'আসামের ভূমিপুত্র বাঙালিরা'

আসাম থেকে বাংলাভাষীদের বিতাড়নের প্রতিবাদে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আসামের মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ছবি: প্রথম আলো
আসাম থেকে বাংলাভাষীদের বিতাড়নের প্রতিবাদে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আসামের মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ছবি: প্রথম আলো

ভারতের আসাম রাজ্য থেকে বাংলাভাষীদের বিতাড়নের উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে ‘আমরা বাঙালি’ সংগঠন। গতকাল শনিবার কলকাতা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা দাবি করেন, আসামের বাঙালিরা আসামেরই ভূমিপুত্র। শুরু থেকেই এই এলাকায় বসতি স্থাপন করে রয়েছেন বাঙালিরা।

বাংলাভাষীদের বিতাড়নের উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিবাদে অবিলম্বে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলারও আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

‘আমরা বাঙালি’র কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক তারাপদ বিশ্বাস বলেন, ‘আসামে বাঙালিরাই ভূমিপুত্র। কিন্তু প্রচার করা হচ্ছে বাঙালিরা বিদেশি।’ তিনি বলেন, ‘ব্রহ্মদেশ থেকে আগত অহোম জনগোষ্ঠী ১২২৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আসামে বসবাস শুরু করে। তাঁদের আগমনের বহু যুগ আগেই বাঙালি জনগোষ্ঠী আসামে ছিল। আজকের আসামের সংস্কৃতির উৎস কেন্দ্র কামরূপী সংস্কৃতি, যা রাঢ় গাঙ্গেয় সভ্যতা-সংস্কৃতির সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র সংস্কৃতির মিশ্রিত রূপ। তাই অসমিয়দের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার দাবিটি দুর্বোধ্য। সুদীর্ঘ ৮০০ বছর ধরে অসমিয়াদের অস্তিত্ব কোথায়, কখন, কোন ক্ষেত্রে, কীভাবে বিপন্ন হয়েছে তা আদৌ স্পষ্ট নয়। তাই অসমিয়া অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে এমন ধারণা পরিকল্পিতভাবে জাতি বিদ্বেষ প্রচার ছাড়া আর কিছু নয়।’

তারাপদ বিশ্বাস আরও বলেন, এত দিন বাঙালির ভোটে সরকার নির্বাচিত হয়েছে। আজ তারাই বিদেশি হতে চলেছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না, মেনে নেওয়া যাবে না। তাই আমরা বাঙালি সংগঠন লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ‘আমরা বাঙালি’র কেন্দ্রীয় সম্পাদক বকুল চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, দেশভাগের বলি হয়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত পাঞ্জাবি, সিন্ধি, গুর্জর, শিখ উদ্বাস্তুদের ভারত সরকার পর্যায়ক্রমে নাগরিকত্ব প্রদান করেছে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বাঙালি উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব না দিয়ে ট্রাইব্যুনাল আর ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। স্বাধীনতার পর ৭০ বছরে ভারতবর্ষে বহুবার সরকার বদল হলেও দেশভাগের বলি বাঙালি উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব প্রদানের পরিবর্তে বিদেশি বানানোর নীতি চলেই যাচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই আসামের বাঙালিদের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গের পাশের রাজ্য আসামে সম্প্রতি প্রকাশ করা হয় আসামের রাষ্ট্রীয় নাগরিক পঞ্জির খসড়া। এতে উঠে এসেছে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের নাম। যদিও আসামে নাগরিক পঞ্জির রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা সুপ্রিম কোর্টে আগেই জানিয়েছিলেন, দুই কোটি নাগরিকের আবেদনপত্রের যাচাই-বাছাই সম্পূর্ণ করা হয়েছে। ৩৮ লাখ মানুষের নথিপত্রে সামান্য ত্রুটি থাকার কারণে পুনঃপরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এই নথি পেশের পর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষের। ফলে এই খসড়া প্রকাশের পর তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে নওগাঁসহ বরাক উপত্যকার বাঙালিদের মধ্যে। দেখা যায়, বহু বাঙালির নাম ওঠেনি। বাদ পড়ে যাওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ তুলেছেন, বাঙালিদের আসাম থেকে বিতাড়নের পাঁয়তারা চলছে।