বর্ণাঢ্য আয়োজনে শুরু হলো সংগীতের জাতীয় উৎসব ও সম্মেলন

উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ
ছবি: জুয়েল শীল

‘সারা দেশের সংগীতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের এক ছাতার নিচে আনা এ সংগীত ঐক্য বাংলাদেশের লক্ষ্য। ৫০ বছর ধরে গীতিকবি, সুরস্রষ্টা ও কণ্ঠশিল্পীরা নানা অনিয়ম, অবহেলা আর প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানী থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। এ পরিস্থিতি উত্তরণের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ।’ আজ চট্টগ্রামে শুরু হওয়া মাসব্যাপী ‌সংগীতের জাতীয় উৎসব ও সম্মেলনে বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সংগীত ঐক্য বাংলাদেশের সভাপতি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা সংগীতের জাতীয় উৎসব ও সম্মেলনে সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। তাঁর মতো একই সুরে কথা বলেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়া অন্যরাও।

সভাপতির বক্তব্য দিচ্ছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
ছবি: জুয়েল শীল

বর্ণাঢ্য আয়োজনে চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া ‌সংগীতের জাতীয় উৎসব ও সম্মেলনের লক্ষ্য—দেশজুড়ে সংগীত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ করে দেশীয় সংস্কৃতিকে আরও বিকশিত করা বলে আয়োজকের পাঠানো এক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
দেশের বিভিন্ন বিভাগে মাসব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য এই উৎসব শুরু হলো চট্টগ্রামের জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে। উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুক্রবার বিকেলে উৎসবের উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কে এম খালিদ বলেন, ‘করোনাকালে ২০ হাজার সংগীতশিল্পীকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার সময় শিল্পীদের বিশেষ সহায়তা তহবিলে ছিল ৩০ কোটি টাকা। এখন ফান্ড ৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।’ শিল্পীদের যেসব দাবি আছে তা বিবেচনা করার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংগীত ঐক্য বাংলাদেশের এর অন্যতম মহাসচিব ও গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশের সভাপতি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, সংগীত ঐক্য বাংলাদেশের মহাসচিব ও মিউজিক কম্পোজারস সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি নকীব খান, সংগীত ঐক্য বাংলাদেশের আরেক মহাসচিব ও সিঙ্গারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ।

বক্তব্য দিচ্ছেন সিঙ্গারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ
ছবি: জুয়েল শীল

শহীদ মাহমুদ জঙ্গী তাঁর বক্তব্যে সংগীতশিল্পীদের উন্নয়নে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরে বলেন, ‘কপিরাইট অফিসের যে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে শিল্পীদের পৃথক অফিস বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি সংগীত একাডেমি গড়ে তোলার দাবি জানাই।’ এ ছাড়া তিনি সরকারি হাসপাতালে সংগীতশিল্পীদের জন্য পৃথক সিট রাখাসহ শিল্পীদের জীবনমান উন্নয়নে একগুচ্ছ দাবি তুলে ধরেন। নকীব খান বলেন, ‘সংগীতের উন্নয়নে সকলকে কাজ করতে হবে। পৃথিবীর সপ্তম ভাষা বাংলা। বাংলা গানকে পৃথিবীর দরবারে পরিচিত করতে সব শিল্পীকে একযোগে কাজ করতে হবে।’ কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘সংগীতাঙ্গনে সম্পৃক্ত সবাইকে নিয়ে আমাদের এ উদ্যোগ। এ উদ্যোগ সফল করার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।’
বক্তব্য শেষে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব। উঠে আসে চট্টগ্রামের সংগীত ও সংস্কৃতি। শুরু হয় সমরজিৎ রায়ের উচ্চাঙ্গসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর পর্যায়ক্রমে মঞ্চে গান পরিবেশন করেন চট্টগ্রাম সংগীত ভবনের শিল্পীরা, প্রেমসুন্দর বৈষ্ণবের কণ্ঠে চট্টগ্রামের প্রচলিত আঞ্চলিক গান, রাঙামাটির জুম ইসথেটিকস কাউন্সিলের পাহাড়ি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবেশনা, চট্টগ্রামের ব্যান্ড ‘দূরবীন’।

চট্টগ্রামের স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনা
ছবি: জুয়েল শীল

দ্বিতীয় পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, কুমার বিশ্বজিৎ, হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল, জয় শাহরিয়ার ও কিশোর দাশ। রাত সাড়ে আটটার দিকে পর্যায়ক্রমে মঞ্চে আসেন দেশের তিন জনপ্রিয় ব্যান্ড রেনেসাঁ, দলছুট ও সোলস।
শহীদ মাহমুদ জঙ্গী জানান, চট্টগ্রামের সফল আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২৪ জুন এই উৎসব হবে সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। এরপর ১ জুলাই বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। ১৬ জুলাই উৎসবের চূড়ান্ত অনুষ্ঠান ও জাতীয় সম্মেলন হবে ঢাকায়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্সে। পুরো উৎসব ও সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বৃষ্টির সন্ধ্যায় জমে ওঠে আয়োজন
ছবি: জুয়েল শীল

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের গীতিকবি, সুরস্রষ্টা ও কণ্ঠশিল্পীদের প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানী পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে সংগীতের তিন সংগঠন গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশ, মিউজিক কম্পোজারস সোসাইটি বাংলাদেশ ও সিঙ্গারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সম্মিলিত মঞ্চ ‘সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ’। সংগীতের সব পক্ষের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি ও যৌথভাবে প্রণীত উন্নয়ন প্রস্তাবগুলো নিয়ে সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও কপিরাইট দপ্তরের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করছে এই সংগঠন। সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ মনে করে, ৫০ বছর ধরে গীতিকবি, সুরস্রষ্টা ও কণ্ঠশিল্পীরা নানা অনিয়ম, অবহেলা আর প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানী থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। এ পরিস্থিতি উত্তরণের লক্ষ্যে গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ১০ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গীতিকবি, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীরা এবার এক ছাতার নিচে আসেন। গঠিত হয় সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ। সার্বিক সংগীতের মানোন্নয়ন, সম্মান ও সম্মানীর জন্য একসঙ্গে লড়াই করার প্রত্যয় নিয়ে এই প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সংগীতের সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে কাজ করে যাওয়ার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার চেষ্টাই সংগঠনের উদ্দেশ্য।