মিয়ানমারে রয়টার্সের ২ সাংবাদিকের রিমান্ড বাড়ল

গ্রেপ্তারের পর পরিবারের সঙ্গে দেখা মেলেনি তাদের। আজ আদালতে হাজিরের জন্য আনা হলে সেখানে ছুটে আসেন স্বজনেরা। ভাইকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাংবাদিক কিয়াও সো ওও। ছবি: রয়টার্স
গ্রেপ্তারের পর পরিবারের সঙ্গে দেখা মেলেনি তাদের। আজ আদালতে হাজিরের জন্য আনা হলে সেখানে ছুটে আসেন স্বজনেরা। ভাইকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাংবাদিক কিয়াও সো ওও। ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারে আটক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের আরও দুই সপ্তাহের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন দেশটির আদালত। গ্রেপ্তারের পর আজ বুধবার তাঁদের প্রথমবার জনসমক্ষে আদালতে হাজির করা হলে।

অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট আইনে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা এই আইনে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হলেন ওয়া লোন (৩১) ও কিয়াও সো ওও (২৭)। দুজনই মিয়ানমারের নাগরিক।

দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের খবর সংগ্রহের সময় তাঁরা কিছু নথি সংগ্রহ করেছিলেন। ইয়াঙ্গুন শহরের উপকণ্ঠে পুলিশের নিমন্ত্রণে নৈশভোজে ডেকে তাঁদের আটক করা হয়।

আটকের পর পরিবারের সঙ্গে তাঁদের দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। আজ আদালতে আনলে সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের তৈরি হয়।

বোনের সঙ্গে দেখা হওয়ায় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন কিয়াও সো। তিনি এএফপির মাধ্যমে তাঁর সাংবাদিক বন্ধুদের বিস্তারিত মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেন। বলেন, ‘দয়া করে সাংবাদিক বন্ধুদের সাবধানে থাকতে বলবেন। এটি সত্যি ভয়ের। আমরা ভুল কিছু করিনি।’

আদালত চত্বর থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সাংবাদিক ওয়া লোন। ছবি: রয়টার্স
আদালত চত্বর থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সাংবাদিক ওয়া লোন। ছবি: রয়টার্স

আদালতে ওয়া লোন এএফপিকে বলেন, ‘তারা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেনি।’

বিচারক ওহন মায়িন্ট তাঁদের রিমান্ডের মেয়াদ ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এখনো তদন্ত চলছে।

এ ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে আজ তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়।

আদালতের বাইরে ওই দুই সাংবাদিকের আইনজীবী থান জাও অং বলেন, ‘পেশাদার দায়িত্ব পালনের সময় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এত দিন ধরে তাঁদের আটকে রাখাটা অনেকটা কণ্ঠরোধ করে দেওয়ার মতো...এতে আমরা আতঙ্কিত।’

চলতি বছর অন্তত ১৭ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এঁদের মধ্যে দুজন বিদেশি এবং তুরস্কের রাষ্ট্রীয় রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল টিআরটির জন্য কাজ করে মিয়ানমারের এক নাগরিক রয়েছেন। এই তিনজনকে দুই মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘ জানায়, গত আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নিধনের দায়ে দেশটির সেনাবাহিনী দোষী সাব্যস্ত হতে পারে। নির্যাতনের এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

মিয়ানমার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এমনকি তারা গণমাধ্যমের ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের রাখাইনের ঢোকার ক্ষেত্রে বাধা দানের বিষয়টিও অস্বীকার করে।