অভিনয় ভালোই করো, নাতনির সঙ্গে বিয়ে দেওয়া চলে
লায়লা হাসান ও অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম দম্পতির মধ্যে অলিখিত চুক্তি আছে, একজন রেগে গেলে অপরজন চুপ করে থাকবেন। কারণ, স্বামী-স্ত্রী দুজনই হঠাৎ হঠাৎ একে অন্যের ওপর চটে যান। বিয়ের ৫৬ বছর পর আজও বহাল আছে এই চুক্তি। আজ ২৭ জুলাই গুণী অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমামের জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে তাঁর অজানা ১০টি তথ্য তুলে ধরা হলো।
স্কুলের সেরা ১০
বর্ধমান টাউন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন এই অভিনেতা। এই স্কুল কর্তৃপক্ষ এখনো তাঁকে স্মরণ করে। কয়েক বছর আগে স্কুলটির ৭৫ বছর উদ্যাপন করা হয়। তখন ১০ জন সেরা সফল শিক্ষার্থীকে স্মরণ করে একটি ভিডিও তৈরি করে। সেখানে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসহ অনেক হেভিওয়েট ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর মধ্যে ছিলেন হাসান ইমাম। পুরো ভিডিওর ৪০ শতাংশ জুড়ে ছিলেন এই অভিনেতা।
তৃতীয় শ্রেণি থেকেই রাজনীতি
শৈশবে স্কুলের একটি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতে নেন হাসান ইমাম। এই পুরস্কার বিতরণ করবেন ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট বেল। পুরস্কার ঘোষণার আগে দশম শ্রেণির এক ছাত্র তাঁর কানে কানে এসে বলেন, ‘শোন, আমি তো দৌড়ে প্রথম হয়েছি। আমার নাম সবার আগে ডাকবে। তখন আমি দাঁড়িয়ে বলব, ইংরেজের হাত থেকে পুরস্কার নেব না। তখন তোরা আমার সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে যাবি।’ হাসান ইমাম তখন তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। সেই থেকেই তাঁর রাজনীতি শুরু। তিনি বামপন্থী ছাত্রদের সংগঠন ‘কিশোর সংঘ’–এ যোগ দেন।
বেণি কাটার ফল
কলেজে নির্বাচন প্রার্থী হয়েছিলেন হাসান ইমাম। প্রচারণায়ও এগিয়ে ছিলেন। হঠাৎ করেই ছোট একটি দুর্ঘটনা ঘটে। তাঁদের শ্রেণিতে ১১৭ জন মেয়ে ছিল। হঠাৎ একদিন পেছন থেকে একটি ছেলে একটি মেয়ের চুলের বেণি কেটে দেন। প্রতিবাদে মেয়েরা এক জোট হয়ে সিদ্ধান্ত নেন কোনো ছেলে প্রার্থীকে ভোট দেবেন না। হাসান ইমাম পরে অবশ্য মেয়েদের বুঝিয়েছিলেন এতে তাঁর কোনো দোষ নেই। অনেক জল গড়িয়ে সেবার মেয়েরা তাঁকে ভোট দিতে রাজি হয়েছিলেন।
নায়িকা চরিত্রে প্রথম অভিনয়
কলেজে পড়াশোনার সময়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে কংগ্রেসের ছাত্ররা বেশি এগিয়ে থাকতেন। বামদের নেতা ছিলেন তুষারকান্তি লাল। তিনি হাসান ইমামকে বলেন, এবার একটি নাটকের মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করো। আমাদেরও এগিয়ে থাকতে হবে। বন্ধুরা মিলেই নাটকের পাত্রপাত্রী হন। প্রথম সেই নাটকে তিনি নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন। পরে ১৯৬০ সাল থেকে তিনি অভিনয়ে নিয়মিত হন।
ছদ্মনাম সালেহ আহমেদ
২৫ মার্চের পর তিনি মুজিবনগর চলে যান। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন। সেই সময় তিনি সালেহ আহমেদ ছদ্মনামে বাংলা খবর পাঠ করতেন।
দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় অবাক
১৯৫২ সালে অল ইন্ডিয়া ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে রবীন্দ্রসংগীতে প্রথম হয়েছিলেন হাসান ইমাম। তাঁর গান শুনে অবাক হয়েছিলেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। হাসান ইমামকে সেই সময় বিনা পারিশ্রমিকে গান শেখানোর প্রস্তাব করেছিলেন তিনি।
লায়লা হাসানকে সেদিন চোখে পড়েনি
১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীতে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নানা আয়োজন ছিল। সেখানে তিনটি নাটকে অভিনয় করেন হাসান ইমাম। অন্যদিকে নৃত্য পরিবেশন করেন লায়লা হাসান। সেদিনই প্রথম হাসান ইমামকে দেখেন লায়লা হাসান। কিন্তু লায়লা হাসান তখন এতটাই শিশু ছিল যে তাঁর দিকে হাসান ইমামের চোখই যায়নি। পরে ১৯৬৫ সালে ৩০ জুন তাঁদের বিয়ে হয়।
অভিনয়ের কারণে বিয়ে ভাঙতে বসেছিল
তখন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে চাকরি করতেন হাসান ইমাম। এই শাখায় সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন দেওয়া হতো। এখানে বেতন নিতে আসা এক ভদ্রলোক হাসান ইমামকে মঞ্চে অভিনয়ের কারণে চিনতেন। সেসব নাটকের প্রশংসা করে হাসান ইমামকে বলতেন, আপনি কেন সিনেমায় অভিনয় করেন না। তাঁদের মধ্যে ভালো পরিচয় ছিল। পরে সেই লোকেরই মেয়ের সঙ্গেই তাঁর বিয়ের কথা হয়। তখন হাসান ইমামকে দেখে আর বিয়েতে রাজি হননি তিনি। বলেছিলেন, যে ছেলে অভিনয় করে, তাঁর সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবেন না।
এই অভিনয়ই আবার বিয়ে জোড়া লাগিয়েছিল
পাত্র অভিনয় করেন শুনে হাসান ইমামের নানাশ্বশুর কিছুটা কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে আসেন। হাসান ইমামকে বললেন, ‘তোমার সঙ্গে নাতনির বিয়ে দিতে পারি, তুমি কেমন অভিনয় করো দেখব।’ তখন এই অভিনেতার ‘অনেক দিনের চেনা’ সিনেমাটি তৃতীয় সপ্তাহে হলে চলছে। নানাশ্বশুরকে নিয়ে তিনি সিনেমা হলে গেলেন। সিনেমাটি দেখা শেষে বললেন, ভালোই অভিনয় করো, বিয়ে দেওয়া যায়।
ভালো ছেলে
বেশির ভাগ সময় তিনি মেয়েদের কাছে ছিলেন ভালো ছেলে। অনেক সময় দু-একজন মেয়েকে পছন্দ হলেও দুই পা এগিয়ে ১০ পা পিছিয়ে যেতেন। হাসান ইমাম একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি একটা ভালো ছেলে, কীভাবে প্রস্তাব দেব। তারা কী বলে, এই ভেবে আর প্রস্তাব দেওয়া হতো না।’