পেশা বদলেছেন সেই নিঃস্ব নির্মাতা, কথা রাখেননি অনেকেই

‘গন্তব্য’ ছবিটি বানাতে গিয়ে নির্মাতা অরণ্য পলাশকে সহায়–সম্বল হারাতে হয়
ছবিঃ সংগৃহীত

‘গন্তব্য’ ছবিটি বানাতে গিয়ে নির্মাতা অরণ্য পলাশকে সহায়–সম্বল হারাতে হয়। কোনো কুলকিনারা না পেয়ে একসময় ঢাকার একটি হোটেলে কাজ শুরু করেন তিনি। এ ঘটনা গণমাধ্যমে আসে। সেই সময় অনেকেই কথা দিয়েছিলেন তাঁর পাশে থাকবেন। পরে দু-একজন তাঁর পাশে থাকলেও অনেকেই কথা রাখেননি। তাঁকে বাধ্য হয়ে আবার অন্য পেশায় যেতে হয়েছে। সম্প্রতি এই নির্মাতার ‘গন্তব্য’ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। আপাতত আর কোনো ছবি করছেন না তিনি।

চার বছর আগে শুরু হয়েছিল ‘গন্তব্য’ ছবির শুটিং। এ ছবির শুটিং শেষ করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে সুদে ঋণ নিতে হয়েছিল নির্মাতা অরণ্য পলাশকে। বিক্রি করতে হয়েছিল জমি ও তাঁর স্ত্রীর গয়না। পরে ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে তিনি আর সিনেমা মুক্তির পথে এগোতে পারছিলেন না। পাওনাদারেরা প্রতিদিনই টাকা চাইতেন। এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে তাঁকে ২৫০ টাকা দিনচুক্তিতে কাজ নিতে হয়েছিল হোটেলে।

ফেসবুকে তেমন একটা প্রচারণায় ছিলেন না পলাশ
ছবিঃ সংগৃহীত

সে সময় তথ্যমন্ত্রী তাঁকে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এক লাখ টাকা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেকেই তাঁকে আবার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন নতুন করে সৃজনশীল পেশায় থাকতে। কিন্তু সেই স্বপ্ন তিনি এখন আর দেখতে পারেন না।

তিনি বলেন, ‘মানুষ শুধু কথা বলার জন্য বলে। আমাকে অনেক মানুষ বলছিলেন, “ভাই আমি, আমরা আপনার পাশে আছি। আপনি কাজ শুরু করেন, সবাই মিলে সহযোগিতা করব। আপনি আর একা নন।” তখন কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছিলাম। যখন আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করি, তখন দেখি আমার পাশে কথা দেওয়া অনেক মানুষ নেই।’ পরে আবার একা হয়ে যান পলাশ। সে জন্য ছবিটি মুক্তির প্রক্রিয়ায় এগোতে দেরি হয়ে যায়। তাঁর মতে, অনেকে তো সহযোগিতা করেনইনি, ছবিটি নিয়ে যখন মুক্তির পথে এগোচ্ছেন, তখন অনেকেই ছবি মুক্তির পথে বাধা সৃষ্টি করতে চেয়েছেন।

, ছয় বন্ধু মিলে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং সেই চলচ্চিত্র সারা দেশে প্রদর্শন করানোর ঘটনা নিয়ে গড়ে উঠেছে সিনেমার কাহিনি।

প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে সবাই যখন বেছে নিচ্ছেন ফেসবুককে, তখন ‘গন্তব্য’ মুক্তির আগে থেকেই ফেসবুকে তেমন একটা প্রচারণায় ছিলেন না পলাশ। তবে মাঝেমধ্যে ফেসবুকে ঢুঁ মারেন। দেখেন প্রয়োজনীয় কোনো বার্তা কেউ দিয়েছেন কি না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া অনেকেই আমার ফেসবুকে আছেন। আমি তাঁদের চেহারা দেখতে চাই না। তাঁরা সুবিধাবাদী মানুষ। তাঁদের দেখলেই কষ্ট হয়। আমি এখন আমার মতো করে চলতে চাই। সে জন্যই অন্য পেশায় কাজ করছি।’ তিনি জানান, হোটেলে কাজ ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি বাসাতেই ছিলেন। আবার শুরু হয় ঋণের চাপ। ঋণের চিন্তায় দুবার তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন, স্ট্রোকও করেছিলেন। সে সময় বাবার জন্য তাঁর কাছে ওষুধ কেনার টাকাও ছিল না। কারও কাছে পাননি কোনো সহযোগিতা।

পরে উপায় না পেয়ে তিনি নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের কাছে যান। গিয়ে বলেন দুর্দশার কথা। তাঁর কথা শুনে মোরশেদুল ইসলাম পলাশকে একটি নিউজ চ্যানেলে চাকরির ব্যবস্থা করেন। সেখানেই তিনি নিয়মিত কাজ করছেন। নির্মাণে ফেরা প্রসঙ্গে তিনি জানান, আপাতত তাঁর নির্মাণের ইচ্ছা নেই। যে কাজ করছেন, সেটিই তিনি মনোযোগ দিয়ে করে যেতে চান। সময়–সুযোগ পেলে চেষ্টা করেন চিত্রনাট্য লেখার।

পলাশ বলেন, ছবিটি যদি সিনেপ্লেক্সের বাইরে হলে মুক্তি পেত, তাহলে আরও কিছু দর্শক ছবিটি দেখতে পারতেন।
ছবিঃ সংগৃহীত

১৯ মার্চ মুক্তি পাওয়া তাঁর ‘গন্তব্য’ ছবিটি দেখে অনেকেই প্রশংসা করেছেন। পলাশ বলেন, ছবিটি যদি সিনেপ্লেক্সের বাইরে হলে মুক্তি পেত, তাহলে আরও কিছু দর্শক ছবিটি দেখতে পারতেন। জানা গেল, ছবিটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রস্তুতি চলছে দেশের বাইরে মুক্তি দেওয়ার এবং বেশ কিছু চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি মুক্তি পাবে। এ ছাড়া পরিস্থিতি ভালো হলে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে মুক্তি পাবে। ছবিটি শিগগির ইগল মিউজিক ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পাবে। নির্মাতা জানান, ছয় বন্ধু মিলে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং সেই চলচ্চিত্র সারা দেশে প্রদর্শন করানোর ঘটনা নিয়ে গড়ে উঠেছে সিনেমার কাহিনি। ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন, ফেরদৌস, আইরিন, আফফান মিতুল, এলিনা শাম্মী প্রমুখ।

১৯ মার্চ মুক্তি পাওয়া তাঁর ‘গন্তব্য’ ছবিটি দেখে অনেকেই প্রশংসা করেছেন
ছবিঃ সংগৃহীত