‘শৈশব, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব—সব বয়সেরই আলাদা একটি সৌন্দর্য আছে’: ফজলুর রহমান বাবু
ছবি: প্রথম আলো

‘মেয়েরা বয়স লুকায়। অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু কি কখনো বয়স লুকিয়েছেন?’ প্রশ্ন শুনেই হো হো করে হেসে উঠলেন এই অভিনেতা। হাসি থামিয়ে বলেন, ‘এসব বয়স লুকানোর মধ্যে আমি নেই। আর শৈশব, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব—সব বয়সেরই আলাদা একটি সৌন্দর্য আছে।’ গুণী এই অভিনেতার আজ জন্মদিন। ৬১ বছরে পড়লেন ফজলুর রহমান বাবু। দীর্ঘ তিন যুগের বেশি অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত। পুরোদস্তুর অভিনয়ে আসার জন্য ১৫ বছর আগে কঠিন একটা সিদ্ধান্ত তাঁকে নিতে হয়েছিল। কী সেই সিদ্ধান্ত?

২০ বছর চাকরি ও অভিনয় একসঙ্গে সামলেছেন ফজলুর রহমান বাবু । কিন্তু মনটা তাঁর সব সময় অভিনয়েই পড়ে থাকত।
সংগৃহীত

শৈশবে মঞ্চে তাঁর অভিনয়ের হাতেখড়ি। দিন যত এগোতে থাকে, ততই অভিনয়ের প্রতি ফজলুর রহমান বাবুর ভালোবাসা বাড়তে থাকে। কিন্তু মঞ্চনাটক করে তো আর খেয়েপরে বাঁচা যাবে না। বাধ্য হয়েই তাই সরকারি একটি ব্যাংকে ঢোকেন। ২০ বছর চাকরি ও অভিনয় একসঙ্গে সামলেছেন। কিন্তু মনটা তাঁর সব সময় অভিনয়েই পড়ে থাকত। একসময় সিদ্ধান্ত নিলেন চাকরি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু সিদ্ধান্তটা বাস্তবায়ন করতে তাঁর পাঁচ বছর লেগে যায়। সর্বশেষ ২০০৬ সালে কঠিন এ সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাঁকে। নিশ্চিত একটি ভবিষ্যৎ ছেড়ে অনিশ্চয়তার পথে যাত্রা করলেন? কোনো অনিশ্চয়তা...মুখের কথা কেড়ে নিয়ে সোজাসাপটা ফজলুর রহমান বাবু বলেন, ‘ভালোবাসার টানে মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়ে, রাজা সিংহাসন ছাড়ে। আমি ভালোবাসার টানে চাকরি ছেড়েছি।’ কথাগুলো শেষ করেই আবার হেসে ফেললেন। বোঝা যায়, অভিনয় নিয়ে তিনি সুখেই আছেন।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ফজলুর রহমান বাবু
ছবি: সংগৃহীত

এটাই তো চেয়েছিলেন তিনি, নিজের মতো করে অভিনয় করে যাবেন, কাজে তাঁর স্বাধীনতা থাকবে। চাকরি ছাড়ার পর সেই সুযোগ তিনি পেয়ে যান। বাবু বলেন, ‘তখন অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হচ্ছিল। মনে হয়েছিল, আমি অভিনয় করেই চলতে পারব। কিছু টেলিভিশন চলে আসছে। কাজ কিছুটা বাড়ছিল। মনে হচ্ছিল খেয়েপরে বেঁচেবর্তে থাকতে পারব। এখনো টিকে আছি। এটাই বড় সফলতা।’
কিন্তু শরীরনির্ভর এই পেশাকে অনেকবারই তাঁর কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছে। কী ধরনের ঝুঁকি? জানতে চাইলে এই অভিনেতা বলেন, ‘বাচ্চারা তখনো ছোট ছোট। আমার কিছু একটা হয়ে গেলে কী হবে। শুকরিয়া, এখনো সুস্থ আছি। তবে আমার স্ত্রী প্রথম দিকে নিরাপত্তার কথা ভেবে চাকরির পাশাপাশি অভিনয় করতে বলেন। কিন্তু ভালোবাসা ও পছন্দের কাজের জন্য একটি কাজই মনোযোগ দিয়ে করতে চেয়েছি। আমি তাকে বলতাম, দুইটা কাজ সমান গুরুত্ব দিয়ে হয় না। এ জন্য সারা জীবন আমি অভিনয়কে গুরুত্ব দিয়েছি। আজীবন অভিনয়টাই করে যেতে চাই।’

চরকি’র স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘লাল কাতান নীল ডাকাত’–এ ফজলুর রহমান বাবু
ছবি: প্রথম আলো

জন্মদিনেও শুটিংয়েই আছেন ফজলুর রহমান বাবু। লোকেশন রংপুর। সেখানেই কাজের ফাঁকে দিনটা কাটাচ্ছেন। কঠোর লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন সেভাবে শুটিং করেননি। এখন পুরো সময় কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চান। তাঁর জন্মদিনে অনেক শুভাকাঙ্খী ফেসবুকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। এটা ফজলুর রহমান বাবুর কাছে ভালোবাসার পরম পাওয়া। সফল এই অভিনেতা আশির দশকে প্রথম অভিনয় শুরু করেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৪ সালে ‘শঙ্খনাদ’, ২০১৬ সালে ‘মেয়েটি এখন কোথায় যাবে’, ২০১৭ সালে ‘গহীন বালুচর’ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে ‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান বাবু।