কালজয়ী চিত্রশিল্পী লেওনার্দো দা ভিঞ্চি এবং তাঁর কর্ম নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। তাঁর প্রতিটি চিত্রকর্ম অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রেখে পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলে। তবে এবার তাঁর কর্ম নিয়ে নয়, ভিঞ্চির পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে একটি অভাবনীয় গবেষণা করেছেন গবেষকেরা। ভিঞ্চির পারিবারিক ইতিহাসের জেনেটিক গবেষণা করে তাঁরা জানতে পেরেছেন, এই রেনেসাঁ–শিল্পীর পরিবারের ১৪ জন বংশধর এখনো জীবিত। শিল্পকলার ইতিহাসবিদ আলেসান্দ্রো ভেজোসি ও আগনিসি সাবাতো এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। প্রকল্পের গবেষণা বলছে, এই ১৪ জনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ জনের বয়স ১ বছর। লেওনার্দো দা ভিঞ্চির একটি পূর্ণাঙ্গ জিনিওলজিক্যাল প্রোফাইল দাঁড় করাতেই এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এই প্রোফাইল লেওনার্দোর বিরল প্রতিভাকে বুঝতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বিয়ে করেননি, তাঁর কোনো সন্তানও নেই। তবে তাঁর কমপক্ষে ২২ সৎভাই ছিলেন।
ভেজোসি ও সাবাতোর গবেষণাপত্রটি ২০২১ সালের জুলাই মাসের শুরুর দিকে হিউম্যান ইভল্যুশন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। লেওনার্দোর পরিবারের প্রায় ৬৯০ বছরের ইতিহাস এই গবেষণায় প্রাধান্য পেয়েছে। শুরু হয়েছে ভিঞ্চির দাদা মিশেল থেকে, যাঁর জন্ম ১৩৩১ খ্রিষ্টাব্দে। গবেষণায় ওই পরিবারের ২১টি প্রজন্ম এবং ৫টি পরিবারের শাখা বেরিয়ে এসেছে। আর জানা গেছে, বর্তমানে এই পরিবারের ১৪ জন বংশধর এখনো বেঁচে আছেন। গবেষকেরা এই গবেষণার জন্য সরকারি ও বেসরকারি আর্কাইভ থেকে যাবতীয় দলিল–দস্তাবেজ সংগ্রহ করেছেন। লেওনার্দোর জীবিত বংশধরদের কাছ থেকেও পাওয়া গেছে নানান তথ্য।
গবেষকেরা এই পরিবারের ‘ওয়াই ক্রোমোসোম’ নিয়ে কাজ করছিলেন। এই ক্রোমোসোম ২৫ প্রজন্ম পর্যন্ত অটুট থাকে। ওয়াই ক্রোমোসোম অনুসরণ করেই তাঁরা নিশ্চিত হন, লেওনার্দোর কমপক্ষে ১৪ বংশধর এখনো জীবিত আছে। ২০১৬ সালে এই গবেষকেরা লেওনার্দোর জীবিত ৩৫ জন বংশধর চিহ্নিত করার দাবি করেছিলেন। এই ৩৫ জনের অনেকে এসেছেন ওই বংশের নারীদের দিক থেকে এবং তাঁদের বেশির ভাগই সরাসরি বংশধর নন। যেমন ইতালীয় চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক ফ্রাঙ্কো জেফিরেলিকে লেওনার্দো পরিবারের পরোক্ষ বংশধর মনে করা হয়।
গবেষক ভেজোসি বলছেন, যাঁরা সরাসরি বংশধর নন, তাঁদের কাছ থেকে লেওনার্দোর ডিএনএ–সংক্রান্ত কার্যকর তথ্য পাওয়া যাবে না। আর যাঁরা সরাসরি ওই বংশের সদস্য এবং এখনো জীবিত, তাঁদের বয়স ১ থেকে ৮৫ বছর। তাঁরা এই মুহূর্তে ইতালির ভিঞ্চি শহরে বসবাস করছেন না, তাঁরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন ভার্সিলিয়া অঞ্চলে। গবেষকেরা এ–ও জানিয়েছেন, লেওনার্দোর জীবিত বংশধরেরা বড় কোনো পেশায় যুক্ত নন। কেউ কেরানি, কেউ জরিপকারী, কেউ কারিগরের কাজ করেন। ভবিষ্যতে তাঁদের ডিএনএ নিয়েও গবেষণা হবে এবং তাঁদের ওয়াই ক্রোমোসোমের সঙ্গে তাঁদের পূর্বপুরুষদের ক্রোমোসোমের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হবে।
লেওনার্দো একাধারে চিত্রশিল্পী, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও স্থপতি। বলা হয়, ইতালির টাসকানের ভিঞ্চি শহরে ১৪৫২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা ছিলেন একজন নোটারি। লেওনার্দোকে বলা হয় ‘অবৈধ সন্তান’। তিনি ফ্রান্সের অ্যাম্বয়েস শহরে ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে সেন্ট ফ্লোরেনটিন গির্জার কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল। ফরাসি বিপ্লবের সময় সমাধিটি ধ্বংস করে দেওয়া হলে কবর থেকে হাড়গুলো তুলে সেন্ট হুবার্ট গির্জার প্রাঙ্গণে পুনরায় সমাহিত করা হয়।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান