খাদি, জামদানি, মসলিন, গামছা, বেনারসি ও পাহাড়ি তাঁত—ঐতিহ্যবাহী কাপড়ের পোশাক দেখা গেল নতুন রূপে। শাড়ির কাপড়ে তৈরি হলো গাউন। খাদি তার চেনা গণ্ডি ছেড়ে টপ, কেইপ বা স্কার্ট হিসেবে মঞ্চ মাতালো।
আর এর সবটাই ঘটেছিল ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর রাজধানীর সামরিক জাদুঘর মাঠে অনুষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক উইভার্স ফেস্টিভ্যাল ২০১৬’-এর মঞ্চে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় আয়োজন ছিল ফ্যাশন শোর। যেখানে বাংলাদেশি ডিজাইনারদের সঙ্গে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের ডিজাইনাররা নিজ নিজ দেশের তাঁতে বোনা কাপড় তুলে ধরেন।
উৎসবের প্রথম দিন খাদি ও জামদানি কাপড়ে তৈরি নানা ধরনের পোশাক দেখানো হয়। যেখানে খাদি কাপড়ে তৈরি শাড়ি, স্কার্ট, টপ, প্যান্ট, কটি ও কামিজ তুলে ধরে ফ্যাশন হাউস অঞ্জনস, প্রবর্তনা ও রিমা নাজ। এসব খাদিতে নানা রং ও নকশা। ব্লক ও বাটিকের কাজ খাদিকে দিয়েছে নতুন চেহারা।
পরের কিউগুলো ছিল জামদানি কাপড়ের ওপরে। শাড়ি ছাড়াও সেখানে দেখানো হয় পাঞ্জাবি, লেহেঙ্গা ও কামিজ। জামদানির সঙ্গে শাড়িতে মখমলের ব্যবহার করেছেন অনেক ডিজাইনার।
জামদানি পর্বে টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির, জিনাত বুটিকস ও মুনস বুটিকের পোশাক তুলে ধরেন মডেলরা। এ ছাড়া প্রথম দিন ভারতের ডিজাইনার অর্ণব সেনগুপ্ত ও বাই লুম ফ্যাশন হাউস তাঁতের পোশাক তুলে ধরে।
দ্বিতীয় দিনে দেখানো হয় গামছা ও অভিজাত মসলিন কাপড়। গামছার কাপড়ে তৈরি শাড়ি, টপ, শার্ট, গাউন, পাঞ্জাবি, ফতুয়া নিয়ে একে একে রানওয়ে মাতান ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হক, আইভি হাসান ও বিশ্বরঙ বাই বিপ্লব সাহা। মসলিনের সংগ্রহ দেখান ওয়াহিদা হোসেন, রেহমা হোসেন, টুটলি রহমান ও সারা করিম। তাঁদের মসলিন শাড়িতে হাতে আঁকা ছবি, আয়না, গ্লিটার নকশায় ছিল নতুনত্ব। শ্রীলঙ্কার ডিজাইনার সিলভারিন তাঁর দেশের তাঁতে বোনা পোশাক তুলে ধরেন।
শেষ দিনে পাহাড়ি তাঁতের পোশাক ও বেনারসি কাপড় তুলে ধরা হয়। এই পর্বে রানওয়েতে পোশাক প্রদর্শন করেন ডিজাইনার তেনজিং চাকমা, আফসানা ফেরদৌসি, ফারজানা মালেক, জেএস ফ্যাশন, লিবাস ও ফারাহ আনজুম বারি। নেপালের ডিজাইনার সুষমা সিং এসেছিলেন কাঁধ খোলা গাউন, চিকন ফিতার গাউন, বিয়ের গাউন, পাঞ্জাবি ও নেপালের ঐতিহ্যবাহী বিয়ের পোশাক নিয়ে।
প্রতিদিনের আয়োজনে ফ্যাশন ড্রামা শিরোনামে খাদি, জামদানি, মসলিন, গামছা ও বেনারসি কাপড়ের পোশাক প্রদর্শন করা হয়। এ পর্বের সব পোশাকের ডিজাইনার ছিলেন টুটলি রহমান ও স্যামিউল হক। মেলায় ১২ জন বুনন শিল্পীকে বিশেষ সম্মাননা এবং মুনিরা এমদাদ, বিবি রাসেল, রুবি গজনবী আর শরৎমালা চাকমাকে দেওয়া হয় আজীবন সম্মাননা।
টিএস ইভেন্টের ব্যানারে পুরো অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেন ফ্যাশন ডিজাইনার টুটলি রহমান। তাঁকে বিশেষভাবে সহযোগিতা করেছেন অলিভিয়া প্রপার্টিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সীমা হামিদ। টুটলি রহমান বলেন, ‘অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের তাঁতিদের নিয়ে কাজ করছি। দিন দিন এ পেশা থেকে তাঁরা সরে আসছেন। তাঁতিদের উৎসাহিত করতেই এ প্রচেষ্টা। তরুণ প্রজন্মের মাধ্যমেই তাঁতশিল্প আবার নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াবে এমনটাই আশা করি।’