তেল নিয়ে তেলেসমাতি কাণ্ডের মধ্যে বেরিয়ে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। অধস্তনের দেওয়া তেল মজুত করে কোটিপতি হয়েছেন কবির হাওলাদার নামের সরকারি এক কর্তা। কেবল দেশে নয়, দেশের বাইরেও এ নিয়ে পড়ে গেছে তুমুল হইচই। কবির হাওলাদারের এত বড় উদ্যোগের খবরে বসে থাকতে পারে না ‘একটু থামুন’। তাই আমরা ছুটলাম তেলের সন্ধানে।
কবির হাওলাদার সরকারি এক প্রতিষ্ঠানের কর্তা। আমরা গিয়েছিলাম তাঁর কার্যালয়ে। অভ্যর্থনাকক্ষে আমাদের দুকাপ চা দেওয়া হলো। চায়ে একটা চুমুক দিতেই সামনে এসে দাঁড়ালেন সময়ের ‘তেলাচিত’ ব্যক্তিত্ব কবির হাওলাদার।
‘চায়ের স্বাদ এমন কেন?’ প্রশ্নটা আমরা করলাম কবির হাওলাদারকেই। বিষয়টা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে তিনি বললেন, ‘অফিসে খুব তেল তো। আমাকে আমার অধস্তনরা তেল দেয়। আমি আমার ঊর্ধ্বতনদের তেল দিই। শুধু তেল আর তেল। তাই চায়ে আমরা পানির বদলে তেল ইউজ করি।’
তেলের কথা শুনে চা আর গলা দিয়ে নামতে চাইল না! যতই দামি হোক, তেলের চা খেয়ে গ্যাস্ট্রিকের যাতনা সওয়ার কোনো ইচ্ছাই আমাদের নেই। আমরা বরং কোটিপতি হওয়ার গল্প শুনি। ন্যায় বা অন্যায়—যে পথেই মানুষ কোটিপতি হোক না কেন, এসব গল্প শুনতে কার না ভালো লাগে!
কবির হাওলাদার শুরু করলেন এভাবে, ‘দেখুন, আপনারা তো বাইরের কেউ নন। এ দেশের আলো-বাতাসেই মানুষ। আপনারা বোঝেন সবকিছু। সরকারি হোক বা বেসরকারি, সব অফিসে আপনি কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী পাবেন, যাদের কাজই হলো তেল মারা। ধরেন, একটা সমস্যার সমাধান করব। যেটা আসলে তেমন কোনো সমস্যাই নয়। তবু তারা বলবে, “বস! আপনি সেরা! এই কাজটা বস আপনি ছাড়া কোনো দিনই সম্ভব ছিল না! আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এত বড় সমস্যার এত সহজ আর সুন্দর সলিউশন কেউ দিতে পারবে না, বস! নান ক্যান ডু ইট, বস!”’
কী বুঝলেন? এভাবেই হাত কচলে তেল বের করি আমরা। আর যে মেশিন দিয়ে এ রকম তেলতেলে কথামালাকে সয়াবিন তেলে কনভার্ট করি, সেটা আপাতত কাউকে দেখাতে চাই না
এর মধ্যেই কবির হাওলাদারের একজন অধস্তন এসে হাত কচলাতে শুরু করলেন, ‘বস, আপনার চয়েসের তারিফ না করে পারা যায় না। আপনি যেনতেন মানুষকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন না। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এনারা বাঘা সাংবাদিক। একদিন হয়তো সাংবাদিকতায় নোবেল পেয়ে যেতে পারেন। সত্যিই বস, আপনার দূরদৃষ্টির প্রশংসা না করে পারি না...!’
কবির হাওলাদার আমাদের দিকে ফিরে মুচকি হাসলেন, ‘কী বুঝলেন? এভাবেই হাত কচলে তেল বের করি আমরা। আর যে মেশিন দিয়ে এ রকম তেলতেলে কথামালাকে সয়াবিন তেলে কনভার্ট করি, সেটা আপাতত কাউকে দেখাতে চাই না। বোঝেনই তো, জাদুকর কখনোই তার কৌশল প্রকাশ করে না। তবে এটা বলতে দ্বিধা নেই, আমি এই তেল মজুত করে আজ কোটিপতি। হা হা হা।’
সয়াবিন তেলের চায়ে চুমুক দিয়ে কবির হাওলাদার আবার শুরু করলেন, ‘দেখুন, তেলতেলে কথামালাকে শুধু যে সয়াবিন তেলে কনভার্ট করি, তা কিন্তু নয়। কিছু তেলতেলে কথামালা এতটাই তেলতেলে যে সেসব কথামালা আমরা বিদেশেও রপ্তানি করি। ব্যাপক চাহিদা। ওয়েট, আপনাদের একটা ভিডিও দেখাই।’
ভিডিওতে একজন মার্কিন ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলছেন, ‘আমি অন্নেক পরিশ্রম করটাম। কিন্তু কোনো প্রমোশন হইতেছিল না। আমি খুবই হটাশ হয়ে পড়ছিলাম। তখন কবিড় শাহেবের কাছ থেকে টেলটেলে কথামালা আমদানি করলাম। এখন আমার বস আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝে না। প্রমোশন হইতেছে ফুল স্পিডে।’
আমরা সাক্ষাৎকার শেষ করব। বললাম, ‘কবির সাহেব, আপনি আসলেই হইচই ফেলে দেওয়ার মতো কাজ করেছেন। আপনি বর্তমানে কেবল দেশের নন, মহাবিশ্বের সেরা উদ্যোক্তা। আপনি কর্মসংস্থানের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছেন। ইউ আর আ জেনুইন জিনিয়াস!’
কবির হাওলাদার হেসে বললেন, ‘ধন্যবাদ! আরও পাঁচ লিটার তেল তৈরি হলো।’