পরের তরে তাঁদের পোস্ট

কাজের খবরের পাশাপাশি প্রায়ই সচেতনতামূলক নানা পোস্ট করেন তাঁরা

এই বর্ষায়ও সারা দেশে বজ্রপাতে মারা গেছে কয়েক শ মানুষ। সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মানলে মৃত্যুর এই সংখ্যা অনেক কমিয়ে আনা যায়। কদিন আগে বজ্রপাত থেকে বাঁচার কৌশল নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন অভিনেত্রী মেহ্‌জাবীন চৌধুরী। ১৩ হাজারের বেশি শেয়ার হয় সেটি। ‘একজন হারিয়ে গিয়েছেন’, এই পোস্ট শেয়ার হয়েছে শতাধিক।

মেহ্‌জাবীনের প্রোফাইল ঘুরে দেখা যায়, কাজের খবরের পাশাপাশি প্রায়ই সচেতনতামূলক নানা পোস্ট করেন তিনি। মেহ্‌জাবীন বলেন, ‘সব সময় তো সবকিছু এড়িয়ে যাওয়া যায় না। কিছু কাজ আছে, ঘরে বসেই করা যায়। এতে মানুষের অনেক উপকার হয়। যতটুকু উপকার করতে চাই, সেটা হয়তো সাধ্যের বাইরে, সব সময় করাও হয় না। কিন্তু একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে যদি কারও কাজে আসতে পারি, এটা অনেক বড় পাওয়া।’ সেসব পোস্টের বিপরীতে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায় প্রচুর। ‘আপনার জন্য আমরা এত সহজে আমার বোনের রক্ত পেয়েছি।’ বহু মানুষকে লিখতে দেখা যায়, ‘ধন্যবাদ আপু, আমাদের সাবধান করার জন্য’, ‘এমন পোস্ট দেওয়ায় আপনার ভক্ত হিসেবে কৃতজ্ঞ’, ‘থ্যাংকস কিছু অজানা জানা হয়ে গেল, এমন পোস্ট দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপু।’

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব
ফেসবুক থেকে সংগূহীত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের পোস্ট দেন রুনা খান, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, শবনম ফারিয়া প্রমুখ তারকা। কারও জরুরি রক্ত প্রয়োজন, কেউ হারিয়ে গেছেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সতর্কতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা ধরনের সচেতনতামূলক পোস্ট দেন তাঁরা।

মাদক, নারী হয়রানি, সামাজিক অবক্ষয়ের মতো বিষয়ে সচেতনতামূলক নাটকে অভিনয় করেন অপূর্ব। দায়বদ্ধতা থেকে পর্দায় বাইরে ব্যক্তিগত জীবনেও সামাজিক কাজগুলো করেন এই শিল্পী। ভক্তদের সতর্ক করতে নিয়মিত সচেতনতামূলক নানা রকম পোস্ট করেন তিনি। এ ধরনের কাজের উৎসাহ কোত্থেকে পেলেন? অপূর্ব বলেন, ‘কেউ বিপদে পড়েছেন দেখলেই আগে বিষয়টির সত্যতা জানার চেষ্টা করি। নিশ্চিত হয়ে পরে আমার ফেসবুক পেজে পোস্ট করি। বন্ধু-স্বজন, ভক্ত অনেকেই আমার ফেসবুকে যুক্ত। সে জন্য পোস্টগুলো কাজ করে। এসব কাজ করতে ভক্তরাও অনেক সময় অনুরোধ করেন। মানবিক জায়গা থেকে মাঝেমধ্যে কাজগুলো করতে ভালো লাগে।’

রুনা খান

প্রয়োজন ছাড়া ফেসবুক তেমন ব্যবহার করেন না অভিনেত্রী রুনা খান। যতটা সময় কাটান, চেষ্টা করেন ভালো কিছু করতে। এই অভিনেত্রীকে প্রায়ই দেখা যায়, জরুরি রক্ত বা স্বাস্থ্য সমস্যার আহ্বানগুলো ছড়িয়ে দেন। ভক্তদের অনুরোধ করেন, যেন সবাই সাধ্যমতো সাহায্যে এগিয়ে আসেন। রুনা বলেন, ‘কিছু মানুষ আমাকে চেনেন। ফেসবুকে তিন লাখের মতো মানুষ আমাকে অনুসরণ করেন। এর মধ্যে তিনজনও যদি উপকৃত হন, এটাই আমার কাছে অনেক বড়। মানুষের মধ্যে পজিটিভ ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে চাই।’

একবার এক রোগীর ৪০ ব্যাগ রক্তের দরকার হয়। দুই ঘণ্টার মধ্যে রক্ত না পেলে রোগী মারা যেতে পারেন। এ রকম এক রোগীর জন্য এক ভক্ত শবনম ফারিয়াকে একটি পোস্ট দিতে অনুরোধ করেন। ফারিয়া সাড়া দেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রক্ত জোগাড় হয়। সেদিন দারুণ মানসিক শান্তি পেয়েছিলেন ফারিয়া। সেদিনের পর থেকে নিয়মিত জরুরি রক্তের প্রয়োজনে ফেসবুকে পোস্ট দেন এই অভিনেত্রী। ফারিয়া বলেন, ‘আমার ডায়াবেটিস আছে। এ জন্য আমার রক্ত কেউ নিতে চান না। রক্ত দিতে না পারাটা আমার জন্য কষ্টের। এ জন্য চেষ্টা করি নিয়মিত মানুষকে ব্লাড জোগাড় করে দিতে। এমন নয় যে এ কাজে আমার ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দিতে হয়। আমি শুধু মাধ্যম হিসেবে দাতা ও গ্রহীতাকে সংযোগ করিয়ে দিই।’

পথের কুকুরকে খাওয়াচ্ছেন জয়া আহসান। ছবি: ফেসবুক থেকে

দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। তারকাখ্যাতিকে ইতিবাচক সামাজিক শক্তি করে তুলতে তৎপর তিনি। মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রাণ–প্রকৃতির ক্ষতিতে সরব হয়ে ওঠেন তিনি। কমনওয়েলথের উদ্যোগে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আওয়াজ তুলেছেন পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে। মহামারিতে পথের কুকুরদের খাইয়েছেন, নেমেছিলেন তাদের জীবন রক্ষার আইনি লড়াইয়েও। জয়া আহসান বলেন, ‘এসবের জন্য গর্বের কিছু নেই। মানুষ হিসেবে এগুলো আমার কর্তব্য।’