সারা পৃথিবীর যারা সংগীত নিয়ন্ত্রণ করে, সেসব প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক, প্রযোজক ও শিল্পী জড়ো হয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ ২০, ২২, ২৭ বছর ধরে; কেউ আবার ১০-১৫ বছর নিয়মিত উৎসবে অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের সবার সঙ্গে সবার যেন কত দিনের বন্ধুত্ব। সবাই সবার চেনা। প্রতিবছর একটি ভিন্ন দেশে এ আয়োজন করা হয়। এ বছর পর্তুগালের পোর্তো শহরে অংশ নেয় ১০২টি দেশ। তার মধ্যে বাংলাদেশ নামে একটা দেশ আছে, সেখানকার সংগীত যে অনেক সমৃদ্ধ, সেটা জানানোর চেষ্টা করেছি।
অংশগ্রহণকারী ১০২টি দেশের বেশির ভাগেরই একটি করে বুথ ছিল। যাঁর যে দেশের শিল্পীদের সঙ্গে কাজের আগ্রহ, তাঁরা এগিয়ে গিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন। যেমন আমার পরিচয় হলো জার্মান পাবলিশার প্যাট্রিকের সঙ্গে। ফ্রান্সের একটি বড় সংগীত প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্ণধার বেনের সঙ্গে। শিল্পীদের অনলাইন কর্মকাণ্ড দেখভাল করে তাঁর প্রতিষ্ঠান। পরিচিত হয়ে জানলাম, তাঁরা কোরিয়ান ব্যান্ড বিটিএসকে ম্যানেজ করেন। ভদ্রলোক বললেন, ‘এ বছর বিটিএসকে অন্য এক প্রতিষ্ঠান নিয়ে গেছে,’ বলে বেশ হাসলেন বেন। এক্সপো জোনে তাঁর সঙ্গে আমারও একটা ছোট্ট মিটিং হলো।
ওম্যাক্সে জাতিবর্ণ-নির্বিশেষে অনেক ‘মানুষ’-এর দেখা পেয়েছি। এটাই সবচেয়ে ভালো লেগেছে। সব দেখেশুনে আমার ইচ্ছে হলো, আগামীবার আমরা সেখানে একটি বুথ করব। যেহেতু ব্যান্ডের পারফরম্যান্স ছিল না, তাই এবার আমি অনেকগুলো দীর্ঘমেয়াদি আইডিয়া নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট এখন প্রাকৃতিক বিপর্যয়। প্রকৃতি ও পরিবেশ বিপর্যয় রোধ ঠেকানোর বার্তা সংগীতের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির নানা রকম আইডিয়া শেয়ার করেছি। সেসব শুনে ওম্যাক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে বললেন, ‘ক্যান আই হ্যাভ আ সেলফি উইথ ইউ?’ আমি তো একটু লজ্জাই পেয়ে গেলাম।
সম্মেলনের স্বাগত বক্তব্যে ওম্যাক্স সিইও বলছিলেন, ‘কোভিডের পর মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। আমরা আরও বেশি করে টের পেয়েছি, বেঁচে থাকার জন্য সংস্কৃতিচর্চা কত জরুরি। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কোনো বিকল্প নেই।’ সংগীত অথবা যেকোনো আইডিয়া নিয়ে নানা রকম কাজের সুযোগ সেখানে রয়েছে। শুধু আমাদের ব্যান্ড না, বাংলাদেশের সব ব্যান্ড বা অন্য মিউজিক নিয়ে কাজের সুযোগ, সম্ভাবনা অনেক বেশি। সারা পৃথিবীতে অনেক উৎসব, অনেক কাজ হয়। নিজ সংস্কৃতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় এখনই!
সব মিলিয়ে পর্তুগালে ছিলাম সাত দিন। সেখানকার মানুষ যে কী ভালো! প্রথমে গেছি লিসবন, তারপর পোর্তো। অনেক অনেক বাংলাদেশি ভাই-বোনে সেখানে থাকেন। পোর্তোতে প্রথমবারের মতো একজন বাঙালি কাউন্সেলর হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে আমাকেও সংবর্ধনা দেওয়া হলো। সেখানকার মন্ত্রী, এমপি, আইনজীবী, শিক্ষকসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে বলে আমি তাঁদের ধন্যবাদ জানালাম। তাঁরা ভীষণ খুশি। ওই দেশের এক আইনজীবী এসে আমাকে বললেন, ‘আপনার মতো নারীকে আমাদের দেশে প্রয়োজন। আপনি পর্তুগালে থাকতে চাইলে বলবেন। আমি কাজ করে দেব।’ প্রকাশ্যে বললাম, ‘লাগলে জানাব’ আর মনে মনে মুচকি হেসে বললাম, ‘আমি তো বাংলার প্রেমিকা।’