১৫ অক্টোবর ব্রিটেনে বের হয়েছে জয় ক্রুকসের প্রথম একক অ্যালবাম স্কিন। বের হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে আলোচনা। গার্ডিয়ান, বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমসসহ পশ্চিমা প্রধান গণমাধ্যমে বেরিয়েছে সেই অ্যালবামের রিভিউ। কয়েক বছর ধরে যুক্তরাজ্যে গান দিয়ে নিজের জায়গা পাকা করেছেন ক্রুকস।
২০২০ সালে ব্রিট অ্যাওয়ার্ডে মনোনীত হয়েছিলেন। জানেন কি, সাড়া জাগানো এই শিল্পীর সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের সম্পর্ক? তাঁর পুরো নাম শুনলেই সম্পর্কটা টের পাবেন। তাঁর পুরো নাম জয় এলিজাবেথ আক্তার ক্রুকস। তা বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা কী? ক্রুকসের মা বাংলাদেশি আর বাবা আইরিশ।
মারভিন গে ও কেট ন্যাশের গান শুনে লন্ডনে তাঁর বেড়ে ওঠা। শিখেছেন গিটার ও পিয়ানো। পরে গান তৈরিতে নামেন। ১৫ বছর বয়সে গানের একজন ম্যানেজারের চোখে পড়ে ক্রুকসের গাওয়া ‘হিট দ্য রোড জ্যাক’। বন্ধুদের সঙ্গে গাওয়া এ গান তিনি ইউটিউবে দিয়েছিলেন। আর ১৯ বছর বয়সে সনি মিউজিকের সঙ্গে গানের চুক্তি।
চার বছরে ক্রুকস তিনটি ইপিসহ অনেকগুলো একক গান করেন। ২০২০ সালের ব্রিট রাইজিং স্টার অ্যাওয়ার্ডের সংক্ষিপ্ত তালিকায় নাম তুলে চমকে দেন। অ্যালবাম ও গান নিয়ে নামকরা সব গণমাধ্যমে তাঁর খবর, রিভিউ ও সাক্ষাৎকার এসেছে। তাতে বারবারই উঠে এসেছে তাঁর দেশাত্মবোধের কথা। স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগের কথা। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমার পরিবারের সবাইকে আমার প্রমাতামহীর সামনে হত্যা করা হয়। সেই যুদ্ধের প্রভাব আজ আছে।’
চলতি বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছে বাংলাদেশ। এ উপলক্ষে ২৬ মার্চ বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্কে ক্রুকস গেয়ে শোনান বাংলা গান ‘এই রাত তোমার আমার’। যুক্তরাজ্যে বেড়ে ওঠায় স্বভাবতই বাংলা শেখাটা তাঁর জন্য ছিল কষ্টকর। তবু শিখেছেন। কারণ, নিজের ঐতিহ্য ও ইতিহাস তাঁর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জয় ক্রুকস বিবিসিকে বলেন, ‘যখন একটা দেশ তার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে, তখন শুধু জনগণের জন্যই যুদ্ধ করে না, বরং তার শিল্প, সংগীত, গল্পকথনরীতি, কবিতা এবং কণ্ঠস্বরের জন্যও যুদ্ধ করে।’
তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম স্কিন–এর নামই বলে দেয়, এটি নিজের পরিচয়ের একটি বিবৃতিও। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রুকস বলেন, ‘[চামড়া] আমাদের শরীরের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ। কিন্তু অন্য সব অর্থে সামাজিক ও বাহ্যিকভাবে আমাদের বিরুদ্ধে এটাকেই ব্যবহার করা হয়।’ অ্যালবামটিকে তাঁর ব্রিটিশ-আইরিশ-বাংলাদেশি ঐতিহ্যের আবেগঘন এক কথনও বলা যায়। গানগুলো শুনলে মনে হবে, এ যেন তাঁর ব্যক্তিগত আলাপ। বিষয়বস্তু হিসেবে অ্যালবামে উঠে এসেছে তাঁর অভিবাসী জীবন, যৌননিপীড়ন, বর্ণবৈষম্যসহ ব্রিটেনের রক্ষণশীল সরকার।
স্কিন–এর গানগুলো লিখতে গিয়ে ক্রুকস তাঁর পারিবারিক ইতিহাসের শক্তিশালী অনুভূতিগুলো খুঁড়ে এনেছেন। একটি গানের শিরোনামই বাংলা: ‘ঠিক আছে’। এমনকি গানের মধ্যে বাংলায় ‘ঠিক আছে’ শব্দটিকেও ব্যবহার করেছেন ক্রুকস। অ্যালবামের ‘নাইনটিনথ ফ্লোর’ গানটি তাঁর নানিকে নিয়ে। দক্ষিণ লন্ডনে ওই অ্যাপার্টমেন্টেই ক্রুকস কাটিয়েছেন তাঁর শৈশব। এই গানের দুটি লাইন তিনি গেয়েছেন বাংলাদেশি একজন আত্মীয়ের উদ্দেশে।
একটি মিউজিক ভিডিওতেও দেখা যায়, শিল্পী অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ছেন। বাতাস বইছে। তাতে উড়ছে শুকাতে দেওয়া জামাকাপড়। পাশে বসা ছোট ভাই। পেছনে টিনের বেড়া। গাছে ফুল ফুটেছে। যেন একটু টুকরা গ্রামীণ বাংলার ছবি।
ক্রুকসের জীবনে তাঁর বাংলাদেশি মায়ের প্রভাব অসামান্য। সে কথা তাঁর গানেও উঠে এসেছে। তাঁর প্রেমিক যখন তাঁকে ছেড়ে চলে যান, মা তাঁকে সান্ত্বনা দিতে বাংলা ভাষাই ব্যবহার করেছিলেন। বলেছিলেন ‘শান্ত থাক’।