আরেকটিবার
মাহবুবুল আলম কবীর
বাবা-মায়ের চোখ এড়িয়ে ভরদুপুরে নাটাই হাতে
মাঞ্জা দেওয়া সুতোর টানে মাতব খেলা ভোকাট্টাতে।
শিমুলগাছের তেরছা ডালে আটকে গেলে শখের ঘুড়ি
তরতরিয়ে উঠব গাছে, দেখবে সবাই বাহাদুরি।
বাউকুড়ানির ঘূর্ণিতে যে–ই উড়বে কাগজ, শুকনো পাতা—
তার ভেতরে দৌড়ে ঢ়ুকে ধরব সেসব, ভয় কী ছাতা!
ইশকুলেতে দেখব যখন টিকা দেওয়ার কর্মী ঢোকে—
জানলা দিয়েই ঠিক পালাব, হাসলে হাসুক পাড়ার লোকে।
টিউবওয়েলের মুখটা চেপে পানি খাব ক্ষেত্রবিশেষ
কানের ভেতর কলম দিয়ে প্যাঁচ ঘোরালেই চুলকানি শেষ!
খুব ধারাল চাকু হবে—ঝিনুক ঘষে পলেস্তারায়,
কাঁচামিঠা আমের খোঁজে টহল দেব পাশের পাড়ায়।
গামলা দিয়ে পানি সেঁচে ধরব ডোবার খলসে-পুঁটি,
মাছ না পেলেও সমস্যা নেই, করব কাদায় হুটোপুটি।
গায়ের কাদা শুকায় যদি, চড়চড়িয়ে চামড়া টানে—
পুকুরটাতে ঝাঁপ দেব আর সাঁতরে যাব মধ্যিখানে।
খেলার সাথি আনব ডেকে—ও কমলেশ, ও রব্বানী,
চল রে মাঠে, করব শুরু গোল্লাছুট আর বরফপানি।
যে গলিতে সচরাচর মুরুব্বিদের হয় না ঢোকা—
সেখানটাতেই জমবে আসর, মার্বেলেতে মারব টোকা।
কীভাবে যে বাবার কানে খবরখানা পৌঁছে যাবে,
তার ফলাফল—ফিরলে ঘরে দুষ্টু ছেলে পিট্টি খাবে।
লাল ফড়িংয়ের লেজে ধরে সুতা বাঁধার একটু আগে
পড়ব ধরা মায়ের চোখে, ধমকে দেবেন ভীষণ রাগে!
গোটা কয়েক জোনাক ধরে বাসায় এনে সন্ধ্যারাতে
মশারিতে ছেড়ে দিয়ে আলোর নাচন দেখব তাতে।
বন্ধুরা সব মেলায় যাব বোশেখ মাসের পয়লা দিনে
ভাব দেখাব লাল বা হলুদ পেলাসটিকের চশমা কিনে।
খই-বাতাসা, রঙিন বেলুন, খেলনা কিনে জমবে মেলা—
আরেকটিবার চাইছি তোকে আয় রে আমার ছেলেবেলা।
অন্তর্জাল
শফিক ইমতিয়াজ
এক যে আছে জাদুর সাগর এক ফোঁটা নেই জল তাতে যে
ঢেউয়ের পরে ঢেউয়ের সারি, বইছে অনর্গল তা তেজে
সেই সাগরে ভাসতে তোমার মুক্তমনের পোত তো রাজি?
জানতে পাবে এই জগতের অবাক করা তথ্যরাজি—
ভোট-দুনিয়ায় দৌড়ে আগে কার বা ঘোড়া কার বা হাতি
ডানহাতিদের গুগলি বলে ক্যামনে মারে চার বাঁহাতি
কোন দেশে কোন অচিনপুরে বয় টানা ঝড়, টর্নেডো বা
লাসভেগাসের কোন এলাকা সবচেয়ে বেশি বর্ণে ডোবা!
খেলছে কোথায় পরে গায়ে কী নম্বরের জার্সি নে’মার
ব্রডওয়েতে কোন থিয়েটার, ট্র্যাফিক বেশি কার সিনেমার
কোন নদীতে মাছ থাকে না, জল নাকি সব ফালতু লোনা
কার্ফা ঝুমুর তেওড়া ঝাঁপের করবে যদি তাল তুলনা
কোন শাসকের বাপ ছিল হুন, কিংবা ছিল কার মা তাতার
কোন মাটিতে মিশে গেছে বিশাল বপু হাড় মাথা তার
কোন চালাকির শক্তি বলে খামচে ধরে কার মাটি কে
ফার্নিচারের মজুত কোথায়, তৈরি আসল বার্মাটিকে!
কোন মোড়লের বুদ্ধি বেশি, কার জো পেশি, কার জো কড়ি
কার কতটি যুদ্ধবিমান, কার মিসাইল কার্যকরী
কার ক্ষমতার ধাক্কা বেশি, সামনে পিছে ঊর্ধ্বে শেষে
কোন সাগরের তীরে বসে ঘোরায় ছড়ি দূর দেশে সে!
মরুর বুকে কাঁঠাল ফলে, কিংবা কোথায় আম্র হিমে
কোথায় নতুন সূর্য আনে গৈগেরামের রাম-রহিমে
কোথায় দানব হয় কুপোকাত নব্য দেবতার ঝাড়িতে
কোন মুলুকের চিকিৎসকের সুনাম বেশি সার্জারিতে!
জানবে যদি কাব্যকলায় বিশেষ বিশেষ ঢং কবিদের
আবিষ্কৃত সূত্রসকল বিশ্বসেরা অঙ্কবিদের!
কলকাতাতে কোন গলিতে পাবে ভালো গামছা ঘোলের
ঢাকায় সেরা খাবার মেলে কোথায় পোষা রামছাগলের
কোথায় পাবে মুখরোশনি মিষ্টি বা ঝাল টক ভাজা রে
পাইকারি দর সুই–সুতো আর বোতাম কোথায় চকবাজারে!
খেলবে একা? হাসবে হা হা? নাচবে তা থই? মন দুখু যে
চাও কি তোমার মনের মতো নেবে অনেক বন্ধু খুঁজে?
চাও যা তুমি, পাবেই খুঁজে সবকিছুরই ঠাঁই-ঠিকানা
জানো তো হে এই পৃথিবী প্রকাণ্ড এক আইটিখানা!
আলোর বানে ঝলমলিয়ে উঠছে অহর্নিশ শোভা যার
হাতের মুঠোয় আজকে তোমার সেই ধাঁধানো বিশ্ববাজার!
জানা–শেখা কেনাবেচা—অন্তর্জালের মুক্ত বুকে
মজা লোটো, হেলায় হারায় সব পাবার এই সুখ তবু কে!
এক বিল্ডিংয়ে থাকে সব ওরা
হাসনাত আমজাদ
এই ফ্ল্যাটে থাকে রিদম–রিদিতা, ওই ফ্ল্যাটে থাকে তিন্নি
ঠিক তার পাশে রাইসা–রুবিনা, নিচের ফ্ল্যাটেতে মিন্নি।
ছয়তলা থাকে মিম–নওশীন, সাততলা থাকে হান্না
ওদের মা–বাবা ব্যস্ত ভীষণ, কেউ কারও বাড়ি যান না।
ব্যালকনি থেকে রিদিতারা দেখে হাঁটছে তিন্নি রুমে
রাইসা–রুবিনা দুবোনে পড়ছে, হান্না রয়েছে ঘুমে।
দোতলায় থাকে ফাহিম–শ্রাবণী, নিচতলা থাকে লিজি
এক বিল্ডিংয়ে থাকে সব ওরা, কিন্তু সকলে বিজি।
আছে পড়াশোনা, চাপাচাপি খুব, রয়েছে শাসন কড়া
খেলাধুলা তাই নিজ ঘরে বসে, নেই বেশি নড়াচড়া।
নেই হাঁটাহাটি যায় রিকশাতে কিংবা রয়েছে গাড়ি
ভোরবেলা থেকে প্রস্তুতি নেয় যেতে হবে তাড়াতাড়ি।
নেই চেনাচেনি নেই পরিচয়, হয় শুধু হাই–হ্যালো
কেউ কারও বাড়ি উঁকিও মারে না, দেখে না কে এল গেল।
নেই ডাকাডাকি একা একা ওরা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ছোটে
মুখোমুখি দেখা হয় মাঝে মাঝে লিফটে যখন ওঠে।
সকলের হাতে আছে মুঠোফোন, ইন্টারনেট তাতে
ওটা নিয়ে কাটে ওদের সময় অবসরে কি বা রাতে।
প্রয়োজন আছে কোনো বন্ধুর? এর–ওর বাড়ি যাওয়ার?
চশমা দুচোখে বয়সের সাথে লেন্সের বাড়ে পাওয়ার।
সময়ের স্রোতে ভাসছে সকলে, ভাসে ডিজিটাল ভেলা
ডিজিটাল যুগ পাশাপাশি আজ ডিজিটাল ছেলেবেলা।