নেটফ্লিক্সের পথে বিলিবিলি

নামটা বেশ আদুরে, ‘বিলিবিলি’। এই নাম এখন চীনে বিনোদনের প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে ব্যবহারকারী ও আয়ের দিক থেকে ক্রমে একের পর এক মাইলফলক পার হচ্ছে এটি। সি চিন পিংয়ের দেশে ইউটিউবের তকমা পাওয়া বিলিবিলি এখন এগোচ্ছে নেটফ্লিক্স হওয়ার পথে।

বিলিবিলির শুরুটা হয়েছিল খানিকটা ফেসবুকের মতো করে। ২০০৯ সালে কার্টুন ছবি পোস্ট করার ওয়েবসাইট হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল এটি। ওই সময়ে শু ইই নামের এক বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী ছিলেন মূল উদ্যোক্তা। তাঁর লক্ষ্য ছিল, পরিচিত কয়েকজন কার্টুনপ্রেমীর মধ্যে ওই ঘরানার ছবিগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়ার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। এরপর ধীরে ধীরে এর পরিধি বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে এর জনপ্রিয়তা। প্রাথমিকভাবে অ্যানিমেশনপ্রেমীদের মধ্যে এটি জনপ্রিয়তা পায়। পরে এতে যোগ করা হয় নতুন নতুন সুবিধা। বিশেষ করে ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে জনপ্রিয় ইউটিউবের বিভিন্ন ফিচার যুক্ত হতে থাকে বিলিবিলিতে। তা থেকেই ‘চীনের ইউটিউব’ হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বিলিবিলি।

বিলিবিলি নিয়ে এত কথার কারণ, সম্প্রতি হংকং স্টক এক্সচেঞ্জের সেকেন্ডারি মার্কেটে এ প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত হওয়ার খবর মিলেছে এবং সেখান থেকে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে বিলিবিলি। এ সংবাদেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর নজর কেড়েছে চীনা ইউটিউবটি। জানা গেছে, ইউটিউবের পর এবার চীনের নেটফ্লিক্স হওয়ার পরিকল্পনা করছে বিলিবিলি।

বিলিবিলি ব্যবহারকারীদের নিজস্ব কনটেন্ট প্রকাশ করার সুবিধা দেয়। তবে ইউটিউবের মতো সেই কনটেন্টে বিজ্ঞাপন দেখায় না। ফলে একজন ব্যবহারকারী কোনো বিজ্ঞাপনবিরতি ছাড়াই নিজেদের তৈরি ভিডিও দেখাতে পারেন। চীনের ইউটিউবের ব্যবসার ধরন কিছুটা ভিন্ন। ব্যবহারকারীর তৈরি কনটেন্টের বদলে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় অন্যান্য পণ্যে এবং তা থেকে প্রতিষ্ঠানটির রোজগার মোট আয়ের এক-পঞ্চমাংশের কম। এর মাধ্যমে একটি ‘অনুগত’ ব্যবহারকারী গোষ্ঠী তৈরি করে ফেলেছে বিলিবিলি। আর তাদের কাছেই পরবর্তী সময়ে বিক্রি করা হয় গেমস ও ভার্চ্যুয়াল গিফট। এ ছাড়া অরিজিনাল ও লাইসেন্স করা কনটেন্ট কিনতেও এসব ব্যবহারকারীকে আকৃষ্ট করা হয়। ২০১৮ সাল থেকে নেটফ্লিক্সের মতো অরিজিনাল কনটেন্টের এ ব্যবসা শুরু করেছে বিলিবিলি। গেমস, গিফট ও অরিজিনাল কনটেন্টে আয় ২০১৮ সালে ছিল ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২০ সালে হয়েছে ৮ শতাংশ। শুধু গত বছরই ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বিলিবিলি। আর এর অরিজিনাল কনটেন্টের সাবস্ক্রাইবার আছে ১ কোটি ৪৫ লাখ।

হংকং স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি নিউইয়র্ক ও নাসদাক পুঁজিবাজারেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বিলিবিলি। পুঁজি বাড়ছে ক্রমাগত। টেনসেন্ট ও আলিবাবার মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান এর শেয়ার কিনে নিয়েছে। চীনের এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম শক্তির জায়গা হলো এর ভোক্তাশ্রেণির বয়স। এর ৮৫ শতাংশ ব্যবহারকারীর বয়স ৩৫ বছর বা তার কম। আর এ কারণেই ডোয়েইন জনসনের মতো মারদাঙ্গা হলিউড তারকা সম্প্রতি বিলিবিলিতে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তড়িঘড়ি করে। কারণ, তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে কে না চায়!

তবে নেটফ্লিক্সের মতো বিশ্বজুড়ে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা কখনো প্রকাশ করেনি চীনা ইউটিউব। চীনের তরুণ প্রজন্মকে মাতাতে চায় এ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে কোনো দিনই যে বিলিবিলি বিশ্ববাজারে ঢুকবে না, সেই নিশ্চয়তা কে দিতে পারে!

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, নিক্কেই এশিয়া, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, সিএনবিসি ও ভ্যারাইটি