'আম্মা' হারানোর ধাক্কা সামলাতে পারবে এআইএডিএমকে?

চেন্নাইয়ের সব পথ ছিল অ্যাপোলোমুখী। গতকাল সকাল নাগাদই নেতারা বুঝে ফেলেন, তাঁদের ‘আম্মা’ জয়ললিতার সুস্থ হয়ে ফিরে আসাটা এখন নিতান্তই দৈবনির্ভর। এ অবস্থায় রাজ্যের শাসক দল এআইএডিএমকের বিধায়কেরা এখন উত্তরাধিকারের চিন্তায় মশগুল।
হওয়ারই কথা। কারণ, ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ছয়বারের মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা সুস্থ থাকা অবস্থায় উত্তরাধিকারের প্রশ্নটির মীমাংসা করে যেতে পারেননি। কিন্তু তা করলেও যে প্রশ্ন গোটা দেশে উঠে গেছে, জয়ললিতাহীন তামিলনাড়ু এবং ভারতীয় রাজনীতির প্রবাহ কী রকম হবে।
এআইএডিএমকের স্রষ্টা এম জি রামচন্দ্রনও তাঁর উত্তরাধিকার ঠিক করে যাননি। কাজেই তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী জানকি রামচন্দ্রন মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসলেও অচিরেই দলের রাশ জয়ললিতারই হাতে চলে আসে। জয়ললিতার আকর্ষণ, ইংরেজি জ্ঞান, ক্ষুরধার রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি এবং নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতার কাছে জানকি দ্রুত ম্লান হয়ে যান। দলের হাল সেই যে পুরোপুরি তাঁর হাতে চলে গেল, সেই থেকে আজ পর্যন্ত তা বিন্দুমাত্র ঢিলে হয়নি। দুর্নীতি ও আয়বহির্ভূত সম্পত্তি রাখার অভিযোগে দুবার দোষী প্রতিপন্ন হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রিত্ব চলে গেলেও রাজ্যে তাঁর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। দুবারই জয়ললিতা অস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন বিশ্বস্ত অর্থমন্ত্রী পনিরসেলভামকে। গতকাল সোমবার দুপুরে দলের অধিকাংশ সদস্য অ্যাপোলো হাসপাতালে গিয়ে যখন জানতে পারেন, ‘আম্মার’ ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রায় দূর অস্ত, তখন তাঁরা পনিরসেলভামকেই তাঁদের পরবর্তী নেতা হিসেবে বেছে নেওয়ার পক্ষে মত দেন।
পনিরসেলভাম উত্তরাধিকারী হলেও এটা বলা যায়, তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে একটা অনিশ্চিত যুগ সৃষ্টি হতে চলেছে।
অনিশ্চয়তার একটা কারণ যদি হয় জয়ললিতাহীন এআইএডিএমকেতে গভীর শূন্যতা, দ্বিতীয় কারণটি তাহলে রাজ্যের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ডিএমকের প্রাণপুরুষ এম করুণানিধির অসুস্থতা। ৯২ বছরের করুণানিধিও এক সপ্তাহ ধরে চেন্নাইয়ের হাসপাতালে ভর্তি। তবে তিনি তাঁর উত্তরাধিকারের প্রশ্নটি অমীমাংসিত রেখে যাননি। দুই পুত্র স্ট্যালিন ও আলাগিরির মধ্যে ক্ষমতার যে লড়াই শুরু হয়েছিল, জীবদ্দশাতেই করুণানিধি তার মীমাংসা করে গেছেন। আলাগিরি দল থেকে বহিষ্কৃত। দলের ভার পুরোপুরি স্ট্যালিনের হাতে। সন্দেহ নেই, জয়ললিতাহীন এআইএডিএমকে-কে স্ট্যালিন তিষ্টোতে দেবেন না। বর্তমান বিধানসভায় জয়ললিতা ১৩৪টি আসন জিতলেও ডিএমকেরও রয়েছে ৯৮টি আসন।
জয়ললিতা না থাকলে তাঁর দলও কতটা অটুট থাকবে, সেই প্রশ্নও প্রাসঙ্গিক। রাজ্যে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে, তার সুযোগ কংগ্রেস ও বিজেপি অবশ্যই নিতে চাইবে। জয়ললিতা তাঁর নিজের শর্তে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যেভাবে এত দিন প্রভাব খাটিয়ে এসেছেন, পরবর্তী নেতা পনিরসেলভাম সেই দক্ষতা কতটা পালন করতে পারবেন, সেই প্রশ্নও বড় হয়ে উঠছে।