নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ। এ অবস্থায় কনসার্ট হবে কি না, এ নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। কেননা ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেন নিয়ে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। এটা কোথায়? এটা কি স্টেডিয়াম নাকি অন্য কিছু! একজন আমাকে বলল, ‘এটা একটা ইনডোর স্টেডিয়াম।’ হোটেল থেকে গাড়ি নিয়ে ছুটলাম। গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে ঢুকলাম ভেতরে। দেখি বিশাল এক স্টেডিয়াম, আমাদের আর্মি স্টেডিয়ামের মতো। পৌঁছানোর পর অনেক বাংলাদেশিকে দেখলাম। আশপাশের সবাই বাংলায় কথা বলছিল। তা ছাড়া স্করপিয়ন্সের ডাইহার্ট ফ্যানরা তো ছিলই। অদ্ভুত সুন্দর আলো ও শব্দের মাধ্যমে কনসার্ট শুরু হয়। শুরুতে বাংলাদেশ নিয়ে দেখানো তথ্যচিত্রটি বেশ ভালো লাগল। আলোঝলমলে মিলনায়তনে হঠাৎ লাল-সবুজের একটা মেলবন্ধন।
কনসার্ট শুরু হলো। চিরকুট সময় পেল মাত্র ২০ মিনিট। দর্শকদের মধ্যে প্রায় চার–পাঁচ হাজার বাঙালি ছিল, বাকিরা বিদেশি। ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ গানটা দিয়ে শুরু করে চিরকুট। সম্ভবত সেটাই ছিল সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত। পরিবেশনার ফাঁকে সুমি আপার ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কথা বলা। তিনি বলছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা ভালো ইংরেজি বলতে পারি না। আমরা এখানে এসেছি ১৯৭১ সালে যাঁরা আমাদের জন্য গান গেয়েছিলেন, সেই বন্ধুদের স্মরণে, আমরা আবার এসেছি তোমাদের জন্য গান গাইতে।’ আমি যতদূর শুনেছি, কনসার্টের জন্য চিরকুটকে বেছে নিয়েছে স্করপিয়ন্স। চিরকুটের ব্যতিক্রমী কিছু ব্যাপার ছিল, যা তাদের আকর্ষণ করেছে। সত্যিই এ ব্যান্ডের একটা স্বাতন্ত্র্য ও বিশ্বের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা আছে।
এমন নয় যে আমি হার্ড রকের ভক্ত। ছোটবেলা থেকে স্করপিয়ন্সের গান শুনে বড় হয়েছি। আশির দশকে আমার বন্ধুরাও স্করপিয়ন্স শুনত। জীবনের প্রথম যে ক্যাসেটটায় গান রেকর্ড করি, সেটার প্রথম গানই ছিল ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’। তখন রেইনবোতে রেকর্ড করতাম।
ছোটবেলার সেই স্করপিয়ন্সকে আমি সামনে থেকে দেখছি, শুনতে পাচ্ছি, সেটা আমার জন্য রোমাঞ্চকর, জীবনের অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা। ক্লাউস মাইনেকে ছোটবেলা থেকেই দেখছি। ৩০ বছর পর তাঁকে সামনে থেকে দেখতে পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার।
স্করপিয়ন্স এ কনসার্টে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’–এর কোনো গান গায়নি। কারণ, গানগুলো গাওয়ার অনুমতি নেই তাদের। কিন্তু নিজেদের গানের ফাঁকে ফাঁকে তারা যখন বাংলাদেশের কথা বলছিল, এত ভালো লাগছিল যে বলে বোঝানো যাবে না। গানের ফাঁকে যখন তারা ‘বাংলাদেশ উই লাভ ইউ’ বলে উঠছিল, তখন মিলনায়তনের দর্শকেরা চিৎকার করে উঠছিল। সেটাও আরেকটি সুন্দর মুহূর্ত।