অভিনয় তাঁর পেটের নয়, আত্মার খোরাক

মোস্তফা মন্‌ওয়ার একজন চরিত্র অভিনেতা
ছবি: ফেসবুক থেকে

যেই বিষাক্ত মাছের টুকরাটা মুখে পুরতে যাবেন, অমনি ধক করে ওঠে দর্শকের বুক। পারসোনালিটি ডিজঅর্ডারের রোগীর ভূমিকায় অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করে নিয়েছেন মোস্তফা মন্‌ওয়ার। এভাবে যে চরিত্রেই কাজ করেছেন, দর্শক মনে দাগ কেটেছেন। সবশেষ সাইকোলজিক্যাল ড্রামা ‘ঊনলৌকিক’-এর ‘মরিবার হলো তার স্বাদ’ এবং সিরিজ ‘লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলম্যান’-এ তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে।

মোস্তফা মন্‌ওয়ার ক্যামেরার সামনে অনেক দিন। চলচ্চিত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’, ‘ইতি তোমারই ঢাকা’। আটকে আছে ‘মানুষের বাগান’, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’, ‘পায়ের নিচে মাটি নেই’সহ আরও কিছু কাজ। অনেকের হয়তো মনে আছে ‘মিস্টার জনি’ নাটকের কথা! এই যে অভিনয়ে আসা, চালিয়ে যাওয়া, চরিত্র ছেড়ে আরেক চরিত্র হয়ে ওঠার পেছনে সংগ্রামের মাত্রাটা জানতে চাই। মোস্তফা মন্‌ওয়ার বলেন, ‘প্রায়ই মনে হয় ছেড়ে দিই বা মনে হয় এসব করে কী লাভ! তবু লেগে থাকি, করে যাই। এই অক্লান্ত করে যাওয়াটাই একটা সংগ্রাম।’

‘মরিবার হলো তার সাধ’ গল্পের প্রধান চরিত্রে মোস্তফা মন্‌ওয়ার
ছবি: সংগৃহীত

তাঁর সংগ্রামের অন্যতম যাতনা ছিল পছন্দের চরিত্র না পাওয়া। মোস্তফা মন্‌ওয়ার প্রকৃত অর্থেই ‘বেছে’ কাজ করেন। কারণ, অভিনয় তাঁর পেটের নয়, আত্মার খোরাক জোগায়। গল্প ভালো না লাগলে তাই কাজও করেন না। কর্মজীবনের বার্ষিক ২২ দিন ছুটির পুরোটাই তিনি বরাদ্দ রাখেন শুটিংয়ের জন্য। এ সময়ের মধ্যে করতে পারেন বড়জোর তিনটি কাজ। এ রকম এক অভিনেতার সংগ্রাম হচ্ছে মনের মতো গল্প পাওয়া! তিনি বলেন, ‘একসময় পছন্দের গল্প পেতাম না। সেটা ছিল সত্যিই একটা যন্ত্রণা। এখন গল্পই আমাকে খুঁজে বের করে। আমি যে ধরনের চরিত্র করতে চাই, সেটা চলে আসে আমার কাছে। আমার পছন্দের ব্যাপারগুলো জানেন—এ রকম অনেক মানুষের কারণেই সেটা সম্ভব হয়েছে।’

মি. জনি নাটকে অভিনেতা মোস্তফা মন্‌ওয়ার

প্রশংসা কেমন লাগছে? ‘প্রশংসা ভালো লাগছে। তবে এতে ডুবে যেতে চাই না। কারণ, কিছু কাজ সবারই ভালো লাগবে। কিছু কাজ যদি ভালো না লাগে, আর লোকে যদি সেটা বলে যে ভালো লাগেনি, তাহলে আবার খারাপ লাগবে। তাই আমার মনে হয়, এসবে না জড়িয়ে কেবল কাজটা করে যাওয়া জরুরি।’

‘মেড ইন বাংলাদেশ’–এর অভিনয়শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার ও রিকিতা নন্দিনীর মাঝে পরিচালক
ছবি: ফেসবুক

যে চরিত্র তাঁকে রোমাঞ্চিত করে না, সেই চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন না। ‘আমি যদি আর্থিকভাবে অভিনয়ের ওপর নির্ভরশীল হতাম, তাহলে আমাকে অনেক কাজ করতে হতো। আমার সুবিধাটা হচ্ছে, বেছে নিজের পছন্দে কাজ করতে পারি। চাইলে করতে বা ছাড়তে পারি। চাকরি করার কারণে এই বিলাসিতা আমার আছে। অনেকের মধ্যে আছে যে একটা কাজ সিরিয়াসলি করব, বাকিটা করার জন্য করব। আমার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। ভালো করাটা আমার কাছে একটা প্র্যাকটিসের ব্যাপার। ভালো করলে সব কটি কাজ ভালো করতে হয়। এটা অভ্যাসের ব্যাপার। আসলে, কেবল অভিনয় করে সংসার চালানো কঠিন কাজ। যারা পারে, তারা অন্য স্তরের মানুষ।’

মোস্তফা মন্‌ওয়ারকে সামনে পাওয়া যাবে ব্যতিক্রমী আরও কিছু কাজে। কিছু সিনেমার শুটিং শেষ। কিছু সিনেমার শুটিং শুরু হচ্ছে। সেসবের মধ্যে রয়েছে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘গুণীন’।