বাবা দিবস
বাবা, মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও
তাঁরা বাবাকে দেখেছেন ঘরের দেয়ালে টানানো ছবিতে, মায়ের বর্ণনায় কল্পিত অবয়বে। তাঁরা কেউ বাবাকে হারিয়েছেন মাতৃগর্ভে থাকতে, কারও বাবা মারা গেছেন তাঁদের জন্মের পরই। বাবার সঙ্গে তাঁদের কোনো স্মৃতি নেই। অনুভবে থাকা বাবাকে নিয়ে এমন চার সন্তানের লেখা ছাপা হয়েছে ছুটির দিনের মূল রচনায়। এখানে পড়ুন আবদুস সাত্তার আইনীর লেখাটি।
বাবা, তোমাকে যদি বলি, তোমার প্রতি কোনো অনুভূতি আমার নেই, তুমি কি রাগ করবে? তুমি কি মনে করবে, তোমার এই অকৃতজ্ঞ সন্তান পিতার প্রতি কোনো ভালোবাসা পোষণ করে না? আসলে ঠিক তা নয়।
তুমি যেদিন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলে, তখনো আমার পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করতে পাঁচ দিন বাকি। মায়ের গর্ভে থেকেও কি আমি তোমার চলে যাওয়া টের পেয়েছিলাম? মনে করতে পারি না। কিন্তু পৃথিবীর বুকে আসার পর থেকে টের পাচ্ছিলাম যে তুমি নেই। প্রসূতি মায়ের গাঢ় অশ্রু ও লেলিহান দীর্ঘ নিশ্বাসে সিক্ত হচ্ছিল একটি নবজাতক, যার জন্মদাতা কয়েক দিন আগে ক্যানসারে ভুগে চলে গেছে পরপারে। যখন আধো আধো বোলে উচ্চারণ করি কিছু শব্দ, তখন তোমাকে বহু ডেকেছি ‘আব্বা আব্বা’ শব্দে, যেভাবে ডাকে শিশুরা; কিন্তু সাড়া মেলেনি। তোমার দেহের উষ্ণতা, তোমার আদরের পেলবতা আমাকে স্পর্শ করেনি।
যখন কিছুটা বুঝতে শিখেছি, তোমার শূন্যতা অনুভব করেছি; তোমার কথা ভাবতে ভাবতে কতবার যে গণ্ডদেশে নোনতা রেখা জমেছে, চোখের পাপড়িগুলো আঠাল হয়ে উঠেছে, তার কোনো হিসাব নেই। শৈশবে যদিও ভালো ছাত্র ছিলাম এবং ছিলাম পাড়ার বুড়োদের চেয়ে অনেক বেশি সৎ, তারপরও প্রতিদিন কানে এসে বিঁধেছে, ‘তুই শয়তান’, ‘তুই বেকুব’, ‘তুই ইতর’ প্রভৃতি শব্দবাণ। ভেবেছি, তুমি থাকলে হয়তো এসব শব্দ শুনতে হতো না। তোমাকে স্বপ্নে দেখব বলে তোমার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়েছি, কিন্তু তোমার দেখা মেলেনি স্বপ্নেও। কখনো যদি তোমার দেখা মেলে, একটি কথাই বলব, ‘বাবা, মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।’