মাওয়ের পদাঙ্ক অনুসরণে সি

চীনা জাতিকে ঢেলে সাজানোর অঙ্গীকার সি চিন পিংয়ের
চীনা জাতিকে ঢেলে সাজানোর অঙ্গীকার সি চিন পিংয়ের

• চীনা জাতিকে ঢেলে সাজানোর অঙ্গীকার সি চিন পিংয়ের।
• গত অক্টোবরে দ্বিতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত।
• কয়েক দশকের মধ্যে চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাবান নেতা হিসেবে বিবেচিত।

চীনের সংবিধান পরিবর্তনের প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে যাঁর নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে, তিনি হলেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। দেশটির জনক মাও সে তুংয়ের সঙ্গে তাঁকে তুলনা করা হচ্ছে চীনে। সি চিনকে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাখতে দলের একটি প্রস্তাবের পর এই দুই নেতা আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন।

গত রোববার চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মাওয়ের উগ্র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে বেড়ে যাওয়া বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পাঁচ বছর মেয়াদে দুবারের বেশি একজন ব্যক্তি চীনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না উল্লেখ করে সংবিধানে যে নিয়ম রচিত হয়েছিল, তা বিলোপের প্রস্তাব করেছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। এই পদক্ষেপ ৬৪ বছর বয়সী সিকে আজীবন ক্ষমতায় রাখা ও চীনকে নিজের ভাবমূর্তিতে নতুনভাবে গড়ে তোলার এই কমিউনিস্ট রাজপুত্রের মুকুটে আরেকটি নতুন পালক যোগ করা।

গত অক্টোবরে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ বছরের জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত সি আপাতদৃষ্টিতে অবারিত ক্ষমতা অর্জন করেন, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মাওয়ের পর থেকে আর কখনো দেখা যায়নি। যদিও এই পর্যায়ে আসতে তাঁকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। বৈপ্লবিক নায়ক থেকে ভাইস প্রিমিয়ার পদ পাওয়া তাঁর বাবাকে অপসারণ করেছিলেন মাও। এই ঘটনার পর তাঁর পরিবারকে যেতে হয়েছিল কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে। সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর বড় নেতা হওয়ার পেছনে রয়েছে শক্ত হাতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দৃঢ় মতবাদ। আর এটাই তাঁকে সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। গৃহযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে মাওয়ের কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা গ্রহণের পর জন্মগ্রহণকারী সিই হচ্ছেন দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট ও সর্বোচ্চ পদধারী নেতা। ১৯৯৯ সালে ফুজিয়ান প্রদেশের শাসনকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। এরপর ২০০২ সালে চেচিয়াং ও ২০০৭ সালে সাংহাই প্রদেশে দলের প্রধান নির্বাচিত হন। একই বছর দলের পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিতে ঠাঁই পান তিনি। মাওয়ের বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক কর্মসূচি ও ১৯৬৬-৭৬ সাল পর্যন্ত সংস্কৃতিবিপ্লবের পর কমিউনিস্ট নেতারা ওই রকম বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কার্যকরী প্রেসিডেনশিয়াল ক্ষমতার পদ্ধতি প্রণয়নের অনুসন্ধান করেন। আর এটার দায়িত্ব পড়ে পলিটব্যুরো কমিটির ওপর। একক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়া ঠেকাতে এই পদক্ষেপ সাহায্য করলেও দুর্নীতি, সামাজিক অস্থিরতাসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সি। ক্ষমতা নেওয়ার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও চীনকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দেন। কয়েক দশকের মধ্যে তিনি চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাবান নেতা হিসেবে বিবেচিত। মাওয়ের পাশাপাশি তাঁর ছবিসংবলিত পণ্যের স্মারকে ভর্তি হতে থাকে দোকানপাট। দেশের রাজনৈতিক থেকে সামরিক সব প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে তাঁর নাম যুক্ত করা হয়। তিনি গণ্য হতে থাকেন ‘সবকিছুর চেয়ারম্যান’।

সির এই একক ক্ষমতার সমালোচনা করে চায়নিজ ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের রাজনীতির অধ্যাপক উইলি ল্যাম বলেন, ‘শত শত লাখ সিদ্ধান্তের একজন গ্রহীতা মাও সে তুংয়ের যুগে ফিরে যাচ্ছি আমরা।’

চীনা জাতিকে ঢেলে সাজানোর অঙ্গীকার সি চিন পিংয়ের

২০১২ সালে নেতৃত্ব গ্রহণ
যখন তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ
সম্পাদক নির্বাচিত হন

২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টহিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ

২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর পাঁচ বছরের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত

প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে সমঝোতায় সফল হওয়ার মাধ্যমে কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত

কয়েক দশকের মধ্যে চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাবান নেতা হিসেবে বিবেচিত। গণমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ ও মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোরতা অবলম্বন

ক্ষমতা গ্রহণের পর বহুল আলোচিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু, প্রশাসনের ওপর থেকে নিচ, উভয় স্তরে অভিযান চালানোর অঙ্গীকার

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮

একজন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদে দুবারের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না, সংবিধানের এমন ধারা বাতিল করার প্রস্তাব কমিউনিস্ট পার্টির

২০২৩ সালের পরও সি চিন পিংকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় রাখার পথ প্রশস্ত করা     

সূত্র: এএফপি