শালা! চালক ছাড়া গাড়িও দেখি আজকাল বকশিশ চাওয়া শিখে গেছে। এই দেশে কোনো সার্ভিস ঠিকমতো চলবে না। শুনেছি, রাস্তার অটোমেটেড ট্রাফিক রোবটও সাইডে চেপে ঘুষ নেয় আজকাল।

লিফটে উঠতে উঠতেই কফি মেশিন চালু করে ফেললাম ফোন থেকে। কফি না পেলে মেজাজ ঠান্ডা হবে না। ঘরে ঢুকতেই কফির ঘ্রাণ এসে লাগল নাকে। আমার স্ত্রীকে দেখলাম মেটাভার্সে কথা বলছে ওর মা-বাবার সঙ্গে। কাছেই বাসা, তারপরও মেটাভার্সে কথা না বললে নাকি ট্রেন্ডি থাকা যায় না। কী আর করা, চোখে ভিআর গ্লাস চাপিয়ে আমিও ঢুকে গেলাম ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায়। শ্বশুর-শাশুড়িকে সালাম করল আমার অ্যাভাটার। সঙ্গে সঙ্গে আমার অ্যাকাউন্টে বিটকয়েন চলে এল—সালামি।

শ্বশুর–শাশুড়ির সঙ্গে কথা শেষ না হতেই মেটাভার্সে ইনভাইট করল শ্যালক। ঈদের কোলাকুলি করল ওর আর আমার অ্যাভাটার। শ্যালক বলল, ‘এবার অনেক খরচা করে মেটাভার্সের ড্রয়িংরুম সাজিয়েছি। কেমন হয়েছে ভাই?’

ভিআর গ্লাসের আড়ালেও স্ত্রীর শীতল দৃষ্টি ঠিকই অনুভব করতে পারলাম। কেনাকাটা তেমন কিছুই করা হয়নি এবার। ভার্চ্যুয়াল আলাপ শেষ হতেই স্ত্রী আমাকে চাপা গলায় বলল, ‘আমার কথা তো কোনো দিন শুনবে না। সংসারের কোন জিনিসটা খেয়াল করো তুমি? কত সুন্দর করে ভার্চ্যুয়াল ঘর সাজিয়েছে ওরা। আর আমাদেরটায় কিছুই নেই। প্রেস্টিজ বলে কিছু থাকল না আর।’

শ্যালক আমার ঈদের দিনটাই মাটি করে দিল। ভিআর গ্লাস চোখে চাপালাম আবার। আরেকটা উইন্ডো খুলে আলাদাভাবে গেমে ইনভাইট করলাম ওকে। খেলায় হারিয়ে যদি কিছুটা শান্তি পাওয়া যায়। শ্যালককে বললাম, ‘ঈদ উপলক্ষে নতুন অ্যাভাটার তৈরি করেছ দেখছি। ভার্চ্যুয়ালি তুমি যেমন ফিট, বাস্তবে তো তা না। অলরেডি ভুঁড়ি চলে গেছে সীমানার বাইরে।’

খেলায় কয়েক পয়েন্ট খুইয়ে শ্যালক তখন রেগে আগুন, ‘অয়েল ইয়োর ওউন ভুঁড়ি, দুলাভাই। আর এ রকম আপত্তিকর কমেন্ট করলে আমি অডিও রেকর্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়ে বডিশেমিংয়ের অভিযোগ করব।’

‘করো।’ আমি বললাম সমান তালে, ‘ঘুষখোরের অভিযোগ কে শুনবে?’

‘কী বলতে চান?’

‘ইলেকট্রিক কারের চার্জিং স্টেশন বসাতে যে তুমি ঘুষ নিয়েছ, সেটার প্রমাণ আছে আমার কাছে। আমিও তাহলে আপলোড করব।’

হঠাৎ ওর অ্যাভাটারটা উঠে দাঁড়াল, ‘আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন, দুলাভাই। এর ফল ভালো হবে না।’

আমিও উত্তেজিত হয়ে বললাম, ‘হুমকি দিচ্ছ নাকি আমাকে? মুখ সামলে কথা বলো। তোমার মতো দুর্নীতিবাজকে আমি ভয় পাই না।’

‘মেটাভার্সে তো খুব বকবক করছেন। পারলে সামনে এসে বলেন না, দেখি কত সাহস।’

‘একটা কাগজে লিখে রাখো—বদরুল খন্দকার।’

‘এটা তো আমার বাবার নাম। লিখে রাখলে কী হবে?’

‘সামনে এসে এমন অ্যাকশন নেব, বাবার নাম ভুলে যাবে।’

‘আয় ব্যাটা, দেখি তোর কত সাহস‍!’

ভিআর গ্লাস আর কনসোল ছুড়ে ফেলে গটগট করে বেরিয়ে গেলাম আমি।

‘আরে, যাচ্ছ কোথায়?’ পেছন থেকে চেঁচিয়ে উঠল আমার স্ত্রী। জবাব দিলাম না আমি। আজকে শালাকে কঠিন একটা শিক্ষা দিতে হবে।

***

পরদিন সব অনলাইন পোর্টালে খবর এল: মেটাভার্সে শালা-দুলাভাইয়ের তর্কাতর্কির জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক, ১৪৪ ধারা জারি।