জয়ার অন্য রকম বৃহস্পতিবার
বৃহস্পতিবার, অন্য রকম একটা দিন কাটল বাংলাদেশের অভিনেত্রী জয়া আহসানের। ‘বৃহস্পতি তুঙ্গে’ যাকে বলে। বিনিসুতোয় ছবির জন্য তৃতীয়বারের মতো জয় ফিল্মফেয়ার বাংলার পুরস্কার পেয়েছেন বলে? শুধু সে কারণেই নয়। এদিন ছিল বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। রোববার নামের একটি ভারতীয় বাংলা ম্যাগাজিনে প্রকাশিত জয়া আহসানের লেখাটি নজরে আসে তাঁর দুই বাংলার ভক্তদের। তাঁরা মুগ্ধ হয়ে দেখেন, তাঁদের প্রিয় অভিনেত্রী ‘জনতার নায়ক’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন, করেছেন ছোটবেলার স্মৃতিচারণা। বাবার কাছে শোনা বঙ্গবন্ধুর গল্প বলে গেছেন কবিতার স্বরে। রোববার ১৩ মার্চ সংখ্যা প্রকাশ করেছে, যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে।
বৃহস্পতিবার ভোরে বিহারের ঝাড়খণ্ড থেকে রেলগাড়িতে করে কলকাতায় নেমেছিলেন জয়া। সেখানে চলছিল ‘কালান্তর’ ছবির শুটিং। বঙ্গভঙ্গের বিপ্লবী যুগের গল্পে ছবিটি বানাচ্ছেন সৌকর্য ঘোষাল। সেখানে জয়াকে দেখা যাবে বিপ্লবীবেশে। বিপ্লবের চেতনা তাঁর ভেতরে গেঁথে দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বাবা। মুক্তিযুদ্ধ ও বিপ্লবের সে চেতনা লালন করলে কেউ পিছিয়ে থাকতে পারে? জয়াও থাকেননি। শ্রম দিয়েছেন, দেশ ও বিনোদন অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন। যেমন অভিনয়শিল্পী হিসেবে, তেমনি প্রযোজক হিসেবেও।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতার সেরা অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হলো জয় ফিল্মফেয়ার বাংলার পুরস্কার। তৃতীয়বার, মানে হ্যাটট্রিক! কেমন লাগছে? ‘সবাই সে কথাই বলছে, হ্যাটট্রিক। ভালো লাগছে। আমি ভাবিনি যে পপুলার ক্যাটাগরিতে পেয়ে যাব। ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক জিতেশ পেল্লাই খুব খুশি হয়েছেন। তিনি আমার কাজ পছন্দ করেন, ফলো করেন। ফিল্মফেয়ার টিম আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’ দর্শক ও ফিল্মফেয়ার কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘পরপর তিনবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে সম্মানিত হতে পেরে আমি আপ্লুত। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জনপ্রিয় বিভাগে বিনিসুতোয় ছবির জন্য কৃষ্ণসুন্দরী হাতে এলেন। ধন্যবাদ দর্শক এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কার কর্তৃপক্ষকে, এত ভালোবাসা দেওয়ার জন্য। আমার পরিচালক অতনু ঘোষ বিনিসুতোয় ছবির মধ্যে দিয়ে যে নাগরিক রূপকথা বুনেছেন, তার রেশ রয়ে গেল এই প্রাপ্তিতে। ছবির টিমকে অভিনন্দন জানাই ফিল্মফেয়ারের মঞ্চে সমালোচকদের পছন্দের সেরা ছবি ও সেরা সম্পাদনার শিরোপা জয়ের জন্য। বিনিসুতোর বুনন আরও পোক্ত হলো আজ, শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা উজ্জ্বলতর হোক, সকলকে শুভেচ্ছা জানাই।’
বৃহস্পতিবার ভারতের কলকাতার রাজারহাটের একটি তারকা হোটেলে বসেছিল ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের এ বছরের আসর। সেখানকার এক চিরচেনা মানুষ হিসেবে মিশে যান জয়া। তাঁকে দেখা যায় অনুপম রায়ের সঙ্গে, যিনি জয়া অভিনীত ও প্রযোজিত দেবী ছবির জন্য করেছিলেন অসাধারণ এক গান। পরিচালক অরিন্দম শীল, গায়িকা ইমন চক্রবর্তী, অভিনয়শিল্পী অপরাজিতা আঢ্যসহ আরও কত কত প্রিয়মুখের মুখোমুখি হন জয়া। ‘জনতার নায়ক’ লেখাটির প্রসঙ্গ তুলতেই হোয়াটসঅ্যাপে ভেসে আসে তাঁর সংকোচমাখা স্বর, ‘লেখাটা ফেসবুকে পোস্ট করতে লজ্জাই লাগছিল। ভাবলাম তাঁর জন্মদিনে পোস্ট করতেই পারি, যেহেতু কষ্ট করে লিখেছি। কলকাতার তো বটেই, বাংলাদেশের মানুষেরাও খুব পছন্দ করেছে লেখাটা। আমি ব্যক্তিগত অনুভূতির জায়গা থেকে লিখি। আর বাবার সঙ্গে বিষয়টা জড়িত বলে একটা পারসোনাল টাচ আছে।’
২০১৯ সালে টালিউডের ছবি বিজয়া ও রবিবার-এর জন্য জয় ফিল্মফেয়ার বাংলা পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। সেখানকার ব্যস্ততম এক অভিনয়শিল্পী জয়ার হাতে এখন অনেকগুলো ছবি। পুতুল নাচের ইতিকথা ছবির শুটিং শেষ করে ফেলেছেন ইতিমধ্যে। আরও আরও কাজ তিনি জমিয়ে রেখেছেন বাংলা ভাষার সিনেমাপ্রেমীদের হাতে তুলে দেবেন বলে। ঘাম আর শ্রম কখনো বৃথা যায় না, অভিনেত্রী জয়া আহসানের জীবনপ্রবাহে তাকালে কথাটা চলমান সত্য হিসেবে ধরা দেয়। তাঁর জীবনের ভ্রমণটা বাংলাদেশ আর ভারতের চলচ্চিত্রাঙ্গনের একটা পাঠ হয়ে থাকবে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।