এক্সট্র্যাকশন': দেখা থেকে পাঠকের লেখা

২৪ এপ্রিল নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে হলিউডের ছবি ‘এক্সট্র্যাকশন’। ছবি: সংগৃহীত
২৪ এপ্রিল নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে হলিউডের ছবি ‘এক্সট্র্যাকশন’। ছবি: সংগৃহীত

২৪ এপ্রিল নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে হলিউডের ছবি ‘এক্সট্র্যাকশন’। প্রাথমিকভাবে এই ছবির নাম ছিল ‘ঢাকা’। পরে বদলে যায়। খবর ছড়ায়, ছবির গুরুত্বপূর্ণ অংশে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। তাই সবার প্রত্যাশাও বেড়ে যায়। কিন্তু ছবি মুক্তির পর ভেঙে যায় বাংলাদেশের দর্শকদের মন। এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ছবি নিয়ে চলছে আলোচনা- সমালোচনা। ‘এক্সট্র্যাকশন’ ছবি নিয়ে আমাদের ঠিকানায় পাঠানো পাঠকদের প্রতিক্রিয়া থেকে নির্বাচিত কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো।

‘অ্যাকশন দৃশ্যগুলো একদম হলিউড মানের’,
ইসতিয়াক নাসির, ঢাকা, স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান
‘এক্সট্রাকশন’ দুর্বল গল্পের ওপর নির্মিত দুর্দান্ত অ্যাকশনধর্মী ‘বি’ গ্রেডের এক সিনেমা। সিনেমার মূল প্রাণ হলো এর চিত্রনাট্য। এমন একটা চিত্রনাট্য থাকতে হবে যেখানে চরিত্রগুলোয় গতি থাকবে, সংলাপ এবং প্রতিটা ঘটনার থাকবে যোগসূত্র। এই সিনেমায় যা প্রচণ্ডভাবে অনুপস্থিত। অভিনয়শিল্পী বাছাই, তাঁদের মুখের ভাষা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন ছিল।
তবে অ্যাকশন দৃশ্যগুলো একদম হলিউড মানের। আরও ভালো লেগেছে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে সিনেমাটা নির্মিত হয়েছে দেখে। নেটফ্লিক্স বা হলিউড সামনের দিনগুলোতে আরও যদি বাংলাদেশকে তাদের চিন্তায় রাখে, তাহলে নিঃসন্দেহে, আন্তর্জাতিক মানের সিনেমাগুলোয় আমাদের দেশের কলাকুশলীরা কাজ করার সুযোগ পাবেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সিনেমার জন্য আশার আলো।

‘কোথাও ঢাকাকে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি’
মো. হাসান রাহফি, গ্রিন রোড, ঢাকা
‘এক্সট্র্যাকশন’ মুক্তির আগে যতটা উত্তেজনা কাজ করেছিল, ছবিটা দেখে তার পুরোটাই গলে জল হয়ে গেছে। দেখার পর আমার প্রথমে মনে হয়েছে, ছবিটিকে ‘ঢাকা’ নামে (প্রাথমিক নাম) রিলিজ না দেওয়ায় ভালোই হয়েছে। কেননা আমার ঢাকা মোটেই এমন নয়। ঢাকার ভুলভাল চিত্রায়ণের জন্যই সবকিছু তীক্ষ্ণভাবে চোখে লেগেছে। নির্মাতারা কোথাও ঢাকাকে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। আরও হোমওয়ার্ক দরকার ছিল এবং বাংলাদেশ থেকে একটি ইউনিট সর্বক্ষণ থাকার প্রয়োজন ছিল।
বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার ও উচ্চারণ হয়নি। বানান ভুলগুলো বড় আকারে চোখে পড়েছে। ছবির আবহে প্রায়ই বেজেছে হিন্দি গান। এ ক্ষেত্রে নিজের দেশের একটি কনস্ট্রাকটিভ মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি না থাকার অভাববোধ হয়েছে। ঢাকা এখনো এতটা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েনি যে একজন ড্রাগ লর্ডের ইশারায় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা মাঠে নেমে পড়বে।

‘তাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল’
মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী, কোতোয়ালি, চট্টগ্রাম
প্রথমে এই ছবির জন্য নেটফ্লিক্সকে সাধুবাদ জানাই।
তবে আমার কথা হলো, চাইলে ঢাকা শহরকে আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারত নেটফ্লিক্স। ১০/১৫ মিনিট সময় ব্যয় করলে পুরান ঢাকার কিছু ঐতিহ্য তুলে ধরতে পারত। ছবিতে যা দেখানো হয়েছে, সবই নেতিবাচক।
এখানে আসল বাংলাদেশকে কোনো দিক থেকেই উপস্থাপন করা হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বর্তমানে নেটফ্লিক্স যেহেতু প্রায় সারা বিশ্বের মিডিয়া জগতে রাজত্ব করছে, তাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। যেভাবে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাফিয়ার অধীন দেখানো হয়েছে, তা মোটেও ভালো লাগেনি। বিশ্বের অন্য প্রান্তের মানুষের কাছে বাংলাদেশেকে খুবই বাজেভাবে উপস্থাপন করা হলো।

সাদা চোখের হলুদ ছবি
সিরাজুল আরিফিন, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি।
প্রিয় সুহৃদ, ‘এক্সট্রাকশন’–এর জগতে যাত্রার আগে সামান্য মানসিক প্রস্তুতি নিন। প্রথমত, আপনি ঢুকতে যাচ্ছেন এমন এক পৃথিবীতে, যেটা গড়পড়তা শিক্ষার্থীর কাছে পরীক্ষার প্রশ্নের মতো! খেয়াল রাখবেন, পুরো পৃথিবীতে শুধুই অপরাধ আর দুর্নীতি চলছে। মানুষের মধ্যে মায়া-মহব্বত, দায়িত্ব-কর্তব্যজ্ঞান, ন্যূনতম বাঙালিয়ানা—কিচ্ছু নেই! চোখের সামনে মারামারি দেখেও পাবলিক নিজের মতো পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। দু-চারজনের দাঁড়িয়ে থাকা কেবল মুখ দেখানোর জন্য। চেনা বাংলাদেশকে এই ছবিতে দেখতে পাবেন হলদে আভায় ঢাকা! আর হ্যাঁ, আপনার মন অপরাধসহিষ্ণু হলে নিজেকে প্রস্তুত করে নিন। কারণ, আপনি আরও মারপিট, অ্যাকশন, গোলাগুলি সহ্য করতে চলেছেন।
এবার কাচ্চি-কাবাবহীন এক পুরান ঢাকাকে মেনে নিয়ে অপহরণকেন্দ্রিক এক সিনেমার দিকে যাত্রা শুরু করা যাক। প্রিয় পাঠক, এই সিনেমা চলাকালীন, আপনি বাংলাদেশের বাংলা তেমন শুনবেন না। আর আর্মি ফোস (জি, ফোর্স না, ফোস!) কিংবা অন্য কোনো বাহিনীর সাজ বা আচরণ দেখে বিভ্রান্ত হয়ে ভেবে বসবেন না বাস্তবের বাংলাদেশ এমনই! এই তো, এটাই ‘এক্সট্র্যাকশন’।