন বলেন, ‘চারপাশে এত হাহাকার আর মৃত্যুর মাঝখানে আমার জন্মদিনে নীল মুকুট মুক্তির খবর একটা অন্য রকম অনুভূতি তৈরি করেছে, মনে হয় জীবনের জন্যই এই ভয় জয় করাটা জরুরি, জীবনকে উদ্‌যাপন করাটা জরুরি।’

কামার আহমাদ সাইমন

নীল মুকুট ছবির বিষয়বস্তু ও পটভূমি নিয়ে অনেক রহস্য। আগেভাগেই এই রহস্য ভেদ করতে চাইছেন না নির্মাতা, তিনি চান দর্শক ছবিটি দেখে সেই রহস্য ভেদ করুক। শুধু এইটুকু জানালেন, ‘প্রথম কথা, এটা কোনো গল্প না, এখানে কোনো গল্প নেই। নীল ব্যথার রং আর মুকুট ক্ষমতার পরিচয়বাহী, সেই অর্থে নীল মুকুট একটা অন্য রকম ছবি। সিনেমা বলতে এখানে কোনো বিরাট ঘটনা নেই, শুনতে কি পাও!-এ যেমন দর্শকের জন্য একটা আখ্যান আছে, এখানে সেটাও নেই। প্লেনে একবার এক দূরযাত্রায় একটা কান্না শুনে মন খুব খারাপ হয়েছিল, কান্নাটা খুব ভাবিয়েছিল। সেই ভাবনার মুহূর্তটাকে ফ্রেমে আনার চেষ্টাই নীল মুকুট।’

নীল মুকুট ছবির বিষয়বস্তু ও পটভূমি নিয়ে অনেক রহস্য

নিজের ওয়েবসাইটে ছবিটার জন্মকথা আরেকটু বিস্তারিত লিখেছেন পরিচালক, ‘বিমানকর্মী যখন তাঁকে ফোনটা রাখতে বললেন, তখনো মহিলা একটা বাচ্চার মতো কাঁদছিলেন! অচিরেই বিমানটি উড়বে আর আমি তাঁর কথাগুলো অনুসরণ করছিলাম…সোনামানিক, কথা দে, বাইরে যাবি না, রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করবি না, সব সময় বড়দের কথা শুনবি আর ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া করবি…ঘরের মানুষের সাথে বলা তাঁর কথাগুলো আমাকে আরও বেশি নাড়া দিয়েছিল…ওয়াদা করেন, কখনোই আমার বাচ্চার প্রতি কর্কশ হবেন না, ওয়াদা করেন ভালো হয়ে থাকবেন এবং সম্মানজনক কিছু খুঁজে নেবেন! মাত্র তো একটা বছর। টাকা নিয়ে আমি ফিরব, আপনি নতুন করে শুরু করবেন! ওয়াদা করেন, আমাকে ওয়াদা করেন...দীর্ঘ ফ্লাইটের বাকিটা টুকরো টুকরো এই শব্দগুলো আকার নিল, আমি এই চিত্রনাট্যটা লেখা শুরু করলাম!’

ছবিটা বানাতে প্রায় অর্ধেক পৃথিবী দূরের দেশে হাইতিতে ছুটে গিয়েছেন সাইমন। ক্যারিবিয়ান এই দেশটিতেই হয়েছে ছবির ৬৫ শতাংশ শুটিং। জানা গেছে, দুই বছর অপেক্ষার পরও ছবির ক্রুরা ভিসা না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত সাইমন ও তাঁর প্রযোজক সারা আফরিন নিজেরাই ক্যামেরা চালানোসহ অন্যান্য টেকনিক্যাল কাজ করেছেন।
ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নীল মুকুট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। নীল মুকুট-এর পোস্টারটিও ব্যাপক সমাদৃত হয়।

পোস্টার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক দর্শকের মন্তব্য, ‘বাংলা সিনেমার পোস্টার এত সুন্দর আর গভীর হবে, এটাই চাওয়া ছিল সব সময়।’ গতকাল শনিবার ফেসবুকে পোস্টারটি শেয়ার করে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ দর্শকদের সিনেমাটি দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বাংলা সিনেমা দেখুন। আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পের ঐতিহ্যের নব উন্মেষ ঘটবে নতুন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সৃষ্টিশীল চলচ্চিত্র নির্মাণের হাত ধরে। দর্শক আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে একটি আন্দোলন যেমন জন্ম নেয় না, তেমনি সফলও হয় না। তরুণদের যেকোনো সৃষ্টিশীল কাজ দেখুন। তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনায় মেতে উঠুন এবং এভাবে আমাদের চলচ্চিত্র আবার হেসে উঠবে।’