নিষ্ফলা মৌসুমের প্রথম বড় ম্যাচ

Man u vs Chelsea image
Man u vs Chelsea image

মৌসুমের প্রথম বড় ম্যাচ। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও চেলসির লড়াই বলে কথা। ম্যাচটিকে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল। ছিল উত্তেজনাও। কিন্তু শেষাবধি তা হয়ে থাকল নিষ্ফলা এক প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। খেলাটি গোলশূন্য ড্র হওয়ায় দুই কোচ—ডেভিড ময়েস ও হোসে মরিনহোও রয়ে গেলেন একই সমান্তরালে।
ওয়েইন রুনির জন্য স্মরণীয়ই ছিল কালকের রাত। অনেক দিন পর ইউনাইটেডের প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়ে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে মেলে ধরলেন। সম্প্রতি রুনিকে দলভুক্ত করার জন্য চেলসির দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর কাল ময়েসের প্রথম একাদশে রুনির অন্তর্ভুক্তিকে অনেকে ‘মাইন্ড গেম’ বললেও মাঠে রেমে রুনি নিজেকে চিনিয়েছেন বারবারই। তিনি কাল প্রমাণ করেছেন, কোনোভাবেই ডাগ আউটের ছায়ায় বসে সময় কাটানোর খেলোয়াড় তিনি নন। চেলসির গোলরক্ষক পিতওর চেককে পরীক্ষায় ফেলেছেন বেশ কয়েকবার। ম্যাচ শেষে চেলসির কোচ হোসে মরিনহো স্বীকার করেছেন, ২৭ বছর বয়সী রুনিকে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে না নিতে পারা একটা বড় ব্যর্থতাই।
কাল রুনির পারফরম্যান্স এমন পর্যায়ে ছিল, যেখানে এই মুহূর্তে ইউনাইটেডও তাঁকে হাতছাড়া করতে চাইবে না। ব্যাপারটা স্বীকার করেছেন মরিনহোও, ‘রুনির খেলা যা দেখলাম, তাতে ইউনাইটেড তাকে কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চাইবে না।’
আগেই বলা হয়েছে নিষ্ফলা এই ম্যাচ। কাগজে-কলমে উত্তেজনা ছড়ালেও মাঠের লড়াই মন ভরাতে পারেনি সমর্থককুলের। তবে দ্বিতীয়ার্ধে চেলসির বক্সে ফ্রাঙ্ক ল্যামপার্ডের হাতে বল লাগলে পেনাল্টির দাবিতে উচ্চকিত হয়েছিলেন ইউনাইটেডের খেলোয়াড়েরা। রেফারি সেই দাবি নাকচ করে দিলে তা উত্তেজনা ছড়ায় কিছু সময়ের জন্য।

কালকের ম্যাচটি ছিল ঘরের মাঠে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার হিসেবে ডেভিড ময়েসের প্রথম পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় ময়েস ব্যর্থ, নাকি সফল—তার নিষ্পত্তি না হলেও দলের খেলায় তিনি খুব একটা অখুশি নন, ‘আমার মনে হয়, ইউনাইটেড খুব একটা খারাপ খেলেনি। কিন্তু গোলের সুযোগ তৈরি ও তা কাজে লাগানোতে ঘাটতি ছিল বলেই ম্যাচটা জেতা হয়নি।’

পেনাল্টি বঞ্চিত হওয়া নিয়ে সরাসরি কথা না বললেও ময়েস পরোক্ষে রেফারিরই সমালোচনা করেছেন, ‘আসলে আমি পেনাল্টি দাবির মুহূর্তটি ভালোভাবে দেখিনি। তবে আমার মনে হয়, রেফারিদের কাছে এখনো পরিষ্কার নয়, কোনটি পেনাল্টি দেওয়ার হ্যান্ডবল, কোনটি নয়।’

পুরো খেলাতেই কাল চেলসির কোচ হোসে মরিনহোর উপস্থিতি ছিল টাচলাইন বরাবর। হাবভাবে বারবারই উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন, কিন্তু তাঁর দল চেলসির খেলা দেখে মনে হয়েছে, শুক্রবার উয়েফা সুপার কাপে শক্তিধর বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে যথেষ্ট ‘হোমওয়ার্ক’ দরকার তাদের।

তবে কালকের খেলা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন মরিনহো, ‘এটা ঠিক যে আমরা খেলাটিতে জিতিনি। তবে এটা তো ঠিক, আমরা ম্যাচটি হারিওনি।’

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রথম একাদশে কাল রুনি ছিলেন—এটা ছিল ম্যাচের বড় ঘটনা। কিন্তু একাদশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মরিনহোও কম যান না। কাল চেলসির প্রথম একাদশে ছিলেন না ফার্নান্দো তোরেস ও রোমেলু লুকাকু। ফর্মেশনেও এনেছিলেন পরিবর্তন। অস্কার, ইডেন হ্যাজার্ড ও কেভিন ডি ব্রুইনকে একটু নিচে নামিয়ে ওপরে তুলেছিলেন আন্দ্রে স্কারলেকে।

একাদশে চমক থাকলেও মাঠের লড়াইয়ে ঔজ্জ্বল্য ছড়াতে পারেনি কোনো দলই। প্রথমার্ধে অস্কার দুটি ভালো সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি। তাঁর শট সরাসরি প্রতিহত করেন ইউনাইটেড গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়া। প্রথমার্ধেই সাইড নেটে মেরে দারুণ এক সুযোগ নষ্ট করেন ইউনাইটেড স্ট্রাইকার রবিন ফন পার্সি।

দ্বিতীয়ার্ধে ওয়েইন রুনির পাস থেকে বল বাইরে মারেন ড্যানি ওয়েলবেক। এই অর্ধের বড় ঘটনা ছিল ইউনাইটেডের পেনাল্টির দাবি। চেলসির বক্সের মধ্যে টম ক্লেভারলির শট ফ্রাঙ্ক ল্যামপার্ডের হাতে লাগলেও পেনাল্টি দেননি রেফারি।

খেলার ৫৬ মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। চেলসির বক্সের মধ্যে রুনি বল পেয়ে তা বাড়িয়ে দেন ওয়েলবেকের দিকে। কিন্তু ওয়েলবেক তা বাইরে মেরে নষ্ট করেন। এর কিছুক্ষণ পরেই গ্যারি কেহিলের শট ডি গিয়াকে কিছুটা পরীক্ষায় ফেললে তা গোলের জন্য যথেষ্ট ছিল না। প্রচেষ্টা-পাল্টা প্রচেষ্টার ম্যাচ এভাবেই সম্ভাবনা তৈরি করলেও তা ফল নির্ধারণে যথেষ্ট ছিল না।

মৌসুমের প্রথম বড় ম্যাচের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত তাই পরিণত হয় গোলহীন এক প্রদর্শনীতে। সূত্র: রয়টার্স।