গানের শিক্ষক ভেবেছিলেন আমি মোটেই গায়িকা হতে পারব না: উষা

মুম্বাইয়ে উষা উত্থুপের বেড়ে ওঠা হলেও কলকাতাই তাঁর বড় প্রিয় শহর

পোশাক-স্টাইল-গান গাওয়ার ভঙ্গি—সবেতেই চমক। সত্তর পেরিয়েছেন। ষাট থেকে আশির দশকের সময় ষা উত্থুপের গলাতেই ভারতের শ্রোতারা শুনেছিলেন পপ, চলচ্চিত্রের গান থেকে শুরু করে জ্যাজও। বলিউডে প্রেব্যাক শিল্পী হিসেবেও তিনি সফল। সব আসরে তাঁর একটি গান থাকেই থাকে, কলকাতা কলকাতা ডোন্ট ওরি কলকাতা...।
মুম্বাইয়ে উষা উত্থুপের বেড়ে ওঠা হলেও কলকাতাই তাঁর বড় প্রিয় শহর। তাঁকে বেশির ভাগ সময়ে দেখা যায়, কপালে ‘ক’ লেখা বড় একটি গোল টিপ। শোনা যায়, কলকাতার প্রতি ভালোবাসা থেকেই কলকাতার আদ্যক্ষর লেখা টিপ পরেন তিনি। এই প্রেমই উষাকে আবার টেনে নিয়ে গেল কলকাতায়। কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের অক্সফোর্ড বুক স্টোরে নিজের বায়োগ্রাফি ‘দ্য কুইন অব ইন্ডিয়ান পপ’ মোড়ক উন্মোচন করলেন।
অনুষ্ঠানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের পাশাপাশি কলকাতার স্মৃতি রোমন্থনে ভাসলেন উষা উত্থুপ।

উষা উত্থুপ

বললেন, ‘বিগত ৫০ বছর ধরে অক্সফোর্ড বুক স্টোরের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। আর সে জন্যই কলকাতায় এসে প্রথম নিজের বায়োগ্রাফি উদ্বোধন করলাম। আমার মনে হয়, এই অক্সফোর্ড বুক স্টোরের একটা আলাদা জাদু রয়েছে। আমার অতীতের কত স্মৃতি জড়িত এর সঙ্গে। পার্ক স্ট্রিটের ট্রিঙ্কাসে কেরিয়ার শুরু করেছিলাম। তখন থেকেই অক্সফোর্ড বুক স্টোরে যাতায়াত। তাই এখানে এসে নিজের বায়োগ্রাফি প্রকাশ করে আমার খুব আনন্দ লাগছে।’
কেমন ছিল তাঁর গানের উষার সংগীতজীবনের শুরুর দিনগুলো? কীভাবেই–বা বলিউডের গায়িকা হয়ে উঠলেন? অতীতের সেই দিনগুলো এসেছে ‘দ্য কুইন অব ইন্ডিয়ান পপ’ বইয়ে। বইটি লিখেছেন বিকাশ কুমার। মূল বইটি যদিও হিন্দিতে লিখেছেন তিনি। যার নাম ‘উল্লাস কি নাও’। আর তা থেকেই ইংরেজিতে অনুবাদ করেন তাঁর মেয়ে সৃষ্টি ঝা।

তাঁকে বেশির ভাগ সময়ে দেখা যায়, কপালে ‘ক’ লেখা বড় একটি গোল টিপ

এর আগে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদকের কাছে ‘দ্য কুইন অব ইন্ডিয়ান পপ’ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি ব্যক্তিগত নানা ঘটনা তুলে ধরেন। উষা বলেন, ‘গানের শিক্ষক ভেবেছিলেন আমি মোটেই গায়িকা হতে পারব না। সংগীতে অতটা দখলই নেই আমার। এমনকি আমাকে বিশেষ ক্লাসগুলোতে থাকতে দিতেন না। বিশ্বাস করুন, বছরখানেক বাদে এক অনুষ্ঠানে আমি যখন গাইছিলাম, তখন আমার শিক্ষক বসেছিলেন দর্শকাসনে। মঞ্চ থেকে নেমে যখন মুখোমুখি হয়েছিলাম, দুজনের চোখেই তখন পানি ঝরেছিল। তবে আমার মন খারাপ হয়নি কখনো। কিংবা গানের ক্লাসে না ঢুকতে পারার বেদনা আমাকে টেনে নিচে নামিয়ে দেয়নি। বরং আরও ভালোর দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। ভেতরে জেদ কাজ করেছে।’

কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের অক্সফোর্ড বুক স্টোরে নিজের বায়োগ্রাফি ‘দ্য কুইন অব ইন্ডিয়ান পপ’ মোড়ক উন্মোচন করলেন

উষা আরও বলেন, ‘আমি ভালো না খারাপ গায়িকা, সেটা বলতে পারব না। তবে এটুকু বলতে পারি যে আমি শতভাগ অরিজিনাল গায়িকা।’ তাঁকে নিয়ে ভারতে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক হয়েছিল। সেসব থেকে সব সময় দূরেই থেকেছেন তিনি। এসব প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভেবেই কী অদ্ভুত লাগত যে আমার মতো সাধারণ একজন মেয়ে যে কিনা একেবারে মাটির মানুষ, ঘরোয়া প্রকৃতির, নাইটক্লাব সিঙ্গারের ভাবমূর্তির সঙ্গে একেবারে কোনো রকম মিলই ছিল না, সেই আমাকেও কিনা নিষিদ্ধ করার জন্য রাজনৈতিক ময়দানের লোক উঠেপড়ে লেগেছিল।’
এ বছর পেশাদার গায়িকা হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে ৫২ বছর পূর্ণ করেছেন উষা উত্থুপ। তাঁর কণ্ঠে ‘হরি ওম হরি’, ‘রাম্বা হো’, ‘জিতে হ্যায় শান সে’র মতো অজস্র হিট গান শ্রোতারা দশকের পর দশক ধরে উপভোগ করে গেছেন। ভারতের একাধিক আঞ্চলিক ভাষার পাশাপাশি বিদেশি ভাষাতেও গান গেয়েছেন উষা।

একমঞ্চে উষা উথুপ ও রুনা লায়লা। পাশে বাবুল সুপ্রিয়